মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, সাম্যভিত্তিক সমাজ ও গণতন্ত্র

মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, সাম্যভিত্তিক সমাজ ও গণতন্ত্র

ডা. এম এ হাসান: মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং সর্বোপরি মুক্তির স্পৃহা মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতে জনমনে সংহতি নির্মাণ করেছিল। যে গুণাবলি দেশের জন্য শীর্ষ ত্যাগে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল, তার অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় স্বাধীনতার পরপর। এর একটি বড় কারণ হলো-যুদ্ধের সময়টাতে অর্থবিত্তের সঙ্গে শেকড়বিহীন জনগণের অবস্থান এবং ভৌগোলিক ভ‚মির চেয়ে মনোজাগতিক ভ‚মির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন। যে মঙ্গলময় চিন্তা ও আকাক্সক্ষা আপন আত্মার ক্ষুদ্র বলয়কে ছিন্ন করে ব্যক্তিকে সর্বজনীন আবর্তে নিয়ে গিয়েছিল, তা স্বাধীনতার পরপর যেমন ছিন্নপত্রের মতো ভেসে যায়, তেমনি বাস্তবতার চাপে, স্বার্থান্ধ চিন্তার আবর্তে ব্যক্তির শুদ্ধ অবস্থান ও মূল্যবোধ গভীর অতলে হারিয়ে যায়। বৃহত্তর চাওয়ার মাঝে যে ক্ষুদ্র চাওয়া এবং সংকীর্ণ চিন্তাগুলো চাপা পড়েছিল, সেটাই স্বাধীনতার পর মুখ্য হয়ে ওঠে। এতে গৌণ হয়ে ওঠে সর্বজনীন স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা। শক্তি ও ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের কাছে পরাভ‚ত হয় মানুষের অধিকার ও মর্যাদা; গৌণ হয়ে ওঠে শান্তির অন্বেষণ। যে আকাক্সক্ষাকে কেন্দ্র করে দর্শনের চিন্তাগুলো আবর্তিত হয়, তা ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারণে গঠনমূলক দর্শন সৃষ্টি অসম্ভব হয়ে ওঠে। এটা ঠিক, শূন্যতার মাঝে, নাস্তির মধ্যে দর্শনের বিকাশ হতে পারে-যেটা হয়েছিল ইউরোপে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। সেটি না হয়ে স্বাধীনতা-উত্তর সমাজে শূন্যতা, হতাশা, নৈরাজ্য ও ক্ষমতার ঔদ্ধত্য বা সংঘাত-সহিংসতার নেতিবাচক দর্শনের চর্চা শুরু হয়। পশ্চাৎপদ চিন্তা ও মনের শূন্যতা মৌলবাদী কর্মের পথকে সুগম করে দেয়। বিচারের প্রতি, জীবনের প্রতি এবং সামগ্রিক জীবনের ইতিবাচক প্রবাহের প্রতি আস্থা হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত জাতি কেবল আত্মপরিচয়ের সংকটে নয়, অস্তিত্ব সংকটেও নিমজ্জিত হয়। জীবনের সংগ্রাম এবং অসম প্রতিযোগিতায় নি¤œবর্গের মানুষ তেমনি সব হারিয়ে শেকড়ছাড়া, গৃহছাড়া অনিকেত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। যুদ্ধপথে বাস্তুহারা মানুষগুলো মিথ্যা শ্লাঘায় জগৎ নির্মাণ করে নানা অন্যায় ভ‚মিতে আপন সীমা অতিক্রম করে।


যে প্রেম ও মানবতা নানামুখী ভেদজ্ঞানকে নিম্ন পর্যায়ে এনে বেদনার বাঁধন মাঝে মানবসত্তাকে সমুজ্জ্বল করেছিল, সেই প্রত্যক্ষ বেদনা নিম্নস্তরে নেমে আসায় বহিরাগত শত্রু অলক্ষ্য ছায়ামানুষ হয়ে ওঠে, আর আপন মানুষগুলোই স্বার্থের টানাপোড়েনে নতুন শত্রু হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে যে নষ্ট চিন্তা, মৌলবাদী দর্শন এবং পশ্চাৎপদ চিন্তা অন্তরে ধারণ করে শত্রুপক্ষ বাঙালি নিধনে মত্ত হয়েছিল, গণহত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজে ব্যাপৃত হয়েছিল, সেই দর্শন ও ঘাতকের বাণীকেই অনেকে আপন করে নেয়। যে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় ঘাতক নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছিল, যে পৈশাচিক বিকারগ্রস্ত চিন্তাকে আপন করে নিয়ে বাঙালি নিধন কর্মকে সহজ করে নিয়েছিল, সেই কর্ম ও চিন্তাকে দেশের জনগণের একটি অংশ মনোজগতে আপন করে নিয়ে নিজ অস্তিত্ব ও ভাবনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নেয়। এতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে থাকা, এক রজ্জুতে বাঁধা মৃত্যুসঙ্গীর ধর্মীয় পরিচয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে। আর ওই সা¤প্রদায়িকতা ও ভেদজ্ঞানের আবর্তে হারিয়ে যায় মানুষের মানব পরিচয়। যে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একাত্তরে সমগ্র জাতিসত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তা আবারও দেওয়ালের ওপারে গহিন বনের বাসিন্দা হয়ে ওঠে, দেওয়াল উঠে যায় আমি, তুমি ও তাহাদের মাঝে। সেতুবন্ধ নির্মাণ হয় লুটেরার সঙ্গে লুটেরার, ভাগবাঁটোয়ারা হয় অবাঙালি সম্পত্তি ও হিন্দু সম্পত্তি এক আঁধারে রেখে। এ প্রক্রিয়ায় যে লুটেরা অর্থনীতির উদ্ভব হয়, তা বদলে দেয় সমাজ চিন্তা এবং রাষ্ট্রের দর্শন।

এ প্রক্রিয়ায় ভিটেছাড়া মানুষ, বিশেষ করে হিন্দু স¤প্রদায় যারা ভয়াবহ গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের কারণে ভারতমুখী হয়েছিলেন, তারা দেশে ফিরে আপন ভিটে বেদখল হতে দেখে বেদনাহত হয়ে ফিরে যান ভারতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র দেখেন তার ভিটেয় সরিষা ছিটিয়ে ঘুঘু চড়াচ্ছে এক প্রভাবশালী প্রতিবেশী-মুক্তিযুদ্ধে একটি গুলি না ছোড়া মুক্তিযোদ্ধা। আগস্ট মাসের শেষে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ৩৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা জেনে শঙ্কিত হয়েছেন। সেই সংখ্যাটি যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত ৫৫ হাজারে দাঁড়ায় ভারতের মাটিতে। এর বাইরে যারা ছিল তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের অনেকে দেশের মাঝে যুদ্ধের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র হাতিয়ে নিয়ে লুটপাট ও নারী নির্যাতন, বিশেষ করে হিন্দু নারী নির্যাতনে লিপ্ত হয়।

সব মিলিয়ে হিন্দু অভিবাসীদের মধ্যে যারা এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে নির্যাতিত হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, তাদের ওপর আঘাত আসে বেশি। নারীদের ওপর পাকিস্তানিদের আঘাত ওই সময়টাতে সবচেয়ে প্রবল ছিল। ’৭১-এ আগস্ট পর্যন্ত সময়টাতে ৬৯ লাখ অভিবাসীর মধ্যে কতজন ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তা অনুমেয়। তবে তাদের অধিকাংশই ফেরেননি ভারতের মাটি থেকে। আর ’৭১-এ যখন আমাদের নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, যুবারা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে, ঠিক ওই সময়টাতে কিছু কাপুরুষ যুদ্ধের তাপ এড়াতে ভারতে নানা ধরনের জীবন বাঁচানো কাজে সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান।

অন্যদিকে পাকিস্তানির মাটিতে কিছু নরাধম ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে পাকিস্তানের আনুগত্য স্বীকার করে তাদের সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণ শেষ করে মার্চ থেকে শুরু করে আগস্ট-সেপ্টেম্বর সময়টাতে। তারপর পাকিস্তান কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে তাদের এজেন্ডা পূরণের জন্য নভেম্বরের শুরুতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তাদের কেউ কেউ খেতাবও জুটিয়ে নেয়। বিষয়টি সহজ করতে যুদ্ধ এড়িয়ে আশ্চর্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী নূর শুরু থেকে জেনারেল ওসমানীর ছায়াতলে আশ্রয় নেয়।

ইতালীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ‘ঈশ্বর’ জোসেফ মাৎসিনিকে (এরঁংবঢ়ঢ়ব গধুুরহর, (১৮০৫-১৮৭২) সফলভাবে অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু দেশকে মানবতার ছোঁয়াসম্পন্ন উদার জাতীয়তাবাদে ঠেলে দেন। মাৎসিনি যেভাবে দেশকে প্রোটেকশনিজমে নিয়ে যান, তেমনি করে বঙ্গবন্ধু নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই ভ্রমাত্মকভাবে তাকে টোটালিটারিয়ান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

তার হত্যার পেছনে ছিল ঘাতক পাকিস্তান ও সেই পশ্চিমা দেশগুলো, যারা চিলির আলেন্দেকে হত্যা করে সেদেশে পিনোশে নামক সামরিক শাসককে বসিয়ে শুরু করে গণহত্যা। খলনায়ক সেই কিসিঞ্জার-যিনি শত বছর বেঁচে দেশে দেশে গণহত্যা ঘটিয়ে সেসব দেশের শাসনব্যবস্থা ওলট-পালট করেছেন নির্দ্বিধায়। ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে এদেশে শুরু হলো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি গ্রাসের প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে ঋণের নামে নানা ব্যাংক লুট, যা অব্যাহত রয়েছে অদ্যাবধি।

এসবের মাঝে সামগ্রিকভাবে মানুষের মর্যাদা, বিশেষ করে নারীর মর্যাদার অবনমন হয়, অন্যায় কাজে দ্বিধা সংকোচ লোপ পায়, চূড়ান্ত অবক্ষয় হয় মূল্যবোধের, অবক্ষয় হয় বিবেকের এবং শান্তি ও সমঝোতা সম্পর্কিত ধারণার। এতে আত্মপরিচয় নির্মাণে সংকট তৈরি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরের ঘাতক মৌলবাদীদের বিচার না হওয়ায় মৌলবাদের চূড়ান্ত বিকাশ হয় সামরিক শাসনের সময়। এ সময় ’৭১-এর ঘাতকরা দেশের রাজনীতিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে শক্ত অবস্থান করে নেয়।

এসবের মাঝে অ্যারিস্টটল ও প্লেটোর পলিসির সঙ্গে সম্পর্কবিহীন সমষ্টির শাসন এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ রাজনীতি অপসৃত হয় চিরতরে। গণতন্ত্র কোনো চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। এটা বোধ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর চর্চা শুরু হয় পরিবারের মধ্যে, তৃণমূলের সামষ্টিক স্বপ্ন ও অধিকারসংশ্লিষ্ট চাওয়া ও আকাঙক্ষানির্ভর সমাজ ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তথাকথিত যে গণতন্ত্র মানুষের মধ্যে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে, লুটেরা সংস্কৃতির বিকাশকে বেগবান করে, সমষ্টির শুদ্ধ চিন্তায় পচন ধরায়-তা অ্যারিস্টটলের সুন্দরতম স্বপ্ন ও গণতান্ত্রিক ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আঁধারময় এ শূন্যতার মাঝে, হতাশার মাঝে স্বাভাবিকভাবে নড়বড়ে হয়ে ওঠে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। এতে করে বিপন্ন মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে হাতড়ে বেড়ায় একটি আস্থার ভ‚মি, বিশ্বাসের ভ‚মি এবং আশার সুবর্ণরেখা। নানা অপ্রাপ্তিতে হতাশ হয়ে, ইহজাগতিক বিচার না পেয়ে মানুষ যুক্তির পথ ছেড়ে অদৃষ্টবাদিতা এবং নানা কুসংস্কারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়টাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনটাই ছিল সাধারণের মনের অবস্থা। যে ইতিবাচক ধর্মচিন্তা মানুষকে ইতিবাচক কাজে প্রণোদনা জোগায়, শুদ্ধ করে, সুন্দর করে-তাও নানা কারণে সঠিকভাবে কেলাসিত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

’৭১-এর স্বাধীনতার পরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়টাতে এটাই ছিল সত্য। সেই সময়টাতে কেউ ঘাড় ফিরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের দর্শনটাকে যাচাই করতে যায়নি। সুফিসাধকদের উত্থান, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামীদের বিদ্রোহ এবং বাউল জাগরণের পর থেকে সংস্কৃতির পথ ধরে ভাষাভিত্তিক সত্তা নির্মাণ যে সর্বজনীনতার আবহ সৃষ্টি করে, তার মাঝে ছাপার অক্ষরে লেখা যায় এমন কোনো দর্শন খুঁজে না পাওয়া গেলেও সাধারণের যাপিত জীবনে অলক্ষ্য, অনুচ্চারিত একটি দর্শনের ছোঁয়া ছিল। ওই দর্শনটি মানুষের অন্তরে নির্মাণ করেছিল সহমর্মিতা ও মর্যাদাবোধ। তাই তা মানুষের ক্রোধ ও ভেদজ্ঞান কমিয়ে মানুষকে করে তোলে সহনশীল। যে সা¤প্রদায়িক চিন্তার ওপর ভিত্তি করে ভারত বিভাগ হয়, তা নিতান্তই হয়ে ওঠে অতীত বর্জ্য বিষয়।

যুদ্ধের পর বাঙালির এ চিরন্তন দর্শনটি অপসৃত হয়। জাতি দ্র্রæত শুষে নেয় ঘাতকের চরিত্র ও দর্শন। সব ছাপিয়ে দৃশ্যমান হয় ভয়াবহ এক লুটেরা দর্শন। দেশে দুর্বল ও হিন্দুর ভ‚মিসহ নদীর ধার, খাসজমি, এমনকি নদীগুলো দখল করে এক লুটেরা সমাজ। কালক্রমে এরাই হয়ে ওঠে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক। ব্যাংকে সুরক্ষিত অর্থলুট বৈধ হয়ে ওঠে এদের জন্য।


মুক্তিযুদ্ধে ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি নারী নির্যাতিত হয়েছিল, যার ক্ষত সেরে ওঠার আগেই বেগবান হয়। সমাজের ভেতর চলে অকথিত নারী নির্যাতন। ঘরে ঘরে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন কোনো না কোনো সময় নির্যাতিত হয়। এই আমাদের স্বাধীনতা! অ্যালডাস হাক্সলে তার ‘এন্ডস অ্যান্ড মিন্স’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-যুদ্ধটা মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নয়। একটি ভালো রাষ্ট্র ও সমাজ তৈরি রুদ্ধ হয় যুদ্ধ দ্বারা বা যুদ্ধের পরিস্থিতির মধ্যে-এটাই সত্যি। লেখক মনে করেন, যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তা প্রতিরোধ অবশ্যকরণীয় হয়ে ওঠে।

তিনি বলেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরুটা হওয়ার কারণ নানাবিধ। এর মধ্যে একটি হলো জাতীয়তাবাদ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অসার গর্ব, ক্রোধ ও ঘৃণা উত্তেজক হিসাবে কাজ করে বলে এটি সহজভাবে ব্যবহৃত হয় রাজনীতিবিদ দ্বারা।

স্বাধীনোত্তর সময়ে এসব চিন্তা অন্তরে ধারণ করে স্টুয়ার্ট মিলের ‘লিবার্টি’ অনুসরণ করে আমাদের মুক্তি ও স্বাধীনতার অর্জনগুলোকে মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। মূল্যবোধ ও মোরালস্কে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। এটি কেবল আইন প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হয়তো সম্ভব ছিল না, তবে শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন এনে এটি প্রায়োগিক করা আজও সম্ভব। এ কাজটি সুচারুভাবে করতে না পারার কারণে জাতি আজ সংঘাত, সহিংসতা, অবিচার ও নিষ্ঠুরতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে প্রকৃত সাম্য, শান্তি ও সমঝোতার ভ‚মি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রাণের গভীরে প্রোথিত আকাক্সক্ষা, অন্তর্গত নানা চাওয়া, প্রেরণা, পরিবার ও সমাজের সামষ্টিক স্বপ্ন আমাদের মনন ও সত্তাকে নির্মাণ করে। আমাদের স্বপ্ন, আত্মপরিচয়ই চলার পথ নির্মাণ করে। এ আত্মপরিচয়বোধ আজ নষ্ট পথে পরিচালিত। বিশ্বজগৎ সম্পর্কিত আমাদের ধারণা এবং আমাদের দর্শনই আমাদের চালিয়ে নেয়। আমরা তা-ই হয়ে উঠি-যা আমরা ভাবি এবং স্বপ্ন দেখি।
লেখক: চেয়ারপারসন, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, বাংলাদেশ

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *