কচুরিপানার হস্তশিল্প ইউরোপে

কচুরিপানার হস্তশিল্প ইউরোপে

রংপুর সংবাদদাতা: নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা পায়রাবন্দে তৈরি কচুরিপানা থেকে কারুশিল্প দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার দখল করেছে। এ হস্তশিল্প তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩ শতাধিক নারী হয়েছেন স্বাবলম্বী।


সরেজমিন দেখা গেছে, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র থেকে আনুমানিক ১০০ ফুট দূরে বড় আকারের একটি ঘরে ২০-২৫ জন নারী কাজ করছেন হস্তশিল্পের। এছাড়া আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মহিলারা নিজ বাড়িতে বসে এ হস্তশিল্প তৈরি করছেন।


খাল-বিল, নদী-নালা পুকুর থেকে সংগৃহীত কচুরিপানা থেকে এখানে তৈরি হচ্ছে গার্ডেনপট, লন্ডি বাস্কেট, কিচেন বাস্কেট, ডক বাস্কেট, ক্রসনেট সামগ্রী। এখানে কাজ করা নারীরা প্রতিদিন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। মোটামুটি সাশ্রয়ী দাম হওয়ায় এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে দেশ-বিদেশে। পায়রাবন্দে কাঁচা ও শুকনো কচুরিপানাকেন্দ্রিক কয়েক শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে এ শিল্পে। প্রতি কেজি কচুরিপানা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পায়রাবন্দে কচুরিপানার হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন রেজাউল করিম। তিনি গাজীপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৬ সালে আর কে হ্যান্ডিক্রাফট নামে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রথম দিকে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং বিপণনে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আর সমস্যা হয় না। ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি তার উৎপাদিত পণ্য কানাডা, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন।

উৎপাদিত পণ্য প্রকারভেদে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কারিগর আরজুমান বলেন, তিনি ছয় মাস আগে থেকেই এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পান। এ টাকা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান। হাসি বেগম বলেন, এখানে কাজ করে বাড়তি আয় হচ্ছে। সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়েছে। কচুরিপানা বাদেও হোগলাপাতা, জলপাতা ও পাট থেকে হস্তশিল্প তৈরি হয় এখানে।


প্রতিষ্ঠানের স্বত্ব¡াধিকারী রেজাউল করিম বলেন, আমি ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। ভালো বেতনও পেতাম। চাকরি ছেড়ে দিয়ে হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে ২০০৬ সালে পায়রাবন্দে এই হস্তশিল্পের কারখানা করি। পায়রাবন্দ ও আশপাশের গ্রামের প্রায় ৩০০ নারী এই হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই হস্তশিল্প থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। দিনে গড়ে ৩০-৪০ মণ কাঁচা কচুরিপানা ক্রয় করেন তিনি। আবহাওয়া ভালো থাকলে সাত দিনের মধ্যে কচুরিপানা শুকিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির উপযোগী হয়। তবে বৃষ্টি-বাদল হলে কচুরিপানা পচে যায়। সেক্ষেত্রে লোকসানের বোঝা বইতে হয়। তিনি বলেন, এ কারখানা থেকে রাজধানীর দুটি, রংপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় বাজারে কিংবা খোলাবাজারে এসব পণ্য বিক্রি হয় না। এই তিন প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। প্রতি মাসে তিন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন তিনি। বছরে পৌনে ২ কোটি টাকার কারুপণ্য বিক্রি হচ্ছে এই পায়রাবন্দ থেকেই।


পায়রাবন্দের রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বললেন, রেজাউলের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসিত। এখানে অনেক নারী কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *