ঈশা খাঁর এগারসিন্দুর দুর্গ

পাকুন্দিয়া সংবাদদাতা: পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুর গ্রামে রয়েছে একটি প্রাচীন দুর্গ। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ঈশা খাঁর দুর্গ নামে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, বর্তমান প্রচলিত নাম ‘এগারসিন্দুর’ শব্দটি এসেছে ‘এগারো সিন্ধু’ বা নদী থেকে। অর্থাৎ মূল শব্দ ‘এগারসিন্ধুর’ কথাটি ‘এগারোটি নদী’ বুঝিয়েছিল।
এই গ্রাম ও দুর্গ এ নামে পরিচিত হওয়ার কারণ হলো, একসময় এর কাছে ছিল অনেকগুলো নদীর সংযোগস্থল।


ঐতিহাসিক দুর্গটি কালের আবর্তে ধ্বংস হয়ে মাটির ঢিবিতে পরিণত হয়েছিল। গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর খননকাজ পরিচালনা করে দুর্গটির সন্ধান পায়। সেসময় উদ্ধার করা প্রত বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবাশ্ম, পাথরের খণ্ড, পোড়ামাটির হাঁড়ি-পাতিল, মাটির কলসের ভাঙা অংশ, প্রদীপদানি, অলংকৃত ইট, হাতের বালা, পোড়ামাটির বল, পুতুল ইত্যাদি।


পাওয়া গেছে ইটের তৈরি বর্গাকৃতির প্রতিরক্ষা দেয়াল, জলাধার, চুন-সুরকির মেঝে ও ইট সোলিংয়ের নিদর্শনও। ২০২২ সালের এপ্রিলে দুর্গ এলাকাতে এক অনুষ্ঠানে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেছিলেন, শাহ গরীবুল্লাহর মাজার ঢিবিতে পাওয়া প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনগুলো ১০ থেকে ১১ শতকের। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দুর্গ এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
বাংলাপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোচ উপজাতি প্রধান বেবুধ দুর্গটি নির্মাণ করে এখানে তাঁর রাজধানী বানান। এক পর্যায়ে বাংলার স্বাধীনচেতা প্রভাবশালী ভূস্বামী বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ইশা খাঁ দুর্গটি দখল করেছিলেন। ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির মোগল সম্রাটের বাহিনী দুর্গটি আক্রমণ করে। কিন্তু মোগল বাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ঈশা খাঁর সঙ্গে চুক্তি করে। সতেরো শতকের শুরুর দিকে অহম বাহিনী দুর্গটি দখল করে।


ইসলাম খাঁ তাদের পরাজিত করে দুর্গটি ধ্বংস করেন। ১৮৯৭ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই দুর্গের অবশিষ্টাংশও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
সম্প্রতি সরেজমিনে দুর্গ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রাচীন মাটির একটি ঢিবি ও চৌকোনা ইটের ভাঙা স্তূপ। দুর্গ চত্বরে প্রাচীন ইট ও মৃৎপাত্রের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।


পাশের কাপাসিয়া উপজেলা থেকে এই দুর্গ দেখতে এসেছিলেন আবুল কালাম নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘জায়গাটি খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের জন্য নেই কোনো রেস্টুরেন্ট বা বিশ্রামাগার।’


এগারসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘প্রাচীন দুর্গটির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, দুর্গটি সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলায় জরিপের কাজ চলছে। জরিপ শেষে যেসব প্রতœসম্পদের গুরুত্ব বেশি সেগুলোর সংরক্ষণের কাজ আগে করা হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *