স্বরূপকাঠির সুপারি যাচ্ছে ভারতে

স্বরূপকাঠির সুপারি যাচ্ছে ভারতে

পিরোজপুর সংবাদদাতা: পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে উৎকদিত সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এখানকার সুপারি মানে ভালো হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতেও এর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের হুগলি জেলার চুঁচুড়া ও চন্দননগর এলাকায় স্বরূপকাঠির সুপারির বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই এখান থেকে শত শত মণ সুপারি ভারতে চালান দেওয়া হয়।


প্রতি মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় শতকোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলাটি একটি ব্যবসাসমৃদ্ধ এলাকা। এখানকার উৎকদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু, নারকেল, পান-সুপারিসহ নানা ধরনের পণ্যের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। এই এলাকায় উৎকদিত এসব পণ্যের ব্যবসায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।


এই এলাকায় বছরজুড়েই সুপারির ব্যবসা চলমান থাকলেও মূলত বছরের আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ-এই তিন মাস সুপারির ভরা মৌসুম। এ সময় উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের, জগন্নাথকাঠি, ইদিলকাঠি, কুড়িয়ানা, সমুদয়কাঠি, করফা, কামারকাঠি, মাদ্রা, সোহাগদল, শশীদসহ অন্তত ১৫টি হাটে সুপারির বেচাকেনা হয়।
সম্প্রতি সরজমিনে উপজেলার পৌর শহরের জগন্নাথকাঠি বন্দরের হাটে ঘুরে দেখা গেছে, ভোর ৮টার মধ্যেই হাট ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে যায়। ওই বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১১টি আড়ত রয়েছে।


উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুপারি নিয়ে বিক্রেতারা হাটে আসছে। হাটে তিন ধরনের সুপারি বেচাকেনা চলে। এগুলো হলো কাঁচা, পাকা, শুকনা ও খোসা ছাড়ানো। এর মধ্যে কাঁচা ও পাকা সুপারি কুড়ি হিসেবে বিক্রি করা হয়। ২১০টি সুপারিতে এক কুড়ি হয়, যার বর্তমান মূল্য ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা।


এছাড়া শুকনা সুপারি প্রতি মণ ১২-১৩ হাজার টাকা এবং খোসা ছাড়ানো সুপারি প্রতি মণ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় আড়তদাররা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এক শ্রেণির দূরাগত বেপারীরা এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে সেগুলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, গৌরনদী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান দেন। খুলনা, বাগেরহাটসহ আশপাশের সীমান্তবর্তী অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে ভারতের হুগলিসহ কয়েকটি এলাকায় চালান দেন।


উপজেলার প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী এবং আরো অন্তত ৯ হাজার নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর মধ্যে আড়তে কর্মরত শ্রমিকের বেতন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে বসে শত শত নারী সুপারির খোসা ছাড়ানোর কাজ করে থাকেন।
জলাবাড়ী এলাকার বাগান মালিক মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন হালদার জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর সুপারির দাম কম হলেও বাম্পার ফলন হওয়ায় বাগান মালিকরা বেশ দাম পাচ্ছেন। ওই বন্দরের এসকে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী শিমুল জানান, প্রতি সপ্তাহে হাটে অন্তত ৫০ লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। আর পুরো মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় শতকোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে পরিবহনসহ লেবার ও শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর তাঁদের লাভ অনেকটা কম হচ্ছে বলে তিনি জানান।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *