দেওয়ানবাগ ডেস্ক: গত ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাংলার মানুষের জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও আবেগঘন দিন। বাংলার ৩০ লাখের বেশি শহিদ আর লাখো মায়ের সম্ভ্রমের সঙ্গে মিশে আছে স্বাধীনতার ইতিহাস, বিজয়ের আনন্দ। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলার শোষিত মানুষ পেয়েছিল বিজয়ের আনন্দ, নিজের ভূখণ্ড। অবসান ঘটেছিল ২৪ বছরের পাকিস্তানি জান্তাদের দুঃশাসন। শোষণের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত বাঙালি স্বাধীন দেশে মুক্তির স্বাদ নিয়েছিল প্রথমবার।
একাত্তরের এই দিনটিতে বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে ধাপে ধাপে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করেছিলেন। তার নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার আপামর জনসাধারণ। ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা। বিজয়ের এইদিনে শপথ নেওয়া হয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার। শপথ নেওয়া হয় দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথে বাধাদানকারীদের সমূলে উচ্ছেদ করার। দেশ ও দেশের মানুষের অগ্রযাত্রা আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা থাকবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
একাত্তরের এই দিনে ৯২ হাজার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই বিজয়ের আনন্দে বাংলার মানুষ ভাসছে। ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। লাখো মানুষের মিলনমেলা হয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। মহান বিজয় দিবস-২০২৩ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোকে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।
মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।