বিশেষ সংবাদদাতা: আমরা সবাই জানি, আল্লাহর বন্ধু হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.)-কে পূর্ণিমার চাঁদে আল্লাহ তায়ালা দেখিয়েছেন। এর কারণ হচ্ছে- বাবাজান আল্লাহর আকার নিয়ে কাজ করেছেন যা ইতিহাসে এক বিরল বিষয় এবং আল্লাহ তায়ালা পুরস্কারস্বরূপ তাঁকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখিয়েছেন, যাতে আমরা সেই মহামানবকে চিনতে পারি। এখন বিষয় হচ্ছে আমরা মোর্শেদ কেবলাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখলাম, শুকরানা নামাজ আদায় করলাম; শুকরিয়া করলাম; কান্নাকাটি-রোনাজারি করলাম! সব ঠিক আছে কিন্তু নিজেকে চরিত্রবান বানালাম না, এর ফল কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন? মোর্শেদ আল্লাহর আকার নিয়ে কাজ করেছেন, আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখিয়েছেন। আপনি কি সেই কাজ করেছেন, যেই কাজে আপনার-আমার মালিক সন্তুষ্ট হওয়ার কথা? যদি না করে থাকেন আল্লাহ মোর্শেদকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখিয়েছেন কিন্তু আপনার জন্যে জাহান্নামের আগুন মাফ হয় নি। তাই নিজেকে পরিবর্তন করা অনেক বেশি জরুরি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, মোর্শেদ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছে তাই পূর্ণিমার চাঁদে দেখিয়েছেন; আপনি সেই মোর্শেদের মুরিদ সন্তান আপনারওতো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আপনি সেটাই করেননি, সেটা করার চিন্তাও করেন না। কিভাবে মানুষের কাছে নিজেকে বড় বানাবেন; কিভাবে মানুষের সামনে বক্তব্য দিয়ে আপনি নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করবেন; কিভাবে জাকের-বেজাকেরদের কাছে নিজেকে সিনিয়র বানিয়ে আপনি নিজের গাম্ভীর্যতা প্রকাশ করবেন, আপনি এই কাজে লিপ্ত আছেন। আল্লাহর কসম আপনি চরিত্রবান হওয়ার কাজে নেই। এই গাম্ভীর্যতা এই ক্ষমতা, এই লোভের কারণে মোহাম্মদী ইসলাম বারবার ধ্বংস হয়েছে। আবারও এই মোহাম্মদী ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে আমরা যদি নিজেদের পরিবর্তন করতে না পারি। বাবা আদম (আ.) থেকে শুরু করে হযরত রাসুল (সা.) পর্যন্ত যত নবি-রাসুল এসেছেন তাঁরা কেউ নিজেদের কোনো মতপ্রকাশ করেন নি। তারা প্রকাশ করেছিলেন কিভাবে আমরা আল্লাহর আনুগত্য করতে পারি; কিভাবে রাসুলের আনুগত্য করতে পারি; কিভাবে আমরা চরিত্রবান হতে পারি এই বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছেন৷ হযরত রাসুল (সা.)-এর পরে যখন অলী-আল্লাহদের যুগ শুরু হয়েছে তখন থেকে অলী-আল্লাহগণও সেই একই শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে আমরা আল্লাহকে পেতে পারি; রাসুলকে পেতে পারি; কিভাবে আমরা চরিত্রবান হতে পারি; কিভাবে আনুগত্য করতে পারি; কিভাবে নিজের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারি?
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, যুগে যুগে মুনাফিক ছিল। আজও এই মুনাফিকেরা মোহাম্মদী ইসলামকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজ একজন আশেকে রাসুল ভাই মারা যায়, আমাদের বুক যখন আর্তনাদে ব্যস্ত আবার কিছু কিছু আশেকে রাসুল তাকে নিয়ে সমালোচনা করে। আমরা সেই পথে হাঁটবো না। আমরা আল্লাহকে পাওয়ার পথে হাঁটতে চাই; আমরা রাসুলকে পাওয়ার পথে হাঁটতে চাই; আমরা দুনিয়ায় বসে মৃত্যুর আগে মালিকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। এর নাম ধর্ম হতে হবে। সমালোচনা, মানুষকে মন্দ বলা; মানুষের নিন্দা করা, নিন্দায় ব্যস্ত থাকা; দুশ্চরিত্রের অধিকারী হওয়া; মানুষের সাথে অন্যায় করা, জুলুম করা; মানুষকে আঘাত করা ধর্মের নাম নয়, এটা অধর্মের কাজ। যদি আপনি আল্লাহকে পেতে চান নিজের ভিতরে আল্লাহকে বসান, নিজেকে আল্লাহর পথে ধাবিত করেন। আপনি যদি চান আল্লাহ আপনার বাসায় আসুক, মুরিদের বাসা হলো মুরিদের অন্তর। আপনি যদি চান তাহলে যে, আল্লাহ্ আপনার অন্তরে আসুক আপনি আপনার অন্তরের ময়লাগুলো কি দূর করবেন না? আপনার অন্তরের ঐ ময়লাগুলো যদি আপনি দূর না করেন এবং অন্তরে যদি দুর্গন্ধ থাকে, বলুন আল্লাহ্ কি আপনার কাছে আসবে? মোরাকাবা করে/সাধনা করে আল্লাহ্ তায়ালার জাত-পাক হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিল মোবারক হয়ে তরিকার বাদশার দিল মোবারক হয়ে আপন মোর্শেদের দিল মোবারক হয়ে যখন নিজের অন্তরে সেই ফায়েজ ওয়ারিদ হবে, ঐ ফায়েজ দ্বারা পাপকে দূর করতে হয়; পাপের গন্ধকে দূর করতে হয়; পাপের ময়লাকে পরিষ্কার করতে হয়। আপনি যখন সেই বিদ্যা শিক্ষা গ্রহণ করবেন না আর আপনি বললেন, আমি আমার ভিতরে আল্লাহকে পেতে চাই। আপনি কীভাবে আল্লাহকে পাবেন? সাবান ছাড়া যেমন ময়লা উঠে না, তেমনি ফায়েজ ছাড়া মুরিদের ক্বালব পরিষ্কার হয় না। ময়লা যদি পরিষ্কার করতে না পারেন তাহলে আপনার ভিতরে আল্লাহ কীভাবে আসবেন? আল্লাহ্ আসতে চাইবে কিন্তু গন্ধের কারণে বলবে, না তুমিতো আমাকে আনার জন্যে পরিবেশ তৈরি করে দাওনি, আমি কীভাবে তোমার কাছে আসি? আমিতো তোমাকে ভালোবাসি, আমিতো তোমার ভিতরে ঢুকতে চাই; আমিতো তোমার হতে চাই। কিন্তু তুমিতো আমাকে নিতে চাও না। যদি তুমি আমাকে নিতে চাইতে, তুমি কি তোমার ভিতরকে এরকম নোংরা রাখতে; এরকম গন্ধযুক্ত রাখতে! তাতো তুমি রাখতে না। আমাকে যদি নিতে চাইতে তুমি পবিত্র হতে; তুমি চরিত্রবান হতে; তুমি নিজের ভিতরের ময়লাগুলোকে পরিষ্কার করতে এবং নিজেকে পরিপাটি করতে। তাই আপনি যদি আল্লাহকে পেতে চান; আপনি যদি রাসুলকে পেতে চান, আপনি যদি নিজের ভিতরে আল্লাহকে বসাতে চান; রাসুলকে বসাতে চান; মোর্শেদকে বসাতে চান তাহলে বসানোর পরিবেশ তৈরি করুন আর ঐ বসানোর পরিবেশের জন্যে আপনাকে মোরাকাবা করতে হবে। ময়লা পরিষ্কার করতে সাবান পানি দিয়ে ধুতে হয়, মুরিদকে ফায়েজ দিয়ে নিজের অন্তরকে ধুতে হবে। যখন তিনি ফায়েজ দ্বারা নিজের অন্তরকে ধোবেন তখন তিনি পবিত্র এবং তখন আল্লাহ্ তার মাঝে বিরাজমান হবেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, পরিতাপের বিষয়, আজকাল এই বিদ্যার কথা কেউ শুনতে চায় না, শিখতেও চায় না। সবাই শুধু বলে শটকার্ট রাস্তা বলুন! হযরত রাসুল (সা.), যিনি নবুয়তের আগেই আল্লাহর বন্ধু। তিনি আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যে ১৫ বছর হেরা গুহায় মোরাকাবা করেছেন। আপনি-আমি ১৫ দিন মোরাকাবা করতে রাজি না। ১৫ বছর সাধনা করে আমাদের বলেছেন, দেখো আমি নবি মোহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা (সা.) আল্লাহকে পাওয়ার এই বিদ্যা তোমাদের শিক্ষা দিলাম, চোখ বন্ধ করে মালিককে পাওয়ার এই বিদ্যায় নিজেকে ধাবিত করো অথচ আমি ১৫ মিনিট মোরাকাবায় বসিনা। রাসুলের চেয়ে আপনি শর্ট কার্ট পেয়ে যেতে চান! আমি ঝাড় ফুঁক করি না, আমি কাউকে ফুঁ দিতে পারি না। এটা আল্লাহকে পাওয়ার বিদ্যা। শর্ট টাইম হবে, কিভাবে? আপনি ৫০ বছর পাপ করেছেন ১ বছর আল্লাহকে ডাকেন, দেখবেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন। ৫০ বছরের চেয়ে ১ বছর শর্টটাইম হয়নি; হয়েছে না হয়নি? এখন আপনি যদি মনে করে থাকেন ১ বছর না এটা আপনি ১ দিনে এনে দিন, এটা আসলে সম্ভব না। আপনার জন্যে আমার কাছে আসলে আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। তাই এই মোহাম্মদী ইসলামকে যদি আলোকিত করতে চান, আসলে মোহাম্মদী ইসলাম আলোকিত হয় না মুরিদকে নিজেকে আলোকিত করতে হয়। আপনি যদি মোহাম্মদী ইসলামকে অগ্রসর করতে চান তাহলে নিজেকে নিজে অগ্রসর করুন; নিজেকে চরিত্রবান বানান; নিজের মাঝে আল্লাহ ও রাসূলকে বসান তাহলে মোহাম্মদী ইসলাম আলোকিত হবে এবং নিজে আলোকিত হবেন।
পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।