আদর্শ মায়ের গুণাবলি

আদর্শ মায়ের গুণাবলি

নারী ডেস্ক: জীবন সংসারে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মায়ের অসীম ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে বেড়ে ওঠে সন্তান। মায়ের কষ্টের কথা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, ‘তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভধারণ করেছে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত ১৪) প্রত্যেক নারী মা হওয়ার সৌভাগ্য পেলেও সবাই আদর্শ মা হন না।
পবিত্র কুরআন-হাদিসের আয়নায় আদর্শ মায়ের কিছু গুণ উল্লেখ করা হলো।
সন্তানকে দুধ পান করা: সন্তান জন্মের পর মায়ের প্রথম দায়িত্ব সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো। এটা মায়ের ওপর ওয়াজিব। বুকের দুধ পান করার মাধ্যমে শিশু শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ ২ বছর স্তন্যদান করবে, যদি দুধ খাওয়ার মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩৩) তবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দুধ পান করাতে হয়। শরিয়তের সীমা অতিক্রম করে দুধ পান করানো জায়েজ নেই।
কালেমা শিক্ষা দেওয়া: সাধারণত জীবিকার তাগিদে পুরুষরা বাইরে বাইরে ছুটে বেড়ান।
বিভিন্ন পেশায় ব্যস্ত থাকেন। এজন্য সন্তানের লালন-পালন, শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের প্রধান ভূমিকা থাকতে হয়। সন্তান কথা বলা আরম্ভ করলে সালাম-কালাম ও কালেমা শেখাতে হয়। ইব্রাহীম আততাইমি (রহ.) বলেন, সাহাবিরা শিশু কথা বলা শিখলেই তাকে কালেমার তালকিন করতেন (মুখে মুখে বলা শেখাতেন), যাতে শিশুর প্রথম কথা হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস : ৩৫১৯)
নামাজের অভ্যাস করা: সন্তানকে নামাজের অভ্যাস পরিবার থেকে প্রথম শুরু করতে হয়। নামাজের ওয়াক্ত হলেই মায়ের কর্তব্য ছেলেসন্তানকে সাজিয়ে-গুছিয়ে স্বামী বা মুরব্বিদের সঙ্গে মসজিদে পাঠিয়ে দেওয়া। আর কন্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করা। এতে সন্তান নামাজের প্রতি আকৃষ্ট হবে। আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমরা নিজ সন্তানদের সাত বছর বয়স থেকে নামাজের নির্দেশ দাও। আর ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের প্রহার করো এবং বিছানা পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৫)
কুরআন শিক্ষা দেওয়া: সন্তান ছেলে-মেয়ে যাই হোক না কেন, সবার জন্য কুরআন শিক্ষা করা আবশ্যক। ছোট থেকেই তাদের কুরআন শেখানোর বিষয়ে মাকে তৎপর থাকতে হয়। সন্তান কুরআন তিলাওয়াতের কারণে মাতা-পিতার সম্মান বেড়ে যায়। মুয়াজ জুহানি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদানুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে নুরের টুপি পড়ানো হবে। যদি সূর্য তোমাদের গৃহে প্রবেশ করত তাহলে ওই সূর্যের আলো অপেক্ষাও ওই টুপির আলো উজ্জ্বলতর হবে। এখন তোমরা চিন্তা করো, যে ব্যক্তি কুরআনের নির্দেশ অনুসারে আমল করে তার মর্যাদার অবস্থা কত উত্তম হবে? (আবু দাউদ, হাদিস ১৪৫২)
উত্তম পরিবেশ তৈরি করা: প্রত্যেকটি সন্তান পরিবেশ দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। উত্তম পরিবেশ আকাশ থেকে নেমে আসে না। একজন আদর্শ মাকেই তৈরি করে নিতে হয়। সন্তানকে মিথ্যা কথা বলা কিংবা মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমার আম্মা আমাকে কিছু একটা দেবেন বলে কাছে ডাকলেন। হযরত রাসুল (সা.) তখন আমাদের বাড়িতে বসে ছিলেন। তিনি আমার আম্মাকে বলেন, তুমি কি সত্যিই তাকে কিছু দেবে? আম্মা বলেন, হ্যাঁ তাকে খেজুর দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার এ কথাটি মিথ্যা বলে গণ্য হতো। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৯১)
পরকালের কাঠগড়ায় আসামি: একজন মা তাঁর স্বামী ও সন্তানের বিষয়ে দায়িত্বশীল। নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে আছে পুরস্কার আর অবহেলায় রয়েছে শাস্তি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকে নিজ অধীনদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার-পরিজনদের দায়িত্বশীল। কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল। কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি, হাদিস ২৫৫৪; মুসলিম, হাদিস ৪৮২৮)

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *