সাধনার মাধ্যমে নিজের ভিতরে স্রষ্টাকে খুঁজে পেতে হবে -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

সাধনার মাধ্যমে নিজের ভিতরে স্রষ্টাকে খুঁজে পেতে হবে -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

বিশেষ প্রতিনিধি: মোহাম্মদী ইসলাম একটি চলমান প্রক্রিয়া হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়েছে। আল্লাহ্ আদি পিতা আদম (আ.) এবং তার সাথে মা হাওয়া (আ.)-কে পাঠান মানুষের বংশবিস্তারের উদ্দেশ্যে। তার থেকে বাড়তে বাড়তে আজ কয়েকশো কোটি মানুষ পৃথিবীতে বাস করে। তারা ভিন্ন ভিন্ন রঙের মানুষ। কেউ ফর্সা, কেউ শ্যামলা, কেউ কালো। কারো টানা চোখ, কারো বড় চোখ, কারো নাক লম্বা, কারো নাক খাটো। কেউ উঁচু, কেউ নিচু। এই শত-কোটি মানুষের শত-কোটি মন। সবাই মানুষ! কেউ ধনী, কেউ গরিব। সবার প্রথমে একটি পরিচয়, তারা সবাই মানুষ।

মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব, দেওয়ানবাগ শরীফের পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন।

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমি বাংলাদেশে এসেছি, আমার মোর্শেদ বাংলাদেশে এসেছে এবং তার মোর্শেদ বাংলাদেশে এসেছে। তাহলে কি আমেরিকা, কানাডা, সুইডেন, সাইপ্রাস, জাপান, ইন্ডিয়ার মানুষ যুগের ইমামকে চিনবে না? তার পরিচয় পাবে না? আসলে আমাদের এই একক চিন্তার কারণেই বারবার আমরা ধ্বংস হয়েছি। মুসা (আ.)-এর অনুসারীরা কখনোই মোহাম্মদ (স.)-কে মেনে নেয়নি। অথচ মুসা (আ.) যেই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছেন মোহাম্মদ (সা.)-ও ঐ একই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছেন এবং মুসা (আ.) থেকে কয়েক গুণ বেশি ক্ষমতা নিয়ে এই জগতের বুকে এসেছিলেন। কিন্তু তারা (মুসার অনুসারীরা) মোহাম্মদ (স.)-কে কখনোই মেনে নেননি। কারণ তারা বারবার চেয়েছেন ঐ একটি আইডলোজিকে ধরে রাখতে। যদি মনে করেন, আমি আমার যুগের শিরোভাগের ইমামকে মানবো কিন্তু পরের যুগের ইমামকে আমি মানবো না তাহলে মূলত আপনি আল্লাহর প্রেরিত মহামানবকেই মানলেন না। এইজন্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন, যত নবি-রাসূল আছেন, তোমাদের সবাইকে মানতে হবে; সকল আসমানী কিতাবগুলো তোমাদের মানতে হবে; সকল সহীফাগুলো তোমাদের মানতে হবে। কারণ তার স্বীকৃতি আল্লাহ্ দিয়েছেন যে, তুমি তো শুধু মোহাম্মদ (সা.) নও, তোমাকে সকল নবীদের ইমাম হিসেবে পাঠিয়েছি। সকল নবীদের ইমাম হিসেবে যদি নবী মোহাম্মদকে পাঠিয়ে থাকে আর আপনি যদি বলেন, অন্যরা কেউ নেই তাহলে ইমামতের মূল্য কোথায়?

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা প্রতি যুগের শিরোভাগে তার বন্ধুদের পাঠান যাতে তার বন্ধুরা আল্লাহ্ ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনে তৎকালীন যুগের মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখাতে পারেন। এখন আমি যদি আমার যুগের কথা বলি বা আমার মোর্শেদ কেবলাজানের যুগের কথা বলি, ওনার যুগে কি উনিই একমাত্র সূফী একমাত্র অলী-আল্লাহ্ ছিলেন আর কেউ ছিলেন না? যদি দেওয়ানবাগী একাই অলী-আল্লাহ্ থেকে থাকেন তাহলে উনি সূফীদের সম্রাট হলেন কিভাবে? তাহলে আর কোনো সূফী এই জগতে বেঁচে ছিল না, প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যেক ভাষায় সূফী আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
সূফী হলেন তিনি, যিনি সাধনা করে নিজের ভিতরে আল্লাহ্কে খুঁজে পেয়েছেন। আল্লাহর কাছ থেকে ইজাজত পেয়েছেন যে, তিনি অন্য মানুষকে আল্লাহ্কে পাওয়ার বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারবেন। তিনি হাদী শ্রেনীর অলি-আল্লাহ্ বা সূফী।

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আপনারা যদি আল্লাহ্কে পাওয়ার শিক্ষা নেন, নিজের মাঝে ঐ আলো দেখতে শুরু করেন আপনার মধ্যেও ঐ নূরে মোহাম্মদী আসবে। আপনার ভিতরেও ঐ নূরে মোহাম্মদী থাকবে কিন্তু সেটা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সাধনা করে আপনি ঐ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন না করতে পারেন। সাধনা করে যখন আপনি ভিতরে অন্ধকারের মধ্যে একটু আলো দেখবেন, যেটা আসে আর চলে যায়। এখন একে যত কাছে আনতে পারবেন এবং আপনার জীবনে যত দীর্ঘস্থায়ী করতে পারবেন আপনি ততবেশি আল্লাহ্ওয়ালা হবেন। একে কাছে আনার পদ্ধতি মোরাকাবা করা, আল্লাহর হুকুম-আহকাম মানা, ইবাদতে নিজেকে সম্পৃক্ত করা- নামাজ পড়া, রোজা পালন করা, যাকাত দেওয়া, নিজের রিপুগুলোকে (কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্য) দূর করা, নিজেকে চরিত্রবান বানানো। নূরে মোহাম্মদী যখন সিনায় আসবে এবং সিনায় যখন এই নূরে মোহাম্মদীর বিকিরণ হবে সারা বিশ্বের আশেকে রাসূল দেখতে পাবে। আপনারা কি দেখেছেন, বিশ্ব আশেকে রাসূল (সা.) সম্মেলনে কেমন বিচ্ছুরণ ঘটেছে? সেই আলোর বিকিরণ কেমন ঘটেছে?

প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমাদের মৌলিক কাজ হবে নিজেদের চরিত্রবান বানানো, আল্লাহর নূরকে নিজের মাঝে ধারণ করা; নিজেদের আলোকিত করা। আপনার নাম আশেকে রাসূল, কিভাবে বোঝা যায়? আপনার চরিত্রে বোঝা যায়, আপনার কথায় বোঝা যায়, আপনার প্রেমে বোঝা যায়, আপনার ইমানে বোঝা যায়, আপনার হকিকতে বোঝা যায়, আপনার মারেফাতে বোঝা যায়, আপনার শরিয়তে বোঝা যায়। আমার কর্ম আমার পরিচয়। আমার নাম আমার কবরে যাবে না, আমার বক্তব্য আমার দাঁড়ি আমার জুব্বা আমার কবরে যাবে না। যাবে আমার ইবাদত। রহমতের কাজ করে যদি কবরে রহমত নিতে পারেন তাহলে তো রহমতুল্লাহ নাম সার্থক। আর যদি নামেই শুধু রহমতুল্লাহ বলি কিন্তু কাজ জুলুম এবং অত্যাচার, এই রহমতুল্লাহর মূল্য কোথায়?

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আপনাদের আমি দিল ও জানছে ভালোবাসি, অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসি। আমার একজন ভাই, আমার একজন বোন অন্ধকার কবরে জ্বলুক, আমি তো তা চাই না; আমার একজন ভাই, আমার একজন বোন যুগের পরে যুগ কষ্ট করুক, আমি তো তা দেখতে চাই না; আমার একজন ভাই, আমার একজন বোন ২০ বছর তরিকা করেছে আজও নিজের ভিতরে অন্ধকার দেখুক, আমি তো তা চাই না। আমি আপনাকে আলোর মুখ দেখাতে চাই; আমি আপনাকে আল্লাহ্ ও রাসূলকে পাওয়াতে চাই; আমি আপনাকে চরিত্রবান বানাতে চাই, যতক্ষণ এই দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ আমি দাঁড়িয়ে থাকবো এবং আমার মোর্শেদ আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগীর এই আদর্শের কথা বলে যাবো। আমি বলে গেলাম এবং আমার দায়িত্ব পালন করলাম, আপনারা কি আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন না? আমি তো আপনাদের কাছে কিছু চাইনি; শুধু চেয়েছি আপনি আল্লাহ্কে পান, আপনি রাসূলকে পান এবং আপনি নিজেকে চরিত্রবান বানান। নামাজ পড়বেন, রোজা পালন করবেন, মোরাকাবা করবেন, ইবাদত করবেন, নিজেকে চরিত্রবান বানাবেন। এটাই তো বলেছি, আর তো কিছু বলিনি। আর তো কিছু চাইনি আপনার কাছে। আমি সার্থক সেইদিন, যেদিন আপনি পরিবর্তিত হবেন; আমি সার্থক সেদিন যেদিন আপনি আপনার মাঝে মালিকের সন্ধান খুঁজে পাবেন; আমি সার্থক সেদিন, যেদিন আপনার মৃত্যুর সময় আপনার মৃত্যু কষ্টদায়ক হবে না, আমি তো ঐ মালিকের কাছ থেকেই এসেছি আবার তার কদমে যাচ্ছি এবং দুনিয়ায় বসে আমি তার সন্তুষ্টি অর্জন করেছি, সেদিন আমি সার্থক হব। এর আগ পর্যন্ত আমার সার্থকতা নেই। কারণ আমার উদ্দেশ্য আপনাদের যেন আল্লাহ্ ও রাসূলকে পাওয়াতে পারি। আপনাদের কাছে আমার উদাত্ত আহ্বান, আমার এই কষ্টগুলো সার্থক হবে যদি আপনি আপনাকে পরিবর্তন করেন।

পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *