লক্ষীপুরে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

লক্ষীপুরে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

কৃষি সংবাদদাতা: চলতি মৌসুমে লক্ষীপুরে ৪২ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদন হতে পারে ৮০ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন সয়াবিন।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ৮৩ হাজার ২০০ টন সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২০০ টন। কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চফলনশীল নতুন জাতের বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৫ ও ৬, বিনা-৫ ও ৬ জাতের সয়াবিন চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বিগত মৌসুমে সয়াবিন চাষ করে ৬ শত কোটি টাকা আয় করেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তেলবীজটির উৎপাদন আরো বাড়াতে কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত ১৭০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন লাগানো হয়েছে। আগামী আরো একমাসের বেশি সময় ধরে সয়াবিন লাগানো হবে।


বছরে দুবার সয়াবিন উৎপাদন করেন লক্ষীপুরের চাষীরা। প্রথমবার আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সয়াবিন বীজ আবাদ করা হয়, যা খরিপ-২ মৌসুম নামে পরিচিত। দ্বিতীয়বার পৌষ-মাঘ মাসের দিকে কৃষকরা রবি শস্য হিসেবে সয়াবিনের আবাদ করেন। রায়পুর উপজেলার টুনুরচর, চরঘাষিয়া, চরকাচিয়া, কানিবগারচরে খরিপ-২ মৌসু্মে সয়াবিন বীজ উৎপাদন করা হয়। এখানকার বীজ উন্নত মানের হওয়ায় অন্যান্য জেলার কৃষকরাও এখানে বীজ কিনতে আসেন। খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার টন সয়াবিন বীজ উৎপাদন হয়, যার টন প্রতি আনুমানিক বাজার মূল্য ২ লাখ টাকা। এ হিসাবে চার হাজার টন সয়াবিন বীজ থেকে স্থানীয় বাজারেই লেনদেন হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। আর রবি মৌসুমে প্রায় ৪০-৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়। এ মৌসুমে প্রতি মণে ২ হাজার ৫ শত থেকে ৩ হাজার টাকা পান কৃষকরা। জেলা জুড়ে সয়াবিন বিক্রি হয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার।

কৃষকরা জানান, বিভিন্ন ফিডস মিল কোম্পানি জমি থেকেই উৎপাদিত সয়াবিন আগাম কিনে নেয়। এ কারণে কৃষক ভালো দাম পান। আর বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে উন্নত জাতের সয়াবিন বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেন। তাছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন।
১৯৮২ সালে লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করে মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) নামে একটি সংস্থা। উৎপাদন উপযোগী উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় প্রথমবারেই উৎপাদনে বেশ সাফল্য আসে। দেশে মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশই আসে লক্ষীপুর থেকে, এ কারণে লক্ষীপুরকে ‘সয়াল্যান্ড’ নামেও ডাকা হয়। উৎপাদিত সয়াবিন পোলট্রি খাদ্য, ফিশফিড, সয়ানাগেট, সয়াবিস্কুট, সয়ামিট, সাবান, সয়াদুধ, শিশুখাদ্যসহ ৬১টি ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়।


অনুকূল আবহাওয়া, ভালো উৎপাদন, সন্তোষজনক বাজারমূল্যের কারণে লক্ষীপুরে সয়াবিন আবাদ ক্রমাগত বাড়ছে। কৃষকরা বলছেন, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ¡াস ও অতি বৃষ্টির কারণে ফসলহানি ঘটে। তবে গতবছর সয়াবিনের ভালো ফলন হয়েছে। গত মৌসুমে ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় এবারো সয়াবিন আবাদে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। তারা আশা করছেন, আবারো ভাল উৎপাদনের পাশাপাশি ভাল দামও তারা পাবেন।


মিশন ২০৪১: আমিই সল্যুশন- কেমন হতে পারে আগামীর স্মার্ট কৃষি?
মানিক মাহমুদ: ২০৪১ সালের স্মার্ট কৃষি কেমন হবে? কৃষকরা কোন তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন? তথ্যগুলো কোথা থেকে আসবে? মাটি, ড্রোন, নাকি স্যাটেলাইট থেকে? ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে আমরা দুই দশক পর আগামী কৃষি কেমন হতে পারে তা নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি তা হলো— চিরাচরিত কৃষক চরিত্র গণি মিয়া ক্ষেতের আইলে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোন দিয়ে ড্রোন চালাবেন। ড্রোন উড়বে ফসলের মাঠজুড়ে। ছবি তুলবে ফসলের, মাটির। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে গণি মিয়া জানবেন মাটির পুষ্টিগুণ। চোখের সামনে দেখতে পাবেন মাঠের কোন অংশে কতটুকু সার দিতে হবে; কোথায় কোথায় কোন কোন বালাইনাশক কী পরিমাণে লাগবে, দেখতে পাবেন সেই তথ্যও।
গণি মিয়ার কৃষি জমির মতোই মাছের ঘের, গবাদি পশু ও পোলট্রি খামারে থাকবে উন্নত প্রযুক্তি ও ডাটা বিশ্লেষণভিত্তিক আইওটি সুবিধা। কৃষকরা প্রতি মুহূর্তে জানতে পারবেন তাদের স্বপ্ন ও ভালোবাসার খামারের খুঁটিনাটি সব বিষয়। প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে জানবেন বাজারের খবরাখবর। প্রথাগত শ্রমঘন কৃষি পরিণত হবে প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট কৃষিতে। কৃষকেরা নিজেরাই করবেন নিজেদের সমস্যার সমাধান।


আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি হতে হবে আরও বেশি টেকসই। এ জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য ও বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনী সব জ্ঞানের তথ্যকে একযোগে কাজে লাগানো যেতে পারে। কম্বাইন্ড হারভেস্টিংয়ের প্রযুক্তির বিস্তার ঘটিয়ে কৃষিতে শ্রমিক সংকটের সমাধান করা যায়। বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে কম আবাদযোগ্য জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। আবার ফ্যাক্টরিতে থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তিতে উদ্ভিজ উপাদান থেকে মাংস ও মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে, যা ক্রমেই বাড়তে থাকা আমিষের চাহিদা পূরণ করে বিশ্ব বাজারে রফতানিও করা যাবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষের মতো নিত্যনতুন সব উদ্ভাবন এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশের স্মার্ট কৃষিকে।


ময়মনসিংহের এক স্থানীয় সরকারের কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক। এলাকার কৃষকদের ফসল-ফলনে ব্যর্থতা ও কষ্ট দেখে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তিনি কৃষকদের সমর্থনে পাশে থাকতে না পারার বিষয়টি বুঝতে পারেন। ২০১৪ সালে তিনি সরকারের ‘এমপ্যাথি ট্রেনিং প্রোগ্রামে’ যোগ দিয়ে শেখেন কীভাবে প্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা যায়। এভাবেই ‘কৃষকের জানালা’ নামে একটি উদ্ভাবনী অ্যাপের জন্ম হয়। এই অ্যাপের সহযোগিতায় ফসলের ছবি দেখেই কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে শস্যের রোগ-বালাই শনাক্ত করতে পারেন। অল্প সময়ের মধ্যেই অ্যাপের পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রম জনপ্রিয় হতে থাকে। কৃষকদের উপকারে আসতে থাকা এই অ্যাপ পাইলটিংয়ের পর এখন সরকারের কৃষি সহায়তা সংস্থা (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর) দ্বারা গৃহীত হয়েছে।


দেশের প্রধান ফসলগুলোর সমস্যার ছবি সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তা ডাটাবেজে সাজানো হয়েছে। এতে রয়েছে ১২০টিরও বেশি ফসলের এক হাজারেরও বেশি সমস্যার সমাধান। অনলাইন কিংবা অফলাইন উভয়ভাবেই কৃষকের জানালা থেকে সেবা নেওয়া যায়। কৃষকের জানালার মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো অশোকের মতো ‘গভপ্রেনিউর’ (সরকারি কর্মকর্তারা উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন) তৈরি করবে। স্মার্ট বাংলাদেশে এটাই নিয়মে পরিণত হবে। সরকারি কর্মকর্তা উদ্যোক্তা হয়ে নাগরিক সেবার নীতিগুলো পুনর্লিখনের জায়গা তৈরি করবে। আর এতে সরকারের প্রতি আস্থা বাড়বে।


সময়মতো মাছের খাবার দেওয়া, পানির গুণগতমান পরীক্ষা, মাছের পুষ্টি ও বৃদ্ধি তদারকিসহ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ঠেকাতে নিয়মিত দেখভাল করছেন মাত্র একজন মানুষই। তিনিই চাষি, তিনিই উদ্যোক্তা। এটা কীভাবে সম্ভব? এটা সম্ভব হতে পারে প্রযুক্তির কল্যাণে। আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তিই একটি মাছের খামার চালাতে পারেন। এমনটি করে দেখিয়েছেন উদ্ভাবক ড. মো. তানভীর হোসেন চৌধুরী। আবার একজন কৃষক ফসলের পরিচর্যার জন্য ব্যবহার করছেন মোবাইল অ্যাপ। এর মাধ্যমে কৃষক ফসলের ছবি তোলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই এআই এবং মেশিন লার্নিং পদ্ধতিতে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় কীভাবে ওই ফসলের পরিচর্যা করতে হবে।


এরই মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট কৃষির দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পরিশ্রম কমিয়ে কৃষি কাজকে সহজসাধ্য করা এবং স্মার্ট কৃষি ও কৃষক তৈরিতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। এক ‘কৃষি বাতায়ন’ প্রযুক্তি সেবার মাধ্যমে কৃষকরা এখন তাদের ফসল সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি জানতে পারছেন, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নিতে পারেন পরামর্শ। সরকারের বিভিন্ন কৃষি-সম্পর্কিত সেবাও পেয়ে থাকেন। খোঁজখবর পান সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি হাট-বাজারের।


বাংলাদেশের কৃষি এখন উত্তরণের পথে আছে। বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর কাজ শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু জমি কমে যাচ্ছে, সেখানে দেশের কৃষির সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। প্রথমত, ক্রমবর্ধমান মানুষের খাবার জোগাড় করা, বিশ্ব বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নতুন কৃষি শস্যের উৎপাদনের হার বাড়ানো এবং পণ্যের সঙ্গে উৎপাদনের অনুপাতকে দক্ষতার জায়গায় নেওয়া। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকের সংকট মোকাবিলা, এরই মধ্যে সেটি আমরা শুরুও করে ফেলেছি। আগে কৃষক নিড়ানি দিতেন, আগাছা ছেঁটে দিতেন। এখন ওষুধ ব্যবহার করে শ্রমিকের সংকট কমানো যাচ্ছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টর এসে গেছে। যান্ত্রিকীকরণ এখন নতুন মুখ। এ ছাড়া হাটে বাজারে নতুন নতুন খাবার এসে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে নিত্যনতুন খাবারের চাষ হচ্ছে।


এই তিনটি মিলিয়ে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কৃষি হবে। কারিগর হিসেবে এই তাসটা খেলতে হবে আমাদের। নানা ধরনের উদ্ভাবনী আইডিয়া আসবে। ফসল হাইব্রিড হবে সেটা ঠিক, কিন্তু আমাদের জমির পরিমাণও কিন্তু কমে যাবে। আমাদের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। তাছাড়া জলবায়ুর বিভিন্ন ইস্যু তো আছেই। কৃষি তখন জমিতেও হতে পারে, আবার ভাসমানও হতে পারে। কৃষকের কাছে তথ্য সেবার সুযোগ থাকলে সে উৎপাদন বাড়ানোর কথা চিন্তা করবে। উদ্ভাবনী হবে।
এখন রাজধানী ছেড়ে অনেকেই গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করছেন। বিদেশ থেকেও অনেকে আসছেন। ২০৪১ সালের কৃষকরা শিক্ষিত হবেন। তথ্যগতভাবে সমৃদ্ধ হবেন। নিউ ব্রিড অব ফারমার হবেন তারা। সম্মান পাবেন কৃষকরা। সেজন্য গ্রামে থেকে স্মার্ট কৃষির স্পর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কৃষকদের সময়োপযোগী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ড্রোন বা ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তিগুলো দিয়ে ওই শ্রমিকের শূন্য জায়গাটা পূরণ করতে হবে। কিছু জায়গায় চাষ হচ্ছে না। বরেন্দ্র ভূমির মতো অনেক জায়গায় আগে চাষাবাদ হতো না। কিন্তু এখন সেখানেও চাষ হচ্ছে। আগামী দিনের স্মার্ট কৃষি ত্রিমাত্রিক পদ্ধতি নিয়ে এগিয়ে যাবে।


আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ সেই চিরাচরিত কৃষক চরিত্র গণি মিয়ার আমূল বদলে যাবে। তিনি আর অন্যের জমিতে কাজ করবেন না। নিজেই হবেন একাধারে কৃষক ও উদ্যোক্তা। আকাশের পানে চেয়ে অদৃষ্টের ওপর ভরসা করবেন না। সমস্যার মুখোমুখি হলে পথ হাতড়ে বেড়াবেন না, নিজেই পথ খুঁজে নেবেন নিজের। দেশ-বিদেশের উচ্চ শিক্ষা শেষে হাজারও কৃষক শুধু সেই কৃষক গণি মিয়া হবেন না, হবেন স্মার্ট বাংলাদেশের একেকজন স্মার্ট কৃষক গণি মিয়া, যিনি নিজের সমস্যার সমাধান নিজেই করেন। প্রযুক্তির আশীর্বাদের আওতায় আসবেন প্রতিটি কৃষক, আসবে প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি জেলা। স্মার্ট কৃষি হবে স্মার্ট বাংলাদেশের আরেক নাম।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ তিন গুণ বেড়েছে
বাণিজ্য ডেস্ক: বিদ্যুতের ঘাটতি কাটাতে গত বছর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন গুণ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বাংলাদেশের সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি করেছে। যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বিদ্যুতের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ও ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করেছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে কয়লা প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমায় ও দুর্বল মুদ্রার কারণে ব্যয়বহুল প্রাকৃতিক গ্যাস, ফার্নেস অয়েল এবং ডিজেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছিল সরকার। পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) দৈনিক অপারেশনাল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৭.৯ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘নতুন ইউনিট চালু হওয়ায় এ বছর কয়লার অংশ আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা থাকবে এবং তরল জ্বালানির ব্যবহার কমতে পারে।’


পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে ২০২২ সালে কয়লার অংশ ছিল ৮.৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ১৪.২ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ ২০২৩ সালে ৫৫.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত চার বছরের মধ্যে প্রথম বেড়েছে এবং ২০২২ সালে ছিল ৫১ শতাংশ।
তবে ২০২৩ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ গত ১০ বছরের গড়ের (প্রায় ৬৬ শতাংশ) তুলনায় বেশ কম ছিল। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ গ্যাস ব্যবহারে সংকোচন নীতি মেনেছে। এ ছাড়া দেশের প্রধান গ্যাসের উৎস স্থানীয় গ্যাসের মজুদ ও এলএনজি আমদানি কমেছিল।
তথ্যে দেখা গেছে, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারে জ্বালানি তেল ও ডিজেলের মতো তরল জ্বালানির ব্যয় কমেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০২২ সালে এগুলোর অংশ ছিল ২৯.৬ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ২০.১ শতাংশে নেমে এসেছে।


বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাসস্থান এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
এশিয়ার অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির দেশ ভারত ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি বাংলাদেশও বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তুলনামূলক সাশ্রয়ী কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালে ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাংলাদেশকে চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গড় উৎপাদন ব্যয় কমানোর পথে নিয়ে গেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ গড়ে কিলোওয়াট-ঘণ্টা প্রতি ৫ টাকা ২৩ পয়সা (৪.৭৮ মার্কিন সেন্ট) হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল শীর্ষ ১০ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এ বছর সৌরশক্তি দ্বিগুণ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে সবুজ জ্বালানি বৃদ্ধির আশা করছে।

পুঁজিবাজারে ৯ মাসে সর্বনিম্ন লেনদেন
বাণিজ্য ডেস্ক: নতুন বছর ২০২৪ সালের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা। সেই সঙ্গে লেনদেনে খরা দেখা দিয়েছে।
নতুন বছরের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। লেনদেন এতটাই কমেছে যে গত বছরের ২৮ মার্চের পর বা ৯ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়েছে। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এর পরও মূল্যসূচকের সামান্য উত্থান হয়েছে।


অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে বেড়েছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে বছরের প্রথম দুই কার্যদিবস পতনের পর দুই বাজারেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলল।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের আট মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়।


কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে লেনদেনের ৪০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর একাধিকবার সূচকের উত্থান-পতন হয়।


তবে লেনদেনের শেষ দিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়। অবশ্য এর পরও দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৯২টির। আর ১৮০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া আগের দিনের তুলনায় .৮৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৩৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।


অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৯টির এবং ৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ টাকা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *