রজনীকান্ত সেন

রজনীকান্ত সেন

ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল: কবি, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক রজনীকান্ত সেনের জন্ম ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই পাবনা জেলার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে। তিনি ‘কান্তকবি’ নামেও পরিচিত। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন ও মা মনোমোহিনী দেবীর তৃতীয় সন্তান হচ্ছেন রজনীকান্ত। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সংগীতজ্ঞ।
শৈশবে রজনীকান্ত ছিলেন খুবই দুষ্টু প্রকৃতির এবং সারাক্ষণই খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু তাঁর নৈতিক চরিত্র আদর্শস্থানীয় ছিল। তিনি পড়াশোনায় কম সময় ব্যয় করলেও পরীক্ষায় আশাতীত ফল অর্জন করতেন। তিনি কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৮৩), রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ এবং কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বিএ ও বিএল (১৮৯১) ডিগ্রি লাভ করেন।


পরে তিনি রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। কিছুদিন নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুন্সেফ ছিলেন। তিনি ১৮৮৩ সালে হিরণ্ময়ী দেবীকে বিয়ে করেন।
শৈশব থেকেই রজনীকান্ত স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীলভাবে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় কবিতা লিখতেন।


দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সমসাময়িক এই গীতিকারের গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। ঈশ্বরের আরাধনায় ভক্তিমূলক ও দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ বা স্বদেশপ্রেমই তাঁর গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়। তিনি তাঁর বাবার কাছে সংগীত শেখেন এবং নিজের লেখা কবিতাগুলোকে গান আকারে রূপ দিয়ে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান পরিবেশন করতেন। স্বদেশি আন্দোলন চলাকালে তাঁর লেখা ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’ গানটি অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে। কবি হিসেবেও তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন।
রাজশাহীতে অক্ষয় কুমার মৈত্রের বাড়িতে তিনি স্বরচিত গান পরিবেশন করতেন। সেখানকার উৎসাহ নামক মাসিক পত্রিকায় তাঁর রচনা প্রকাশিত হতো। তাঁর কবিতা ও গানের বিষয়বস্তু ছিল প্রধানত ভক্তি ও দেশপ্রেম।


জীবিতাবস্থায় তাঁর তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়-‘বাণী’, ‘কল্যাণী’ ও ‘অমৃত’। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় আরো সাতটি গ্রন্থ- ‘অভয়া’, ‘আনন্দময়ী’, ‘বিশ্রাম’, ‘সদ্ভাবকুসুম’, ‘শেষদান’, ‘পথচিন্তামণি’ ও ‘অভয় বিহার’। এগুলোর মধ্যে ‘বাণী’ ও ‘কল্যাণী’ গানের সঞ্চয়ন, ‘পথচিন্তামণি’ একটি কীর্তনগ্রন্থ, আর ‘অভয় বিহার’ একটি গীতিকাব্য।
রজনীকান্ত সেন ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান। ক্ষণজন্মা এই অমর সংগীতকার ও লেখক ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী ১৯৮৯ সালে রজনীকান্ত সেন শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *