নিজস্ব বাসস্থান নেই রাজধানীর ৮০ শতাংশ মানুষের

নিজস্ব বাসস্থান নেই রাজধানীর ৮০ শতাংশ মানুষের


দেওয়ানবাগ ডেস্ক: শফিকুল শাহিন রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। থাকেন আফতাবনগরের ছোটখাটো একটি ভাড়া বাসায়। দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি জীবনেও ঢাকায় নিজের স্থায়ী আবাসন করতে পারেননি তিনি। এই শহরে তার স্বপ্নের একটি আবাসস্থল তৈরির স্বপ্ন আর দেখতে চান না ৪৫-ঊর্ধŸ শাহিন। কারণ যে টাকা বেতন পান দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার চালাতে শেষ হয়ে যায়। আর মাসিক আয়ের বেশিরভাগই তুলে দিতে হয় বাড়িওয়ালার হাতে। তবে নতুন ড্যাপে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটাকে ভালো উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
শুধু শফিকুল শাহিন নয়, রাজধানীর চাকরিজীবী মানুষের চিত্রটা এমনই। রাজধানীর কত মানুষের নিজের বাসস্থান নেই-এর সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বাস করেন। বাকি ৮০ শতাংশ মানুষের নিজের ঘর নেই অর্থাৎ ভাড়ায় থাকেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে ফ্ল্যাট নির্মাণ হলেও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকছে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের। রাজধানীর বাড়ি বা ফ্ল্যাটগুলোর বেশিরভাগেরই মালিক অবস্থাসম্পন্ন মানুষ। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এই সুবিধা কমই থাকছে। তাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বাস্তবায়ন হার খুবই কম। ফলে নিয়ম করে আরও একটি বিশ্ব বসতি দিবস হাজির হলেও এসব মানুষের আবাসন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
গত ২ অক্টোবর ছিল বিশ্ব বসতি দিবস। ১৯৮৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ অধিদফতর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) আবাসন খাতের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, জমি ও গৃহ নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, বাড়ি ভাড়ার হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত নাগরিক সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আবাসন সমস্যা জটিল হয়ে উঠছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্নভাবে আবাসনের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও সেখানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ঠাঁই পাচ্ছে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আবাসনের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনা দরকার। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আবাসন মানুষের মৌলিক চাহিদা। কিন্তু ঢাকা শহরে ৮০ শতাংশ মানুষের নিজস্ব কোনো আবাসন নেই। কারণ সরকারি বা বেসরকারিভাবে আবাসন প্রকল্প হলেও নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য সেভাবে কিছু হচ্ছে না। বরং আবাসন এখন বৈষম্য তৈরি করছে। শুধু উঁচু শ্রেণি মানুষের জন্য সরকার বা বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানরা ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। যেখানে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য নেই। এই নগর বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, নতুন ড্যাপে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে এটাকে কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি বিভিন্ন আবাসনে কিছু ফ্ল্যাট তাদের জন্য করতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে মানুষের নিজস্ব বাসস্থানের চাহিদা পূরণ হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল কিছু এলাকায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য ভূমির ব্যবস্থা করে দেওয়া। সেখানে ভূমির মালিকানা পাওয়া এসব মানুষ নিজের মতো করে বা কোনো ডেভেলপারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভবন নির্মাণ করতে পারবে। কিন্তু সরকার সেখান থেকে সরে গেছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা ১১৯টি। এসব বস্তিতে সরকারি হিসাবে বসবাসকারী সংখ্যা ৮ লাখ আর বেসরকারিভাবে ৩৫-৪০ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে।
এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীবাসীর আবাসন চাহিদা পূরণে উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পের মাধ্যমে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে ১ লাখ আবাসিক ইউনিট নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে নতুন ড্যাপ অনুযায়ী সাশ্রয়ী আবাসনে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সাশ্রয়ী আবাসনে দশমিক ৭৫ ফার প্রণোদনা রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ড্যাপ এলাকায় সম্ভাব্য ৫৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের জন্য আবাসনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *