অপরিণত শিশুমৃত্যু এক দশকে দ্বিগুণ

অপরিণত শিশুমৃত্যু এক দশকে দ্বিগুণ

শিমুল মাহমুদ: দেশে বর্তমানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর ঘটনা প্রতি হাজারে ৩১ জন। সবচেয়ে বেশি ২৪ শতাংশের মৃত্যু নিউমোনিয়ায়। এ ছাড়া কম ওজনের কারণে অপরিণত শিশুর মৃত্যুহার ২২.২৫ শতাংশ। জন্মের সময় শ্বাসকষ্টের কারণে মারা যায় ১২ শতাংশ।
জন্মের সময় আঘাত পেয়ে, পানিতে ডুবে ও ডায়রিয়াসহ অন্যান্য কারণে ৪২ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়।
২০২২ সালের সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে জন্মের সময় কম ওজনের কারণে অপরিণত শিশুর মৃত্যুহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার ৪ শতাংশ কমলেও গত পাঁচ বছরে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলতি বছর এই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করতে হলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু প্রতি হাজারে ৩১ থেকে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। জন্মের সময় কম ওজনের কারণে অপরিণত শিশুর মৃত্যু প্রতি হাজারে ২২ থেকে ১২ জনে আনতে হবে। এ জন্য সরকার থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।
ছোট উদ্যোগ নিয়ে বড় পরিবর্তন সম্ভব নয়
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০১৭ সালে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার অনেকটাই কমে আসে।
২০১৭ থেকে ২০২২ সালে পর্যন্ত আর কমতে দেখছি না। এর কারণ হলো, গত পাঁচ বছরে নিউমোনিয়া ব্যবস্থাপনার সার্বিক অগ্রগতি তেমন ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো উদ্যোগ আলাদা করে চোখে পড়েনি, যার মাধ্যমে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার আরো কমিয়ে আনা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘নিউমোনিয়া কমাতে প্রয়োজন নতুন উদ্যোগ ও টিকা। গত পাঁচ বছরে আমাদের দেশে নতুন কোনো টিকা ব্যবহার শুরু হয়নি।
বায়ুদূষণ ও অপুষ্টির মাত্রা কমিয়ে আনা জরুরি। কিন্তু সেটা গত পাঁচ বছরে আরো বেড়েছে। এ জন্য বড় উদ্যোগ দরকার। ছোটখাটো উদ্যোগ নিয়ে আর পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
দেশে অপরিণত শিশুর জন্ম এবং কম ওজনের শিশু জন্মের সংখ্যা বেড়েছে। এ জন্য মৃত্যুর হারও বাড়ছে বলে মনে করেন ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে সরকার দেশে প্রায় ৪০০ ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) খুলেছে। জন্মের পর অপরিণত শিশুর মৃত্যু রোধে মূলত এসব সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিয়ম হলো, শিশুকে মা বা আপনজনদের বুকের চামড়ার সংস্পর্শে রাখতে হবে। এটা পাঁচ থেকে সাত দিন করতে হয়। সমস্যা হলো ৪০০ কেয়ারের একটিতেও এক দিনের বেশি রোগীকে রাখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শয্যা ফাঁকা থাকে। এ জন্য যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।
এক দশকে মৃত্যু কমেছে ৩৫%
জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য মতে, দেশে ২০১১ সালে পাঁচ বছরের কম প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে মৃত্যু ৪৮ জনের। এটি ২০১৪ সালে কমে হয়েছে ৪৭ জন। ২০১৭-১৮ সালে ৪৩ জন। সর্বশেষ ২০২২ সালে ৩১ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিওন্যাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমানে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু প্রতি হাজারে ৩১ জনের মৃত্যু হয়। প্রতি হাজারে ২০ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার অপরিণত শিশু জন্ম নেয়, যা ১৯.১ শতাংশ। এই অপরিণত শিশু ও অল্প ওজনের শিশুর মৃত্যুহার ২২ শতাংশ। বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে শিশুর মৃত্যু প্রতি হাজারে ৩১ থেকে ২৫ জনে, নিওন্যাটাল মৃত্যু প্রতি হাজারে ২০ থেকে ১২ জনে নামাতে হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *