সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে বাংলাদেশ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে বাংলাদেশ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বাংলাদেশ সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের কবলে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ পরিস্থিতির জন্য সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে। বুধবার অনলাইন সম্মেলনে সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ তথ্য জানান।


এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সময়ে-অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতা বাড়ছে। এ ধরনের আবহাওয়া ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই এই অবস্থা থাকতে পারে। এমন বাস্তবতায় এবার ডেঙ্গুর বিস্তার আরও দীর্ঘায়িত করবে।


কীটতত্ত¡বিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা জানান, এতদিন তারা বলে আসছেন পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ুর পরিবর্তনে মশার বিস্তার বাড়ছে। বিশেষ করে এডিস মশা বিরূপ আবহওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে।


ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৮ শ।


সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ে তারা বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করেছে। তারা সার্বিকভাবে নজরদারি জোরদারে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছেন। সেই সঙ্গে তারা গবেষণাগারের সক্ষমতা ও আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়তা করছেন।


সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা দেওয়া ডেঙ্গু মূলত একটি সংক্রামক রোগ। এর কারণে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেশিতে ব্যথা এবং সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রক্তপাত ঘটতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীতজ্বর ও জাইকার মতো মশাবাহিত রোগ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুব দ্রুত এবং দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।
ডব্লিউএইচও’র অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স বিভাগের পরিচালক আবদি মাহামুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ধরনের সংক্রমণের ঘটনাগুলো ‘আসন্ন জলবায়ু সংকটের অশনি সংকেত’ দিচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও এ বছরের বাড়তি উষ্ণতা সৃষ্টিকারী এল নিনোর মতো কিছু আবহাওয়াগত নিয়ামক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বেশকিছু অঞ্চলে ভয়াবহ পর্যায়ের ডেঙ্গু সংক্রমণ সৃষ্টি করেছে।


জানতে চাইলে সরকারের জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. গোলাম ছারোয়ার বলেন, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত প্রভৃতি পরিবেশের উপাদানগুলো এডিস মশার প্রজনন সক্ষমতা অর্থাৎ তাদের মিলনের ফ্রিকুয়েন্সি বৃদ্ধি করে। মিলনের পরপরই স্ত্রী মশা রক্ত পান করার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি যে শুধু মশার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক তা নয়, ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতেও মুখ্য ভূমিকা রাখে।
যত বেশি পুরুষ আর স্ত্রী মশা মিলিত হবে তত বেশি স্ত্রী মশার ডিম পাড়ার ফ্রিকুয়েন্সিও বেড়ে যাবে। অর্থাৎ একক মশার ডিম পাড়ার ক্লাস্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশের এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়ার জন্য যেমন অনুকূল, তেমনি তাদের খাবারও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। কারণ সবগুলো উপাদানই লার্ভার প্রাকৃতিক খাবার ব্যাকটেরিয়ার রেপ্লিকেশনের অত্যন্ত অনুকূল।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকায় পানি সরবরাহের সমস্যা রয়েছে। বাসিন্দারা তাদের টয়লেট বা বাড়ির অন্যান্য জায়গায় বালতি বা প্লাস্টিকের পাত্রে পানি ধরে রাখেন। সেখানে সারা বছরই মশা থাকতে পারে। গত বছর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল অক্টোবর মাসে। এবার অক্টোবর আসার আগেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি চলে গেলেই গরম বাড়ছে। সঙ্গে আর্দ্রতাও বেশি। এই আবহাওয়া এডিস মশার বংশ বিস্তার আরও বাড়াবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *