রোজা: একটি পর্যালোচনা – ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান

রোজা: একটি পর্যালোচনা – ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান

ভূমিকা: রোজা ফারসি শব্দ। এর আরবি শব্দ ‘সাওম’। বহুবচনে সিয়াম। যার অর্থ বিরত থাকা। বাংলা ও সংস্কৃত শব্দে রোজাকে উপবাস বলে। এ মাসকে রমজান বলা হয়েছে। ‘রমজান’ শব্দটি আরবি ‘রমজ’ ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ কোনো বস্তুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সোজা ও ঠিক করা। মোহাম্মদী ইসলামের পরিভাষায় মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে যাবতীয় পানাহার, কামাচার থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলা হয়।


রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর ও নারীর জন্য ফরজ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন “হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা মোত্তাকি হতে পারো।” (সূরা বাকারাহ ২: আয়াত ১৮৩) রোজা কেবল উম্মতে মোহাম্মদীর উপরই ফরজ করা হয়নি। বরং পূর্ববর্তী নবি ও রাসুলগণের যুগেও রোজা ফরজ ছিল। অতএব, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের উপরও মহান আল্লাহ্ রোজা ফরজ করেছিলেন। হযরত রাসুল (সা.) বলেনÑ “আমাদের রোজা ও আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো ‘সাহ্রি’ খাওয়া।” (আবু দাউদ শরীফ ১ম খন্ড, পৃ. ৩২০)

বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে রোজা
ইনজিল কিতাবে রোজাকে ‘ত্বাব’ বলা হয়েছে; যার অর্থ পবিত্র হওয়া, নির্মল হওয়া, কলুষমুক্ত হওয়া। জাবুর কিতাবে রোজাকে ‘কোরবত’ বলা হয়েছে; যার অর্থ পাপ ধ্বংস করা। তাওরাত কিতাবে রোজাকে ‘হাত্ব’ বলা হয়েছে; যার অর্থ পাপ ধ্বংস করা। সনাতন ধর্মে উপবাস শব্দটির মধ্যে দুটি বিষয় আছে; একটি হলো খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং অপরটি কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অনুভব করা।

রোজার উৎপত্তি
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্Ÿুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, সুফি সাধকদের মতে মহান আল্লাহ্ নফসকে সৃষ্টি করার পরে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কে? আর আমি কে? নফস জবাব দিয়েছিল, তুমি তুমি, আমি আমি। তখন আল্লাহ্ নফসকে সত্তর হাজার বছর আগুনে জ্বালিয়েছিলেন। জ্বালানোর পরে আগুন থেকে উঠিয়ে আবার জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে, আর আমি কে? তার ঐ একই জবাব, তুমি তুমি, আমি আমি। এরপরে আল্লাহ্ নফসকে আরও সত্তর হাজার বছর বরফে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন। বরফ থেকে বের করে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? আর আমি কে? তার ঐ একই জবাব, তুমি তুমি, আমি আমি। তখন আল্লাহ্ নফসের খাবার বন্ধ করে দিলেন। খাবার বন্ধ করে দেওয়ার পরে সত্তর হাজার বছর পর আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে? আমি কে? নফস তখন বলেছে, তুমি আমার প্রভু, আমি তোমার দাস। সেখান থেকেই আমাদের নফসকে প্রভুর নিকট আত্মসমর্পণের জন্য এই তালিমটা এসেছে। একমাত্র উপবাসের মাধ্যমেই নফ্স আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি আত্মসমর্পণ করে থাকে।

নবি-রাসুলদের যুগে রোজা
রোজা হযরত আদম (আ.)-এর থেকে বিভিন্ন নবির উপর বিভিন্নভাবে রোজা ফরজ ছিল। কারো উপর ১টি, কারো উপর ৩টি, কারো উপরে ৭টি, কারো উপরে ১০টি রোজা ফরজ ছিল। হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সময় এসে পুরো একটি মাস রোজা ফরজ করা হয়েছে।
হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনে রোজার বিধান তিনটি ধারায় বিকশিত হয়েছে। প্রথমত হযরত রাসুল (সা.) চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়্যামি বিজে’র রোজা রাখতেন। দ্বিতীয়ত তিনি মদীনায় এসে আশুরার রোজা রাখেন। তৃতীয়ত ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের শাবান মাসে রমজানে বিরতিহীনভাবে রোজা রাখা ‘গুরুতর অসুস্থ ও মুসাফির’ ছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের জন্য ফরজসংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। তখন রাহমাতুল্লিল আলামিন নিজে রোজা রাখা শুরু করেন এবং তাঁর উম্মতকে রোজার নিয়মরীতি শিক্ষা দেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ (রহ.), আবু নছর, আমর ইব্ন মুবরা সূত্রে মুআয ইব্ন যাবাল থেকে বর্ণনা করে বলেন: সালাতের উপর তিনটা অবস্থা অতিবাহিত হয়, সিয়ামের উপরও তিনটা অবস্থা অতিক্রান্ত হয়েছে। তারপর তিনি সালাতের অবস্থা উল্লেখ করেন। সিয়ামের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ্ (সা.) মদীনায় আগমন করে মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করতেন। এ সময় তিনি আশুরার রোজা রাখতেন। তারপর আল্লাহ্ তাঁর উপর রোজা ফরজ করে আয়াত নাজিল করেন। (সূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামের ইতিহাস ৩য় খণ্ড, ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত)

পৃথিবীতে এসে আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) ১০ই মহররম রোজা রেখেছিলেন। হযরত নুহ (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য বছরে ৪০টি রোজা ফরজ ছিল। এছাড়া হযরত নুহ (আ.)-এর যুগে মাসে তিনটি রোজা পালনের বিবরণ আছে। হযরত ইদ্রিস (আ.) প্রায় সারা জীবন রোজা রেখেছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রতি রমজানের ১ তারিখ সহিফা অবতীর্ণ হয়। এজন্য তিনি রমজানের ১ তারিখ রোজা রাখতেন। তাঁর অনুসারীদের জন্য ১, ২ ও ৩ রমজান রোজা রাখা ফরজ ছিল। নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি স্মরণে ১০ই মহররম তাঁর অনুসারীদের জন্য রোজা রাখা ফরজ ছিল। হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত ইসমাইল (আ)-কে কোরবানির স্মরণে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজসহ মোট সাত দিন তাঁর উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর যুগে বছরে ৩০টি রোজা ছিল বলে জানা যায়। হযরত দাউদ (আ.)-এর প্রতি রমজানের ১২ তারিখ পবিত্র জাবুর কিতাব অবতীর্ণ হয়। জাবুর অবতীর্ণের মাস রমজানের তিন দিন ও প্রতি শনিবার হযরত দাউদ (আ.)-এর উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল। হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে প্রিয় রোজা হযরত দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোজায় থাকতেন। হযরত মুসা (আ.)-এর নিকট রমজানের ৬ তারিখ পবিত্র তাওরাত অবতীর্ণ হয়। পবিত্র তাওরাত প্রাপ্তির জন্য হযরত মুসা (আ.) তুর পাহারে অবস্থানকালে মোট ৪০ দিন রোজা রাখেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত মুসা (আ.)-এর রোজা রাখার দিনগুলো ছিল জিলকদের ৩০ দিন ও জিলহজের ১০ দিন। এছাড়া ১০ই মহররম তাঁর অনুসারীদের জন্য রোজা ফরজ ছিল। হযরত সুলায়মান (আ.) সৃষ্টিকুলের সবার ভাষা বুঝতেন, এমন মু‘জিঝা, বৈশিষ্ট্যের কৃতজ্ঞতায় তিনি সারা বছর রোজা রাখতেন। হযরত সুলায়মান (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য ৯ দিন রোজা রাখা ফরজ ছিল। হযরত ইউসুফ (আ.) তাঁরই ভাইদের ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কূপে নিক্ষিপ্ত হন। ঘটনার স্মরণে ইউসুফ (আ.)-এর উম্মতরা বছরে ৪০ দিন রোজা রাখত। এছাড়া হযরত ইউসুফ (আ.)-এর উম্মতের জন্য ৭টি রোজা ফরজ ছিল। হযরত ইসা (আ.)-এর নিকট রমজানের ১৮ তারিখ পবিত্র ইনজিল অবতীর্ণ হয়। হযরত ইসা (আ.) হযরত মুসা (আ.)-এর মতো বছরে ৪০ দিন রোজা রাখতেন। তাছাড়া তিনি আশুরার রোজা রাখতেন। হযরত ইসা (আ.)-এর জন্মকাহিনি আলোচনায় জানা যায়, হযরত মরিয়ম (আ.) ‘নির্বাক উপবাসব্রত’ পালন করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের সূরা মারইয়ামের ২৬নং আয়াতের বর্ণনায়, হযরত মরিয়ম (আ.) ইশারায় বলেছিলেন, “আমি দয়াময় আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে রোজা মানত করেছি, সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সাথে কথা বলব না।” (তথ্য সূত্র: ‘আগের নবিদের যুগে রোজা’; ইসলাম ও জীবন, পৃষ্ঠা ৫, দৈনিক যুগান্তর)

বিভিন্ন ধর্মসমূহে রোজা.

খ্রিষ্টান ধর্ম: খ্রিষ্টান ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কোনো খাদ্য আহার না করে থাকাকে উপবাস বলে। এই ধর্মে যিশু খ্রীষ্টকে অনুসরণ করে ৪০ দিন উপবাস পালন করা হয়। সময় নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই উপবাসের প্রধান লক্ষ্য। বাইবেলে ইসাইয়াহ (৫৮:৬-৭), জাকারিয়াহ (৭:৫-১০), বুক অব দানিয়েলে উপবাসের কথা বলা হয়েছে। তবে এখানে উপবাসে খাদ্য পানীয় পরিহারের বদলে সৃষ্টিকর্তার আদেশ পূর্ণরূপে প্রতিপালন করতে গরিব এবং দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। বুক অব দানিয়েলে আংশিক উপবাসের কথা বলা হয়েছে।

হিন্দু ধর্ম: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাদ্য গ্রহণ না করাকেই উপবাস বলে। উপবাস শব্দটির মধ্যে দুটি বিষয় আছে; একটি হলো খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং অপরটি কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অনুভব করা। বরাহ উপনিষদে আছে- “উপ সমীপে যো বাসঃ জীবাত্মা পরমাত্মাঃ। উপবাসঃ স বিজ্ঞেয়ো নতু কায়স্য শোষণম্\” অর্থাৎ- জীব যে (সংযম পালন করে) পরমাত্মার নিকটে বাস করে তাকেই নিকটে বাস বা উপবাস বলে। শুধু না খেয়ে শরীর শুকিয়ে ফেলার নাম উপবাস নয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য এগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও উপবাস বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। উপবাস দ্বারা সংযমী সাধক মন, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অনুভবের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করে। তাই আত্মিক ভাবনায় ঋদ্ধ ব্যক্তিগণ দেহ ও মন উভয়টি সুস্থ রাখার জন্য সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে, একাদশী তিথিতে অথবা অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপবাস পালন করেন।

বৌদ্ধ ধর্ম: গৌতম বুদ্ধ প্রথম জীবনে অর্থাৎ রাজপুত্র সিদ্ধার্থ দুজন গুরুর তত্ত¡াবধানে দীক্ষাগ্রহণ করেন। এসময়ে তিনি খুবই কম খাদ্য গ্রহণ করতেন। পরবর্তীতে তার উপদেশমালায় তিনি কম খাদ্য গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের সপ্তাহের একটি দিনে অষ্টবিধান অনুসরণ করতে বলা হয়েছে যাতে দুপুর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত উপবাসের বিধান রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের সব স¤প্রদায়েরই উপবাসের বিধান রয়েছে। মূলত পূর্ণিমার দিনগুলোতে ও অন্য ধর্মীয় দিনগুলোতে তারা উপবাস করে।

ইহুদি ধর্ম: ইহুদি ধর্মে উপবাস মানে সকল ধরনের খাবার ও পানি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। ইহুদিরা বছরে ছয়দিন রোজা পালন করে থাকে। ইহুদিদের মাঝেও রোজা ছিল আল্লাহ্র আদেশ। হযরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে ৪০ দিন পর্যন্ত ক্ষুধা-পিপাসার ভিতর দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। (যাত্রাপুস্ত ক:৩৪:২৮) হযরত মুসা (আ.)-এর অনুসারীদের মাঝে ৪০ দিন রোজা রাখাকে উত্তম বলে বিবেচনা করা হতো।

রোজার মূল উদ্দেশ্য: রোজা মানুষের আত্মার উন্নতি বিধানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষের জীব প্রবৃত্তিকে দুর্বল করতে মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সাধন করে আল্লাহ্র প্রতি পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে তাঁর গুণে গুণান্বিত হওয়ার শিক্ষাদানই রোজার মূল উদ্দেশ্য। রোজাদার ব্যক্তি স্বীয় জীব প্রবৃত্তি দুর্বল হয়ে পড়া অবস্থায় যখন আল্লাহ্র জ্বিকিরে নিমগ্ন থাকেন, তখন রোজার ফায়েজ, বরকত ও রহমত তার উপর অবতীর্ণ হয়। ফলে তার আত্মার জীব প্রবৃত্তি তথা বদ স্বভাবগুলো দূর হয়ে যায়। মানুষ যখন রোজা রেখে পরিপূর্ণভাবে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে সক্ষম হয়, তখনই মানুষের মাঝে মানবীয় গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হয়। এমতাবস্থায় তিনি প্রকৃত মু’মিনে পরিণত হন। তখন আল্লাহ্ তাঁর সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বান্দার হৃদয়ে আসন গ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ তায়ালা ফরমান, “রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪) হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “যে ইমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্বের (সগিরা) গোনাহসমূহ মাফ করা হবে।” (মেশকাত শরীফ, ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৪) এজন্যই অনাদিকাল থেকে নবি-রাসুল, মুনি ঋষি ও সুফি সাধকগণ রোজাকে তাঁদের সাধনকর্মে গুরুত্ব সহকারে অন্তভর্‚ক্ত করে নিয়েছেন।

প্রকৃতপক্ষে সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেবল পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নাম পূর্ণাঙ্গ রোজা নয়। পূর্ণাঙ্গ রোজা দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে পালন করতে হয়। দেহের রোজা হচ্ছে পানাহার ও কামাচার থেকে মুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অভূক্ত থাকা। অন্যদিকে আত্মার রোজা হচ্ছে সবরকম পাপচিন্তা থেকে অন্তরকে মুক্ত রেখে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র জ্বিকিরে নিমগ্ন থাকা। এ কারণে আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “আসসিইয়ামু জুন্নাহ।” অর্থাৎ- রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। রোজা পাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪) এজন্য দেহের পাশাপাশি আত্মাকে বা দিলকে পরিশুদ্ধ করতে হয়।
আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “রমজান মাস আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “প্রকৃতপক্ষে রোজা পালনের মাধ্যমে যারা নিজের জীব-প্রবৃত্তিকে পরিশুদ্ধ করে হৃদয়ে আল্লাহ্কে সমাসীন করতে সক্ষম হয়েছেন, তারাই হাকিকতে রোজা পালনের মাধ্যমে সফলকাম হয়েছেন। এজন্য উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য রমজানই প্রকৃষ্ট সময়। রোজা মানুুষের আমিত্বকে দূর করে আল্লাহ্র চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দেয়। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ্কে পাওয়ার অর্থ হলো নিজের মাঝে আল্লাহ্র চরিত্র বিকশিত হওয়া। তাই অন্তরের পাপ কালিমা বিদূরিত করে হৃদয় মাঝে বিরাজমান আল্লাহ্র সুপ্ত নুর বিকশিত করার লক্ষ্যে মোর্শেদের দেখানো পথে শুদ্ধভাবে রোজা পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।”
এ প্রসঙ্গে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন- “না খেয়ে থাকলে আমাদের জীবাত্মাটা দুর্বল হয়। তখন আমাদের ভিতরের অসংযমি রিপুগুলো একটু দুর্বল হয়ে যায়। আমরা যখন তওবা পড়ি, মোরাকাবা করি তখন নিজের ভিতরে আল্লাহ্ময় আত্মা অর্থাৎ পরমাত্মা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। রোজার মাস হচ্ছে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্যে সর্বোত্তম মাস।

রোজার শ্রেণিবিন্যাস
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান রোজাকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথাÑ
১। সাধারণ শ্রেণির রোজা : সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকাকে সাধারণ শ্রেণির রোজা বলে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “যে (রোজাদার) ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও মিথ্যা কর্ম বর্জন করতে পারেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহ্র কোনো প্রয়োজন নেই।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৫; ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪২ ও ২৪৩)
২। মধ্যম শ্রেণির রোজা : পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে মধ্যম শ্রেণির রোজা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “রমজান মাস আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানগুলোকে শৃংখলিত করে দেওয়া হয়।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৫; ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪১)
৩। উত্তম শ্রেণির রোজা : পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত হয়ে সর্বক্ষণ আল্লাহ্র জিকিরে নিমগ্ন থাকাকে উত্তম শ্রেণির রোজা বা উচ্চ শ্রেণির রোজা বলা হয়। উচ্চ শ্রেণির রোজাই হলো হাকিকতে সিয়াম বা প্রকৃত রোজা। হাদিসে কুদসিতে এ রোজা প্রসঙ্গেই বলা হয়েছেÑ “আসসিইয়ামু লী ওয়া আনা আজঝী বিহী।” অর্থাৎ- “রোজা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪)

রোজার হাকিকত
রোজার হাকিকত হচ্ছেÑ আত্মশুদ্ধি লাভ করে মহান আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করার মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা হওয়া। হাকিকতে রোজা পালন করে পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়, এমনকি পাপের কল্পনা থেকেও মুক্ত থাকা যায়। হাকিকতে রোজা আদায়ের মাধ্যমে রোজাদার আল্লাহ্র হুকুম পালন করে পানাহার ও কামাচার এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকার ফলে মহান আল্লাহ্র পূর্ণ আনুগত্য করতে সক্ষম হয়। মু’মিন আল্লাহ্কে ভালোবেসে তাঁরই হুকুমে রোজা পালনের কারণে, তিনি দয়া করে রোজাদারের প্রতিদান হয়ে থাকেন। যে রোজাদার রোজার পুরস্কারস্বরূপ মহান আল্লাহ্কে পেয়ে যান, তিনি হাকিকতে রোজার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেন। রোজা পালনের মাধ্যমে যে ব্যক্তি নিজের নফস বা জীব প্রবৃত্তিকে পরিশুদ্ধ করে হৃদয়ে আল্লাহ্কে লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন, কেবল তিনিই হাকিকতে রোজা পালনের মাধ্যমে সফলকাম হয়েছেন। রোজা মানুষের আমিত্বকে দূর করে আল্লাহ্র চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দেয়। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ্কে পাওয়ার অর্থ হলোÑ নিজের মাঝে আল্লাহ্র চরিত্র বিকশিত করা। অতএব হাকিকতে রোজা হচ্ছেÑ অন্তরের পাপ কালিমা বিদূরিত করে হৃদয় মাঝে বিরাজমান আল্লাহ্র সুপ্ত নুর বিকশিত করে আল্লাহ্র আলো দ্বারা নিজেকে আলোকিত করে নেওয়া।
রোজার হাকিকত সম্পর্কে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, রোজার ১ম হাকিকত হচ্ছে সংযমী হওয়া। ২য় হাকিকত হচ্ছে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। এ মাসে আমাদেরকে পাপকাজ করা থেকে বিরত থাকার শিক্ষা নিতে হবে। এই শিক্ষা আগামী ১১ মাস আমাদেরকে চালাতে হবে। রোজা আমাদেরকে যেমন পাপ থেকে বিরত রাখে, শুধু এক মাস নয়, সারা বছর এটাও রোজার একটা হাকিকত।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন- আশেকে রাসুলের জন্য নি¤œতম শর্ত হচ্ছে তাকে পাপাচার থেকে বিরত থাকতে হবে, যদি কোনো আশেকে রাসুল তাকে পাপাচার থেকে বিরত না রাখেন তাহলে তার সাথে সাধারণ মানুষ আর তার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। যদি আমরা একটি পাপ করে ফেলি মোরাকাবায় বসে আস্তাগফিরুল্লাহ্ পড়ি; মোর্শেদের উসিলা নিয়ে আল্লাহ্র কাছে দয়া চাই, পানাহ চাই তিনি যাতে দয়া করে আমাদেরকে ঐ পাপটি পুনরায় আর না করি সেই দয়া ভিক্ষা দেন। আশেকে রাসুলের করণীয় হচ্ছে যদি একটা পাপ ভুলে করে ফেলেন প্রতি পাপের জন্যে ১শ বার করে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’ পড়বেন।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ মাসে আপনার ভিতরের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ রোজার প্রতিদান, আপনার জন্যে প্রতিদান নয়। যিনি রোজা রাখেন, নিজেকে সংযমী রাখেন; নিজেকে পাপাচার মুক্ত রাখেন; নিজেকে অপরাধমুক্ত রাখেন তার জন্যে প্রতিদান তিনি হবেন না। রোজাতো আসলে পরিশুদ্ধতা শিখায়। আমরা জানি মানবদেহ ২টি আত্মার সমন্বয়ে গঠিত, পরমাত্মা এবং জীবাত্মা। মানবদেহ যখন কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে এই কষ্টটা মূলত উপলব্ধি করে দেহের জীবাত্মা। জীবাত্মা শক্তিশালী হয় মানুষের খাবারের প্রোটিনে অর্থাৎ আমরা যখন খাবার খাই আমরা যখন ভালোমন্দ খেয়ে শরীরটাকে শক্তিশালী করি সাথে সাথে আমাদের জীবাত্মাটাও শক্তিশালী হয়। জীবাত্মার খাবার হচ্ছে আমরা যা খাই তাই, আর পরমাত্মার খাবার হচ্ছে ফায়েজ, আল্লাহর নুর বা জ্যোতি। জীবাত্মা আগুন, পানি, বাতাস, মাটি দ্বারা গঠিত। যে কারণে জীবাত্মা শক্তিশালী হয় আমাদের এই খাবার থেকে আর পরমাত্মা শক্তিশালী হয় আল্লাহর তরফ থেকে ফায়েজ, নুর থেকে। মানুষ যখন রোজা রাখে, আল্লাহ্কে ভালোবেসে না খেয়ে থাকে, শরীরটা একটু দুর্বল হয়ে যায়।

রোজার দৈহিক উপকারিতা
১। রোজা মানব দেহে নতুন সূ² কোষ গঠন করে থাকে। ২। রোজা পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। ফলে এগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং তা আবার সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। ৩। মোটা মানুষের স্থুলতা কমিয়ে আনতে রোজা সাহায্য করে। ৪। রোজা চর্বি বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদ রাখে। ৫। রোজা মস্তিষ্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। ৬। মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনে অনেক রোগ বালাই থেকে হিফাজত করে। ৭। অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতে ডায়াবেটিস, গ্যাসট্রিক ও উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ নিরাময়ে রোজা ফলদায়ক ও এক প্রকার সহজ চিকিৎসা। ৮। রোজায় শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিনের মাত্রা কমে যায়। রোজা অবস্থায় কিডনি ও লিভার বিশ্রাম পায়। ৯। অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুস্থতার পাশাপাশি রোজায় মানসিক শক্তি, স্মরণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, আধ্যাত্মিক শক্তিসহ সবকিছুই বৃদ্ধি পায়। রোগ নিরাময়ের যতগুলো প্রতিকার এবং প্রতিষেধক রয়েছে, রোজা তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ।

রোজার সামাজিক প্রভাব
ইসলাম ন্যায় নীতি, সুবিচার এবং গরিবের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। পেট যখন ভরা থাকে তখন অন্যের ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করা যায় না। জিহবা যখন পানিতে ভেজা থাকে তখন অন্যের পিপাসার কষ্ট অনুভব হয় না। রোজা মুসলমানদের সহমর্মিতা, করুণা এবং গরিবের প্রতি সমবেদনার শিক্ষা দেয়। আর এর প্রত্যেকটিই ইসলামি সমাজের অংশ।
আত্মার পরিশুদ্ধিতা, ত্যাগের মানসিকতা এবং জ্ঞান ও চারিত্রিক উৎকর্ষ অর্জনই এই উপবাস যাপনের মূল উদ্দেশ্য। রমজানের সিয়াম সাধনা ও ধর্মীয় অনুশাসনগুলোর ব্যাপারে অনেকেই উদাসীন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র এই মাসটিকে নিজেদের লোভ চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। পণ্য মজুদ করে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পবিত্র রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সিয়াম সাধনার এই মাসে সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের অনেকেই অপচয় করে। এই অবস্থায় রমজানের তাৎপর্য আমাদের প্রত্যেকেরই গভীরভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সিয়াম সাধনার শিক্ষা, এর মাধ্যমে অর্জিত জীবনবোধ যদি জীবনাচরণে প্রতিফলিত হয়, তাহলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। এক মাসের সংযম সাধনার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রত্যেকের জীবন পরিশুদ্ধ হোক, পবিত্র ও পুণ্যস্নাত হোক। মহান আল্লাহ আমাদের দান করুন সেই তাওফিক, যাতে আমরা পবিত্র রমজানের শিক্ষা সঠিকভাবে উপলব্ধি ও অনুশীলন করতে পারি।

তথ্যসূত্র:
১. সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.), সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার
২. সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.), শান্তি কোন পথে? পৃষ্ঠা ১১৫-১১৭
৩. ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.), মোহাম্মদী ইসলামের তালিম, পৃষ্ঠা ১৫৬
৪. মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ, ‘আগের নবিদের যুগে রোজা’; ইসলাম ও জীবন, পৃষ্ঠা ৫, দৈনিক যুগান্তর

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *