মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন, ব্যবহার হবে ওষুধ-খাদ্যশিল্পে

মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন, ব্যবহার হবে ওষুধ-খাদ্যশিল্পে

বাকৃবি (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা: দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন নিষ্কাশন করে প্রাথমিক সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক দল গবেষক। এই জেলাটিন থেকে জেলি আইসক্রিম, জেলি ক্যান্ডি, জেলি পুডিং খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষক দল। নিষ্কাশিত এই জিলাটিন থেকে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে জেলাটিন আমদানির খরচ কমবে, তেমনি মাছের ফেলে দেওয়া বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে। গবেষক দলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন গবেষণা সম্পর্কে এসব তথ্য দেন। পাঁচ সদস্যের গবেষক দলে ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা এবং তিন জন স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।
অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন আরো বলেন-‘আমরা পাঙ্গাস, সামুদ্রিক পোয়া, ইল বা বাইন, শোল মাছের ফেলে দেওয়া ত্বক থেকে প্রাথমিকভাবে জেলাটিন নিষ্কাশন করতে সক্ষম হয়েছি। পরে প্রাপ্ত এই জেলাটিন বাজারের বহুল ব্যবহৃত জেলাটিনের সঙ্গে তুলনা করে এর বৈশিষ্ট্য, পানির ধারণক্ষমতা ও গলনাঙ্কের তুলনা করে এর মান যাচাই করেছি। পরে এই নিষ্কাশিত জেলাটিন দিয়ে আইসক্রিম, চকলেট ও পুডিং তৈরি করেছি। আমরা নিষ্কাশিত জেলাটিনকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত জেলাটিনের সঙ্গে তুলনা করে উচ্চতর গবেষণা করছি। ফলাফলে এসেছে, যেকোনো প্রজাতির মাছ থেকে উচ্চ গুণমানসম্পন্ন জেলাটিন পাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মতো মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এই মৎস্য খাত ব্যবহার করে আমরা যদি আরো বৈদেশিক মুদ্রা আনতে চাই, তাহলে আমাদের আরো ভালো মানের ও ধরনের নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে যদি মাছের বাণিজ্যিক ফ্রোজেন ইন্ডাস্ট্রি বা ক্যানিং ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে গড়ে ওঠে, তাহলে তার থেকে মাছের উচ্ছিষ্ট ত্বকগুলা জেলাটিন নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম হব।’
গবেষক অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন জানান, বাংলাদেশ ওষুধশিল্প ও খাদ্যশিল্পে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে জেলাটিন আমদানি করে। তাই দেশেই যদি দেশীয় এসব মাছ থেকে জেলাটিন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়, তবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় মাছের বাজারে উচ্ছিষ্ট অংশ, যা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, তার একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হবে। এমনকি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত জেলাটিনের প্রধান উৎস গরু ও শূকর। তাই মাছ থেকে নিষ্কাশিত জেলাটিন খাদ্যপণ্যে ব্যবহার করা হলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
গবেষণা বিষয়ে অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, ‘মাছের উচ্ছিষ্ট থেকে উৎপাদিত এসব পণ্যের মধ্যে বিপুল পরিমাণে প্রোটিন আছে। এই প্রোটিন আমরা নষ্ট না করে একটি বিকল্প উপায় ব্যবহার করতে পারি। আমাদের চারপাশে দেখি প্রচুর পরিমাণে মাছের বর্জ্য ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো যেমন পরিবেশের ক্ষতি করে পরিবেশকে নষ্ট করে, তেমনিভাবে মানুষের স্বাস্থ্যও নষ্ট করে। এইগুলো ব্যবহার করে যদি আমরা জেলাটিন তৈরি করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন ধর্মীয় হালাল-হারামের বিষয়টা কমানো যাবে, অন্যদিকে পরিবেশকে সুরক্ষা প্রদান করা যাবে।
উল্লেখ্য, ‘জেলাটিন’ এক ধরনের প্রোটিন উপাদান, যেটি কোলাজেন থেকে আগত। কোলাজেন প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রগ, অস্থিসন্ধি ও কলায় উপস্থিত থাকে । খাদ্য হিসেবে জেলাটিন জেলি ডেজার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ফল ও মাংস সংরক্ষণে এবং গুঁড়ো দুধ তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়। ওষুধের সিরাপ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *