কৃষি খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ

কৃষি খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ

কৃষি ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কৃষি উৎপাদন ১৫-৩০ ভাগ কমে যেতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কৃষি খাতের এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে দেশের মোট অর্থনীতির ৯ দশমিক ৪ ভাগের সমান, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দিনব্যাপী এক আঞ্চলিক অধিবেশনে এসব তথ্য তুলে ধরে সাউথ এশিয়ান পলিসি লিডারশিপ ফর ইমপ্রুভ নিউট্রিশন অ্যান্ড গ্রোথ (স্যাপলিং)। সম্প্রতি রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই আয়োজন করে ব্র্যাক।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং খাদ্যব্যবস্থা ও পুষ্টির উন্নয়নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে স্যাপলিং। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরুর পর এটিই স্যাপলিংয়ের প্রথম অধিবেশন।
স্যাপলিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু মোকাবিলা সম্ভব না হলে কৃষি খাতে স্যাপলিংভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে নেপাল, যা দেশটির মোট অর্থনীতির প্রায় ১০ শতাংশ। তারপরই বেশি ক্ষতির শিকার হবে যথাক্রমে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে এসব দেশের কৃষি, বন ও মাছ পেশায় জড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠী। আর ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সাতজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি উচ্ছেদের শিকার হবে।

কেবল জলবায়ু পরিবর্তন নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ফসল উৎপাদনের পর খাদ্যশস্যে বড় ধরনের অপচয় হয়। স্যাপলিংয়ের তথ্য বলছে, উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত শস্যজাতীয় ফসলের ১০-১১ শতাংশ নষ্ট হয়। আর ফল ও সবজির প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়। সংরক্ষণ, পরিবহনের জন্য ফ্রিজিং ভ্যান ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা কারণে ফসল উৎপাদনের পর এই অপচয় হয়।
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে টেকসই খাদ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক সহযোগিতা গঠনে স্যাপলিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়। জলবায়ু পরিবর্তন দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। খাদ্য উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতাতেও ব্যাঘাত ঘটায়। এতে বৈষম্য তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। স্যাপলিংভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কৃষি অর্থনীতিবিদ আমাদু বা। তিনি বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে হবে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিও জরুরি।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, সার্ক কৃষি কেন্দ্র বাংলাদেশের পরিচালক মো. বখতিয়ার হোসেন, ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদারসহ পাঁচটি দেশের প্রতিনিধিরা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *