মানসিক রোগের ভয়াবহতা বাড়ছে

মানসিক রোগের ভয়াবহতা বাড়ছে

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ‘জীবনের কাছে হার মেনে গেলাম। আমি আর পারলাম না।’ ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র সোহাগ খন্দকার। হতাশা, বিষণ্ণতা, অবসাদ, সমাজমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার, ইন্টারনেট আসক্তি থেকে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে মানসিক রোগী। পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষার গণ্ডি পেরিয়ে তুচ্ছ কারণে খুনোখুনিতে জড়াচ্ছে মানুষ।


সর্বশেষ জাতীয় জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব পড়েছে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সংকটে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা।


বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০০৩-০৫-এর তথ্য অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ১৬ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। সেই হিসেবে ওই সময়ে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মধ্যে মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৩১৯ জন। এরপর সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ১০৫। সর্বশেষ জরিপে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ১৭ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে জানা গেছে। সে হিসেবে মানসিক রোগে আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৪ হাজার ১৫৭ জন। এসব ব্যক্তির ৯২ শতাংশ চিকিৎসকের পরামর্শ কিংবা সেবা নেয় না। জরিপে জানা যায়, ১৮ শতাংশ শিশুকিশোরের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। তার ৯৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসা নেয় না। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২.২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায় তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। ইন্টারনেটকে পুরোপুরি দায়ী মনে করে ২৬.১ শতাংশ এবং মোটামুটি দায়ী ভাবে ৫৯.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ৫১.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সমাজমাধ্যমে নিজেকে অন্যদের তুলনায় খুব সংকীর্ণ, অযোগ্য, ব্যর্থ বা অসুখী মনে করে। সমাজমাধ্যমের কার্যক্রম ২১.৭ শতাংশের ভিতর রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছে তৈরি করে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের আত্মহত্যা প্রবণতা আশঙ্কা তৈরি করছে অভিভাবকদের মধ্যে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চারদিকের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ থেকে এবং আমাদের রোগী দেখার অভিজ্ঞতায় বলছি, মানসিক রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। নতুন ধরনের জীবনধারায় মানসিক ভারসাম্য হারানোর উপাদান বেড়ে যাচ্ছে। জীবিকার সংকট, ভয়, আতঙ্ক, চোখের সামনে বীভৎস মৃত্যু দেখা, নৃশংসতা আমাদের মানসিক রোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানসিক সমস্যা বাড়ছে। মানুষের সহ্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে, পারিবারিক সহিংসতা বহুগুণ বেড়েছে। দেশে এলএসডির মতো মাদক সেবন চলছে, মাদকাসক্ত হচ্ছে মানুষ, আত্মহত্যা বাড়ছে। সন্তানকে হত্যা করছে, স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে, মানুষকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করছে। এ রকম ঘটনা আগেও ঘটত কিন্তু ইদানীং আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *