৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি রাখা যাবে না

৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি রাখা যাবে না

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ভ‚মি ব্যবস্থাপনা ও ভ‚মি মালিকানা নিয়ে জনগণের হয়রানি কমাতে বিদ্যমান ভ‚মি আইন সংস্কারসহ পৃথক দুটি নতুন বিল গতকাল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এরমধ্যে একক মালিকানায় সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষিজমি রাখার বিধান রেখে সংসদে উত্থাপিত হয়েছে ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২৩’ বিল। এছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করে ভ‚মি সম্পর্কিত বেশ কিছু অপরাধকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় এনে ‘ভ‚মি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ বিল আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ফসলি জমি ও নদী থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করে আনা হয়েছে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩’ বিল।
গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিল তিনটি উত্থাপন করেন ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বিলগুলো ভ‚মি মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদে আনীত ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২৩’ বিলে কৃষিজমির ব্যক্তি মালিকানার ক্ষেত্রে মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘা করা হয়েছে। তবে সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের ওই বিধান প্রযোজ্য হবে না। বিলে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তির অবসান ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে। ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩’ বিলে কোনো ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া নদীর নাব্য নষ্ট হতে পারে, এমন স্থান থেকেও বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের যন্ত্র জব্দ করাসহ বালু পরিবহনে রাস্তার কোনো ক্ষতি হলে ইজারাদার কর্তৃপক্ষকে রাস্তা মেরামত করে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ‘ভ‚মি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ বিলে ভ‚মিবিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভ‚মি সম্পর্কিত বেশ কিছু অপরাধকে চিহ্নিত করে তা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও কারাদÐ বা উভয় দÐের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া বিলে নিজ নিজ মালিকানাধীন ভ‚মির নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার বিল সংসদে, ভুয়া নিবন্ধনে সাত বছরের জেল-জরিমানার বিধান : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার জন্য ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩’ বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। বিলে পরিচয়পত্রের জন্য ভুল তথ্য, ইচ্ছাকৃত বিকৃতি ও নিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের অপরাধের জন্য আইনে সাত বছরের জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জাতীয় সংসদের গতকালের অধিবেশনে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করছিলেন। জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী পাঁচ কর্ম দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে বিলটি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলের বিধান অনুযায়ী, আগামীতে জন্মের পর থেকে সবার জন্য একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি পৃথক ‘নিবন্ধকের কার্যালয়’ স্থাপন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। বিলে এনআইডি-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদÐ ও ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় তথ্য-সংবলিত একটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্ট্রার থাকবেন। নিবন্ধক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং তার চাকরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হবে। নিবন্ধক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন করবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজনে নাগরিকরা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, নিবন্ধক কর্তৃক সংশোধন করতে পারবেন।
বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো নাগরিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান বা গোপন করলে বা একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করলে তিনি এক বছরের কারাদ ও অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদ বা উভয় দন্ডে দন্ডেত হবেন। তবে তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট-সংক্রান্ত অপরাধে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী জড়িত থাকলে তিনি সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদন্ডে বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা বহন করলেও একই শাস্তি পাবেন। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করলে তিনি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালনা ও এ-সংক্রান্ত সেবাটি জনগণের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ-সংক্রান্ত আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। তাই সব বয়সের নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে হালনাগাদ করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *