বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী

বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী

ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান

নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক, হেদায়েতের আলোকবর্তিকা, বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, ইমামুল হাদি, মানবতার মূর্তপ্রতীক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে ১৪ই ডিসেম্বর, বুধবার ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

এ মহামানবের জন্ম মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। তাঁর প্রচেষ্টায় রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম ও সুফি দর্শন বর্তমান বিশ্বে শান্তির দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি যখন ইসলামের প্রাণ সুফিবাদের দৈনগ্রস্ত, বিশ্ব মানবতা যখন ভুলণ্ঠিত, এমনকি জাহেলিয়াত যুগের চেয়েও জাতি যখন চরম অধঃপতনে নিপতিত ঠিক তখনই মহান আল্লাহ্ মানবজাতির মুক্তির দিশারি ও শান্তির দূত হিসেবে এ বাংলায় প্রেরণ করেছেন সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানকে। এ মহামানব রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা দর্শন, মানবতাবাদী দর্শন ও সর্বোত্তম আদর্শ জগদ্বাসীর নিকট উন্মোচন করেছেন, যা অনুসরণ করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আদর্শ চরিত্র অর্জন করে রাসুলের আশেকে পরিণত হয়েছেন এবং মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভের পরম সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

নাম ও বংশ পরিচয়
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের পিতার নাম আলহাজ হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.) এবং মাতার নাম হযরত সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রহ.)। তাঁর পিতামহের নাম আলহাজ হযরত সৈয়দ আব্দুর রফিক সরকার (রহ.)।

বংশ তালিকা গবেষণা করে জানা যায় যে, সূফী সম্রাটের পূর্ব পুরুষগণ আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু-এর সম্মানিত বংশধর ছিলেন। যাঁরা ইসলাম প্রচারের জন্য সুদূর মদীনা থেকে কাতার এবং পরবর্তীতে কাতার থেকে বাংলাদেশে আগমন করেন। পৃথিবীতে যত নবি, রাসুল ও আওলিয়ায়ে কেরাম এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই রুহানিয়াতের দিক থেকে যেমন রয়েছেন হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে সম্পৃক্ত, তেমনি জাহেরি বংশগত দিক থেকেও রয়েছে তাঁদের সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। হেদায়েতের এমনি চিরন্তন বিধান এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি হলেন সৈয়দ বংশীয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের সপ্তম দিবসে তাঁর আকিকা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাঁর পিতা হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.) এই উপলক্ষ্যে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের দাওয়াত করেন। আকিকার অনুষ্ঠানে তদানীন্তন প্রখ্যাত আলেম ফখরে বাংলা মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় শিশুটিকে দেখে তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘মাহবুব-এ-খোদা’, অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয়। তাঁর এ নাম শুনে আকিকার অনুষ্ঠানে সমাগত সব মেহমান আনন্দিত হয়ে বলেছিলেন- সত্যিই তাঁর নাম যথার্থ হয়েছে। আল্লাহর প্রিয় না হলে এত সুন্দর চেহারা দিয়ে তিনি তাঁকে বানাতেন না।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান একজন সুন্দর আদর্শ ও অনুপম মহত্তম চরিত্রের আদলে প্রতিষ্ঠিত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক মানব দরদি মহামানব। তিনি ছিলেন সুফিদের সম্রাট, বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনি একজন অসাধারণ বাগ্মী এবং তাঁর ভাষণে সহজেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেত অগণিত শ্রোতার দল।

হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধর
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর কলিজার টুকরা হৃদয়ের ধন খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.) ও শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু-এর পুত্র সাইয়্যেদেনা ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বংশধর। তাঁর বংশ তালিকার ক্রমানুসারে দেখা যায়- (১) হযরত মোহাম্মদ (সা.), (২) খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.), (৩) সাইয়্যেদেনা ইমাম হোসাইন (রা.), (৪) ইমাম জয়নুল আবেদিন (রহ.), (৫) ইমাম বাকের (রহ.), (৬) ইমাম জাফর সাদেক (রহ.)। ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধারা বজায় রেখে নবি পরিবারের মান-মর্যাদা অটুট রেখেছেন এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকেও অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান আদর্শ প্রচারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে তাঁর তিন পুত্র হযরত সৈয়দ আবু খালেদ বিন জাফর সাদেক (রহ.), হযরত সৈয়দ ইব্রাহিম বিন জাফর সাদেক (রহ.) ও হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ বিন জাফর সাদেক (রহ.)-কে যথাক্রমে তুরুস্কে, বসরায় ও মদীনায় প্রেরণ করেন। কিন্তু মোহাম্মদী ইসলামের অগ্রযাত্রাকে দমন করার জন্য খলিফা আল মুনসুর মদীনায় হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ বিন জাফর সাদেক (রহ.)-কে এবং বসরার হযরত সৈয়দ ইব্রাহিম বিন জাফর সাদেক (রহ.)-কে তাঁর সশস্ত্র বাহিনীর নৃশংস হামলায় শহিদ করেন

উল্লেখ্য যে, ইমাম জাফর সাদেক (রহ.)-এর ছেলে হযরত মুহাম্মদ বিন জাফর সাদেক (রহ.)-এর বংশে যেমন সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের জন্ম, তেমনি তাঁর সহধর্মিণী কুতুবুল আকতাব, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.) ইমাম জাফর সাদেকের ছেলে আবু খালিদ (রহ.)-এর বংশধর। অতএব ইমাম জাফর সাদেকের দুই ছেলের বংশ, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের সাথে সৈয়দা হামিদা বেগমের শুভ-পরিণয়ের মাধ্যমে যথাক্রমে তাঁদের ২৩তম ও ২৪তম প্রজন্মের একত্রে মিলন ঘটেছে।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান এমনই একজন মহান দার্শনিক, সংস্কারক, যুগের ইমাম এই বাংলায় আগমন করেছেন, তাঁর উপমা তিনি নিজেই। এই মহাসম্পদ বাঙালি জাতির জন্য মহাগৌরবের। যাঁর কারণেই পৃথিবীর নানা দেশ থেকে মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে এসে সুফিবাদের শিক্ষা লাভ করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করেছে। এই মহামানব পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে মহান আল্লাহ্ তাঁর শুভ জন্মের পূর্বাভাস দিয়ে বহু অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত করেছেন। তাঁর পিতা আলহাজ হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.) ছিলেন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। ফলে ব্যবসায়িক কাজে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করতেন। সেসময় বহু সুফি সাধকদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। তাঁরা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের পিতাকে প্রায়শই বলতেন, “সরকার সাহেব! আপনি হলেন একজন সৌভাগ্যবান পিতা। আপনার ঔরসে এমন একজন সন্তানের জন্ম হবে, যাঁর মাধ্যমে পাপের আঁধারে নিমজ্জিত এই মানবজাতি হেদায়েতের আলোর পথের সন্ধান লাভ করবে।”

এছাড়া সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান যখন মাতৃগর্ভে, তখন তাঁর মহীয়সী মাতা হযরত সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রহ.) বিভিন্ন স্বপ্ন ও ঘটনার মাধ্যমে বুঝতে পারেন যে, তাঁর গর্ভের শিশু সন্তানটি মানবজাতির জন্য বরকতময় হিসেবে এই ধুলির ধরায় আসবেন। একদা তিনি শেষ রাতে রহমতের সময় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য অজু করতে যখন ঘর থেকে বাহিরে পা বাড়ালেন, তখন তিনি লক্ষ্য করলেন আকাশে নতুন একটি তারার উদয় হয়েছে। সেই তারাটিকে কেন্দ্র করে সমগ্র আকাশজুড়ে অসংখ্য তারার মেলা বসেছে। নতুন তারাটি ভূপৃষ্ঠের এতো কাছাকাছি মনে হচ্ছিল যে, তারাটি যেন কিছু বলার জন্য এগিয়ে এসেছে এবং অন্যান্য সকল তারা স্বীয় আলোকরশ্মি দিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সম্মানিত মাতাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। এই দৃশ্যটি অবলোকন করে হযরত জোবেদা খাতুন (রহ.) বুঝতে পারলেন যে, তাঁর গর্ভের শিশু সন্তানটি জগদ্বাসীর জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে আগমন করবেন।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের পূর্ব রাতে তাঁর শ্রদ্ধেয় মাতা স্বপ্নে দেখেন, “আকাশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়েছে। গ্রামবাসী সকলে ঘর থেকে বের হয়ে মহানন্দে ঈদের চাঁদ দেখছেন। ঐ চাঁদ দেখার জন্য তিনিও ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। যখনই তিনি অপলক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালেন, সাথে সাথে আকাশের চাঁদটি তাঁর কোলে নেমে আসে। তিনি ঈদের চাঁদ কোলে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।” এরপর তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর পরম কাক্সিক্ষত সৌভাগ্যবান সন্তানটির জগতের বুকে আসার সময় হয়ে গেছে। সেদিনই সকাল ১০টায় মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান আপন পিত্রালয়ে জগতের বুকে তশরিফ আনেন। সেদিন ছিল বুধবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ; ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ।

একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শ্রদ্ধেয় মাতা হযরত সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রহ.) সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের পূর্বে তাঁর মাতার গর্ভকালীন মোবারক স্বপ্ন ঈদের চাঁদ দেখতে গিয়ে চাঁদটি আকাশ থেকে সরাসরি তাঁর কোলে নেমে আসে। পরবর্তীতে ঐ ঈদের চাঁদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ৫৯ বছরের পূর্ণ বয়সের ২০০৮ সালের অক্টোবরের ১০ তারিখ শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে জ্যোতির্ময় চেহারায় চাঁদের মাঝে তাঁর আত্মপ্রকাশ হয়েছিল।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ছিলেন বেলায়েতের যুগে শ্রেষ্ঠ সংস্কারক ও ইমাম। তাঁর জীবন দর্শন সম্পর্কে বিশ্বের মনীষীগণ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাছাড়া তাঁর লিখিত ধর্মীয় কিতাবসমূহ বিশেষ করে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ জাতির এক অনন্য আধ্যাত্মিক ভাণ্ডার হিসেবে বিশ্বে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর লিখিত বিভিন্ন অমূল্য গ্রন্থসমূহে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিশ্বের বহু সংখ্যক মনীষী ও পণ্ডিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তা উপস্থাপন করা হলো-

সূফী সম্রাটের প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ওসমান গণী সাহেবের শ্রদ্ধাঞ্জলি-
হে সূফী সম্রাট!
হে মহান, হে মহৎ, তব পরিচিতি
এ জগতে মানুষের পূর্ণ পরিণতি
আল্লাহর ‘মাহবুব’ তুমি তোমার জীবন
মানব সমাজে যেন সূর্যের কিরণ।

ওআইসি-এর সম্মেলনে সূফী সম্রাটের ধর্মীয় সংস্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ
ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সদস্যভুক্ত মুসলিম বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের ভূয়সী প্রশংসা করে তারা সারা বিশ্বে ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান একই তারিখে পালনের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

১৯৯৫ সালের ২১শে অক্টোবর হতে ৮ই নভেম্বর পর্যন্ত ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর আংকারা ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ও সামাজিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ª (Statistical Economic And Social Research & Training Centre)-এর উদ্যোগে ১৫তম বিনিয়োগ বিশ্লেষণ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা (15th Seminar on Investment Analysis And Economic Management) শীর্ষক এ সেমিনার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। পাঞ্জাবের গভর্নর জেনারেল এস খান সেমিনারের উদ্বোধনী ভাষণে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির উপর গুরুত্বারোপ করে সমস্ত মত পার্থক্য ভুলে গিয়ে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার আহ্বান জানান। এ সেমিনারে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ফিরোজ আই ফারুকীসহ চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল যোগদান করেন। এছাড়াও পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সুদান, তুরস্ক, তাজাকিস্তান, আজারবাইজান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, মিশর, আবুধাবি, বাহরাইন, ওমান, কাতার তানজানিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, আফগানিস্তানসহ ৫০টি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ সেমিনারে যোগদান করেন।

অর্থনীতিবিদ ড. ফারুকী বলেন, আমরা মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে এখানে সমবেত হয়েছি। আমাদের এ সমঝোতা ও ঐক্যমতের মূল ভিত্তি হলো মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। ইসলামি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজেদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধর্মীয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দ্বিধা বিভক্ত। যেমন বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠান চান্দ্র মাস অনুসারে পালন করা হয়। কিন্তু তারিখ গণনার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি না থাকায় এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে একই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদ্যাপিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঈদ পালনে সৌদি আরবের সাথে আমাদের প্রায় সব দেশেরই দুই একদিনের পার্থক্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এরূপ বিশৃঙ্খলার মধ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আমাদের কী ক্ষতি হচ্ছে তা-ও চিন্তা করে দেখার প্রয়োজন মনে করি না। আমরা মনে করি অন্যান্য দেশ হতে সৌদি আরবে দুই/এক দিন আগে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। অথচ আমরা একবারও ভাবি না যে, সারা পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটি। এই একটি চাঁদ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন দেশে দেখার অজুহাতে বিজ্ঞানের এ চরম উন্নতির যুগেও আমরা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকি। তাছাড়া আজ যদি রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত মোহাম্মদ (সা.) জীবিত থাকতেন, তবে তিনি কবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেছেন, এ সংবাদ রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে পাওয়ার পরেও কি আমরা দু’ একদিন অপেক্ষা করে ঐ অনুষ্ঠান বিলম্বে পালন করতাম? নিশ্চয়ই না। তাহলে এখন কেন এক/দুই দিনের ব্যবধানে ধর্মানুষ্ঠান পালন করছি? মুসলমান বিশ্বব্যাপী জুমার নামাজ একই দিনে অর্থাৎ- শুক্রবারে আদায় করে থাকেন। কোথাও একদিন আগে কিংবা একদিন পরে জুমার নামাজ আদায় করা কি কেউ মেনে নিবেন? অনুরূপভাবে বিভিন্ন দিনে একই ধর্মানুষ্ঠান পালন করাও যুক্তিসঙ্গত নয়। তাছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধান হলো সাড়ে এগার ঘন্টা। এজন্য তো আর চব্বিশ ঘন্টার একটি দিনের পার্থক্য হতে পারে না। আমাদের এহেন দূরবস্থার ফলে আজ পৃথিবীর অন্যান্য জাতির কাছে মুসলিম জাতি হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। কারণ খ্রিষ্টানরা সারা বিশ্বে একই দিনে তাদের নবি হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন বড়োদিন পালন করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সারা বিশ্বে একই দিনে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী পালন করে, বৌদ্ধরা সারা বিশ্বে একই দিনে গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন বুদ্ধপূর্ণিমা পালন করে। এমনিভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিজ নিজ ধর্মের প্রবর্তকদের জন্মদিন একই সাথে উদ্যাপন করে থাকে। অথচ একমাত্র মুসলমানরাই চাঁদ গণনার বিভ্রান্তির কারণে বিভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদ্যাপন করে থাকে।

ড. ফারুকীর এ বক্তব্য উপস্থিত সবার মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তার এ আশু সমস্যার সমাধানের পদ্ধতি জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, ইসলাম একটি বিজ্ঞানময় যুগোপযোগী ধর্ম। হযরত মোহাম্মদ (সা.) অন্য সব বিষয়ের মতো চাঁদ গণনার পদ্ধতি ও রীতি বর্ণনা করে গেছেন। তাঁর দেওয়া চাঁদ গণনার পদ্ধতি অনুসারে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মু’মিনিন হযরত ওমর ফারুক (রা.) সর্বপ্রথম মুসলিম বিশ্বে ইসলামি পঞ্জিকার প্রবর্তন করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা সে পঞ্জিকার অনুসরণ ছেড়ে দিয়েছি। ফলে চান্দ্র গণনার ক্ষেত্রে আমরা নানারকম বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এ যুগের মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান হযরত ওমর (রা.)-এর পঞ্জিকা অনুসরণের অষ্টবর্ষ চক্র চান্দ্র পঞ্জিকার উদ্ভাবন করেছেন। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব যদি এ পঞ্জিকার অনুসরণ করে তবে আমাদের চান্দ্র বর্ষ গণনার বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। এ কথা বলে তিনি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অষ্টবর্ষ চক্র চান্দ্র পঞ্জিকার গণনা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এর বর্ণনা শুনে সবাই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। ড. ফারুকী মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারস্পারিক ঐক্য, সংহতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আবেদন জানান।

দীর্ঘ ১৯ দিনব্যাপী এ সেমিনারে বিশেষজ্ঞগণ মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেমিনারের সমাপনী দিবস ছিল সবচেয়ে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয়। মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিবৃন্দ ছাড়াও সেদিন স্বাগতিক দেশ পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খাজা আমজাদ সাঈদ, প্রফেসর ড. ভিকার আহমেদসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সমাগমে বিদায়ী অনুষ্ঠানটি অত্যাধিক প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। সেদিনের বিদায়ী অনুষ্ঠানে বিশ্ব মুসলিম প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. ফিরোজ আই ফারুকীকে বিদায়ী ভাষণ দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। ড. ফারুকী বিদায়ী ভাষণে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আলোকপাত করে বলেন, আমরা ইসলামকে যদি মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরতে পারি তবে আমাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান সহজেই করা সম্ভব। তিনি সূফী সম্রাটের সংস্কার অনুসরণ করে সারা বিশ্বে একই তারিখে ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিপালনের আহ্বান জানালে সবাই এতে আগ্রহী হন। এছাড়া তিনি সূফী সম্রাটের বিভিন্ন সংস্কারবলি যেমন ইসলামি রীতিতে দলিল লিখন পদ্ধতি প্রবর্তন, বাংলাদেশে শুক্রবারে সরকারিভাবে সাপ্তাহিক ছুটির বিধান, মাতৃভাষায় জুমার খুৎবার প্রচলন প্রভৃতি আলোচনা করেন। সূফী সম্রাটের সংস্কারবলির কথা শুনে উপস্থিত সবাই খুবই প্রশংসা করেন এবং এগুলো সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য অনুসরণ ও অনুকরণীয় বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠান শেষে সবাই ড. ফারুকীর জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য ও সূফী সম্রাটের পরিচয় তুলে ধরে ধর্মীয় বিষয়ে কয়েকটি নতুন ধারণা দেওয়ার জন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এ মহামানব সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী
সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী বলেন- সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান- আল্লাহ্ কোন পথে?’ নামক এলমে তাসাউফের যে অমর গ্রন্থখানি সূফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে- তা বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাচেতনার ফসল। এ গ্রন্থে উল্লিখিত বিষয়গুলো অধ্যয়ন করলে মানুষ শুধু উপকৃতই হবে না, বরং আমাদের সমাজের অনেক ভুল ধারণারও অবসান ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।

সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.কে. এম. নুরুল ইসলাম
সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.কে. এম. নুরুল ইসলাম বলেন- আমার প্রিয় মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান- আল্লাহ্ কোন পথে?’ নামক একটি মহামূল্যবান পুস্তক রচনা করে মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন। এ অমর অবদান এলমে তাসাউফ সম্বন্ধে নতুন দিগন্ত রচনা করে দিকদর্শনের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী কলিম উদ্দিন শামস্
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী আলহাজ কলিম উদ্দিন শামস্ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের লিখিত অমূল্য গ্রন্থ ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান- আল্লাহ্ কোন পথে?’ বইতে ইংরেজিতে তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন- ”It gives me immense pleasure to go through this time-winning book ”Sufi Samrater Juganntakari Abadan: Allah Kon Pathe” published by Sufi Foundation Bangladesh, under the guidance of Sufi Samrat Hazrat Mahbub-e-Khoda Dewanbagi  a great Wali of our time.”

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন
সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন বলেন, সত্যিকার অর্থে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সাথে যে কোনো মতবিরোধ নেই, সূফী সম্রাট তাই ব্যক্ত করছেন। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে, বিজ্ঞানের বাইরে যে অনন্ত জ্ঞান অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পরিমণ্ডল রয়েছে, তিনি তা ব্যাখ্যা করেছেন। সমগ্র মানবজাতির জন্য ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা- সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান মানুষকে তা বুঝাতে চেষ্টা করেছেন।

প্রখ্যাত দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ
প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক জনাব দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বলেন- সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের লিখিত কিতাব ‘আল্লাহ্ কোন পথে?’ মানবতার দর্শন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মানবাত্মা এ মাটির মধ্যেই মিশে রয়েছিল তার পরে তা থেকে বিবর্তনের নানা স্তর ভেঙ্গে তার গমন হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহর আদর্শের পানে। মানবাত্মাকে কোনো কোনো সূফী দরবেশ আল্লাহরই এক অংশ বলে ধারণা করেছেন। আমাদের দেশের মরমি সাধক, ফকিরেরা তাকে নানাভাবে ধারণা করেছেন। লালন শাহ্ আল্লাহকে দেহের বহির্ভূত এক সত্তারূপে ধারণা করেছেন। হাসন রাজা তাঁকে সমগ্র সত্তারই এক চরমরূপ বলে স্বীকার করে বলেছেন, এ দুনিয়াতে যে মানুষ রয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই আদি সত্তারই একটি অংশ।

প্রকৃত অর্থে আল্লাহ্ থেকেই সব কিছুর উৎপত্তি এবং আল্লাহর মধ্যেই সব কিছুই বিলীন হবে। স্থান, কাল, পাত্র সবকিছুই আল্লাহ্ থেকে উদ্ভূত এবং কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ হাজির নাজির থাকবেন। এ দুনিয়া তো বটেই বেহেশত, দোজখ এবং সবকিছুই আল্লাহর অস্তিত্ব থেকে উৎপত্তি। শেষ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই থাকবেন এবং তাঁর অস্তিত্ব ব্যতিরেকে এ বিশ্ব চরাচরে আর কিছুই থাকবে না।

আমাদের এক্ষেত্রে মানব জীবনের মধ্যে দুটো ভাগ স্বীকার করতে হবে। একটা পরিচালিত হয় শরিয়তের দ্বারা এবং অপরটা মারেফত দ্বারা। শরিয়তের কাজ হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা মত এ দুনিয়াতে তাঁর রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ্ হযরত রাসুল-ই-আকরাম (সা.)-কে পাঠিয়েছেন শিক্ষকরূপে, কোরআন-উল-কারিমকে পাঠিয়েছেন নির্দেশিকারূপে এবং তারই মধ্যে মানুষকে মর্দে মুমিন বা ইনসান-ই-কামিল তৈরি করার সব কিছুই রয়েছে। এভাবে ইনসান-ই-কামিল তৈরি হলেই এ দুনিয়ায় আল্লাহর রাজত্ব তৈরি হবে। তবে মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে হলে তার মধ্যকার সত্যিকার মানুষ স্বয়ং আল্লাহকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করে তুলতে হবে। তার ফলেই এ দুনিয়ার মানুষ হবে স্বয়ং আল্লাহর এক ক্ষুদ্র সংস্করণ এবং তার দ্বারাই তার সৃষ্ট এ দুনিয়ার সব কিছুতেই সে আল্লাহর অস্তিত্বের সন্ধান পাবে।

বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা
বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা বলেন- হিংসায় উন্মত্ত আজকের বিপন্ন বিশ্বে মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শািন্ত ও স্বস্তির, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অস্বাভাবিক সাফল্য ও বৈষয়িক প্রাচুর্য দিতে সক্ষম নয়। একমাত্র ধর্ম-দর্শনের সম্যক উপলব্ধি ও উদার নৈতিক চিন্তা-চেতনার প্রচার প্রসারই এই সুকঠিন কাজটি সম্পন্ন করতে সমর্থ। সুফিবাদের বিশ্বজনীন উদার মানবতাবোধ আশাহত মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বিশ্বের সকল বস্তুতে শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় যে অখণ্ড ঐকতান ও অচ্ছেদ্য বন্ধনের সুর লহরীর কথা বিধৃত হয়েছে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর জীবন্ত দর্শনে তাই প্রতিভাত। মানব কল্যাণে সুফিবাদ আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস।

সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী
সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী বলেন- বর্তমান জামানার মানুষকে হেদায়েত করার দায়িত্ব নিয়ে যিনি এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন, তিনি হলেন মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর। তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ আত্মশুদ্ধি লাভ করছেন। এছাড়া তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ প্রচার করে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে মানুষের হৃদয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম সৃষ্টি হচ্ছে এবং মানুষ নানাবিধ পাপাচার পরিত্যাগ করে আশেকে রাসুলে পরিণত হচ্ছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা এলমে তাসাউফের শিক্ষাদানের পাশাপাশি ধর্মের সংস্কারও করে যাচ্ছেন। তাঁর সংস্কারগুলো কোরআন ভিত্তিক ও বিজ্ঞান সম্মত। ইসলামের অগ্রযাত্রায় তাঁর ধর্মীয় সংস্কারমূলক কার্যক্রম বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

পৃথিবীতে যত মহামানব আগমন করেছেন প্রত্যেক মহামানবের জীবনেই অলৌকিক ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলার গৌরবদীপ্ত জীবনে বহু অলৌকিক কারামত রয়েছে। বিশেষ করে চন্দ্রপৃষ্ঠে তাঁর চেহারার প্রতিবিম্ব প্রকাশ পাচ্ছে, যা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এ অলৌকিক ঘটনা প্রমাণ করে যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানব তথা অলী-আল্লাহ্।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর প্রথম মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর প্রথম মহাপরিচালক এবং সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান বলেন, আমি জ্ঞানগরিমায় ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোটোবেলা থেকে তালবুল ইলম-এ প্রত্যাশী জ্ঞান অন্বেষণে নিরত ছিলাম। মহান আল্লাহ্ আমাকে দয়া করে দীর্ঘায়ু দান করেছেন এবং আমি শিক্ষা-দীক্ষার চত্বরে প্রত্যাশিত কর্মজীবন শেষ করে অবসর গ্রহণের পরবর্তীতে হুজুর কেবলাজানের সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য অর্জন করি। আল্লাহর এই মহান বন্ধু, আওলিয়া শিরোমণি মাদারজাত ওলীর বরকতময় শাহাদাত অঙ্গুলির মৃদু ছোয়ায় সূচনাতেই ক্বালবি জ্বিকির প্রাপ্ত হয়ে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। হযরত আবু বকর সিদ্দিকের তাসাউফ পন্থী বংশ ধারার একজন নগণ্য সন্তান হিসেবে এটাই আমার জীবনের একমাত্র কাম্য ছিল। আমার বাবা হযরত বড়ো পির আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর ভক্ত ছিলেন এবং কাদেরিয়া তরিকার একজন সাধক পুরুষ ছিলেন, তাঁর মুখে অহরহ ক্বালবী জ্বিকিরের কথা শুনেছি। আমি এ অমূল্য সম্পদের খোঁজে দুনিয়ার আনাচে কানাচে ভ্রমণ করেছি। দুই দুইবার ভূপ্রদক্ষিণ করেছি। কিন্তু কোথাও ক্বালবী জ্বিকির আত্মস্থ করার সুযোগ হয়নি। হঠাৎ করে আমার জীবন ইঙ্গিত বাসনা পূর্ণ হলো এবং এ মহাসম্পদ আত্মস্থ করার জন্যে দেওয়ানবাগ শরীফে হুজুর কেবলার সান্নিধ্যে দীর্ঘ সময় অবস্থান করলাম।

ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী প্রফেসর ড. প্রতাপ চন্দ্র চন্দ
ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষামস্ত্রী ও কলকাতা ল’ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. প্রতাপ চন্দ্র চন্দ বলেন, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুরের প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী আজ বিশ্বের শতাধিক দেশে বিদ্যমান রয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের আদর্শ প্রচার করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সূফী সম্রাটের বহুসংখ্যক ভক্ত রয়েছেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী জনাব সুলতান আহম্মদ
ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতি জনাব সুলতান আহম্মদ বলেন, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের সুফিবাদের শিক্ষা শুধু বাংলাদেশেই নয়, আজ ভারতবর্ষেও প্রচারিত হচ্ছে। পরবর্তীতে পর্যটন মন্ত্রী জনাব সুলতান আহম্মদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের পরিচয় পেয়ে তিনি বাংলাদেশে এসে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. অমলেন্দু দে
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. অমলেন্দু দে বলেন, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর বর্তমান যুগে আলোর দিশারি হয়ে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর সুফি আদর্শ অনুসরণ করে মানুষ মহান প্রভুর সাথে যোগাযোগের শিক্ষা সুফিবাদের জ্ঞান অর্জন করছে। আজ তাঁর মহান শিক্ষা শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে প্রচারিত হচ্ছে।

বিজ্ঞজনদের উল্লিখিত অভিমত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান কৃর্তক প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলামের দর্শন মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা। আর এজন্যই আজ সারাবিশ্বে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের ঐক্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির দর্শন প্রচারিত হচ্ছে। তাঁর বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্ম প্রতিষ্ঠান- দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে এই ঐশী দর্শন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষও যুক্ত হয়েছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে সূফী সম্রাট তাঁর প্রেম দর্শন তথা এলমে তাসাউফের মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর ঐশী দর্শন বিশ্বের শতাধিক দেশে প্রচারিত হচ্ছে। আজকে বিশ্বের অনেক দেশে ধর্মে ধর্মে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বাড়ছে। কিন্তু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের ঐশী দর্শনে তা নেই। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আজ ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এই দর্শনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

দয়াল বাবাজান মোহাম্মদী ইসলামকে বিশ্বব্যাপী প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে ঘরে ঘরে আশেকে রাসুল সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তায়ালার মহান ধর্ম জগতের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ একদিকে যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের নৈতিক চরিত্রের অবনতি হচ্ছে। এই মহামানবের ওফাত পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ প্রচার করে যাচ্ছেন। আজ এই মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লক্ষ লক্ষ লোক আশেকে রাসুলে পরিণত হচ্ছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম তাঁরই প্রাণপ্রিয় মেজো সাহেবজাদা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বময় প্রতিটি আশেকে রাসুলের কাছে প্রেমের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। একজন আশেকে রাসুল হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শে নিজেকে কীভাবে গড়ে তুলতে পারবেন, সেই শিক্ষা দিচ্ছেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *