অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২০%

অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২০%

বাণিজ্য ডেস্ক: দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে অপ্রলিত বাজারে। সদ্যোবিদায়ি ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষ (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) অনুসারে এ সময় রপ্তানি আয় বেড়েছে ২০.৫৪ শতাংশ। এমনকি যুদ্ধ চলাকালেও পোশাকের অপ্রচলিত বাজার রাশিয়ায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.১৩ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ২০২২ সালে আয় ছিল ৪২ কোটি ৩২ লাখ ডলার।


রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুসারে জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে আয় হয়েছে ৮৮৭ কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০২২ সালের একই সময়ে আয় ছিল ৭৩৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার। অন্যদিকে পোশাক খাতের প্রচলিত বাজারে ইউরোপে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১.৪৯ শতাংশ।

অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে আয় কমেছে ৮.৬৮ শতাংশ। ইউরোপে এ সময় আয় হয়েছে দুই হাজার ৩৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৮২৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া দেশের পোশাক রপ্তানির তৃতীয় শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাজ্যে এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৪৬ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৫৩৪ কোটি ডলার ৪০ লাখ ডলার। এর আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। এদিকে অপ্রলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপানে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.৫৩ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ১৬৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া ও চায়নায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং রূপান্তরের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া নতুন নতুন পণ্য সংযোজন, ব্র্যান্ডিং ইতিবাচক রপ্তানিতে সহায়কের ভূমিকা রাখছে।

নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘৫০ শতাংশ কম সক্ষমতা নিয়ে কারখানা চালাতে হয়। এ সময় প্রবৃদ্ধি একটা বিস্ময়! এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবেও প্রচলিত বাজারগুলোতে মন্দার প্রভাব পড়েছে।’

রেকর্ড ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন
সিলেট সংবাদদাতা: ২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি চা-বাগান থেকে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উত্পন্ন হয়। যা বাংলাদেশে চা চাষের ১৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন। এর মধ্যে সিলেটেই রয়েছে ১৩৬টি চা-বাগান। দেশে চায়ের উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনি ছাড়া চা-বাগান থেকে। এদিকে সিলেটে রেকর্ড ভঙ্গ করে বর্তমান সময়ে চা উৎপাদনে সংশ্লিষ্টরা মহাখুশি। তাই তারা মনে করেন এখন চা রপ্তানি জোরদার করা দরকার।

সূত্র জানায়, বাগানগুলোর আয়তন এরই মধ্যে আড়াই শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সব মিলিয়েই এই ইতিবাচক ফল পাওয়ার পেছনে রয়েছে সুষম আবহাওয়া, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, পুরোনো গাছ সরিয়ে নতুন চারা রোপণ করায় বেশি পরিমাণ চা উত্পাদিত হয়েছে। বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুল রহমান উৎপাদনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘উৎপাদনের পাশাপাশি উৎপাদকরা যাতে চায়ের ভালো দাম পান সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’ তবে চা-বাগান মালিকরা মনে করেন, সিন্ডিকেটের কারণে তারা ইপ্সিত মূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে যদিও চায়ের কেজি ২০০-৩০০ টাকা। কিন্তু তারা সর্বোচ্চ ১৮৫ টাকায় বিক্রি করেন। তারা বলেন, এই সিন্ডিকেট না ভাঙলে চা উৎপাদনের ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক।


একটি সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোনো কোনো বাগানমালিকরা তাদের বাগানে ‘লুজিং’ দেখিয়ে অন্যরকম ‘সখ্য’ রয়েছে। তাই সিন্ডিকেট শক্তিশালী। অবশ্য এই বিষয়ে সরকারও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যে সব বাগান লোকসান গুনবে সে সব বাগান ব্যাংক লোনসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে থাকবে।

অন্যদিকে চা-বোর্ড সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে। ২০২৩ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। সেই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো ৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২১ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০২২ সালে ১০ কোটি কেজি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদিত হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি।
বাংলাদেশ চা-বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সবার সমন্বিত চেষ্টার ফলে এবার সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে বাগানমালিক, শ্রমিক, চা-বোর্ডের কর্মকর্তাদের জন্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, বাগানগুলোতে পুরোনো চা-গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগানোয় নজর দেওয়া হয়েছে। বাজারে অবৈধ পথে আসা চা যাতে ঢুকতে না পারে, বাগানমালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থও যাতে সুরক্ষিত হয়, সে সব দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সমতলে চা চাষের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। বিনা মূল্যে চারা ও মেশিনারিজ বিতরণ করা হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চল ও সমতলেও চা চাষের পরিমাণ বেড়েছে।

২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়াসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশের চা উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক কম ছিল। ইদানীং চা-বোর্ডের নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চা উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। একই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের সমতল এলাকার বাগানগুলোতেও চা উৎপাদন বাড়তে থাকে। আধুনিক সেচ ব্যবস্থা, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, চা বিপণনে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিও উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *