বালুকণার চেয়েও বেশি জীবকোষ

বালুকণার চেয়েও বেশি জীবকোষ

সাব্বির খান: শহরে কাকের সংখ্যা নিয়ে সরস গল্প-কৌতুকের শেষ নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটির উৎস নিঃসন্দেহে সম্রাট আকবর আর তাঁর সুরসিক সভাসদ বীরবলের কথোপকথন। কাকের সংখ্যা নিয়ে বীরবলের কাহিনিটি নিতান্তই গল্প হওয়া অসম্ভব নয়, তবে পৃথিবীতে জীবিত কোষের সংখ্যা নিয়ে যে খবর পাওয়া গেল তা নিরেট গবেষণালব্ধ তথ্য। তবে সংখ্যাটি অবিশ্বাস্য রকম বড় বলে অনুমান আর সত্যিকারের সংখ্যার মধ্যে ব্যবধানও হয়তো হয়ে যাবে বিশাল।
সে অন্য কথা। অকল্পনীয় রকম সেই সংখ্যা নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় আসা যাক। এতে বলা হয়েছে, সারা পৃথিবীতে যতগুলো বালুর কণা রয়েছে বা মহাকাশে যতগুলো নক্ষত্র রয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে জীবকোষ। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘কারেন্ট বায়োলজিতে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় এমনটাই বলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাঁদের হিসাব বলছে, বর্তমানে পৃথিবীতে এক মিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন জীবিত কোষ রয়েছে। সংখ্যাটি এত বড় যে তা লিখতে ১-এর পরে ৩০টি শূন্য বসাতে হবে! অর্থাৎ মানুষের মাথা এই সংখ্যা গুনে বা ভেবে কুলাতে পারবে না। অন্যদিকে পৃথিবীতে মোট বালুর দানার সংখ্যা গণনা করা হয়েছে ৭.৫ বিলিয়ন বিলিয়ন, যা লিখতেও ৭-এর পর প্রায় ২০টি শূন্য লিখতে হয়। অতি বিশাল সংখ্যা নিঃসন্দেহে! তবুও জীবকোষের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম।
এমনকি ২০০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন সংখ্যা নিয়েও মহাবিশ্বের নক্ষত্রেরা ২-এর পরে ২৩টি শূন্য। অর্থাৎ ৩০ শূন্যওয়ালা জীবকোষের কাছে সংখ্যার দৌড়ে অনেক পিছিয়ে। জীবের কোষ অত্যন্ত ছোট একটি একক, যা কেবল অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায়। এখন অনেকেই ভাবতে পারেন, গবেষকরা কিভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে জীবকোষের এই সংখ্যার হিসাব পেলেন। নক্ষত্র গণনার ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত হওয়া গবেষণার ভিত্তিতে মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সম্ভাব্য সংখ্যা ২ ট্রিলিয়ন (এক ট্রিলিয়ন হচ্ছে এক লাখ কোটি) ধরা হয়েছে এবং প্রতিটি গ্যালাক্সিতে আবার তারার সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন হচ্ছে ১০০ কোটি) করে ধরা হয়েছে।
বালুকণার সম্ভাব্য সংখ্যা নির্ধারণ করতে পৃথিবীর নানান মরুভূমি, সমুদ্রসৈকতসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বালু সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত নমুনাগুলোর বালুর দানা গণনা করা হয়েছে। নমুনার আকার থেকে স্পষ্ট গড় হিসাব পাওয়া গেছে যে কতটুকু জায়গায় কতটি দানা ধরতে পারে। তারপর পৃথিবীর আয়তনের মধ্যে বালুর উপস্থিতি হিসাব করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই পাওয়া গেছে সম্ভাব্য মোট বালুকণার সংখ্যা।
এবার আসা যাক জীবকোষ গণনার বিষয়ে। কোষের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে তার একটি বড় অংশ আণুবীক্ষণিক অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র জীবের কোষ। এক্ষেত্রে এরই মধ্যে জানা তথ্যের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়ার কথা বলা হয়েছে, যার কোষ গণনা করা হয়েছে। দেখা গেছে, ‘সায়ানোব্যাকটেরিয়ার’ (দৈনন্দিন জীবনে ‘নীল-সবুজ শৈবালও’ বলা হয়) সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। এটি অত্যন্ত দ্রুত বংশবিস্তার করতে সক্ষম। প্রসঙ্গত, এগুলোই পৃথিবীর প্রথম জীব, যারা সালোকসংশ্লেষণের বিকাশ ঘটিয়েছে এবং সূর্যালোকের সাহায্য নিয়ে অক্সিজেন তৈরি করেছে। ২৪০ কোটি বছর আগে এ প্রক্রিয়াটি হঠাৎ করে ত্বরান্বিত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এটি সম্ভবত পৃথিবীতে প্রাণের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ছাড়া বর্তমান পৃথিবীর কথা ভাবাই সম্ভব নয়। প্রাণের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য এ প্রক্রিয়া বিপুল পরিমাণে কোষ উৎপাদনে সক্ষম। অক্সিজেন তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীতে কোষের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বিপর্যয়ে ব্যাপকভাবে বিলুপ্তও হয়েছে।
কানাডার অটোয়ায় অবস্থিত কার্লটন ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানী পিটার ক্রকফোর্ডের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ গবেষণাটি চালিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে উৎপাদিত হয়েছে আরো বহু বহু গুণ বেশি কোষ।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *