অজুতে প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়ার রহস্য

অজুতে প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়ার রহস্য

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা: শরিয়তের বিধান অনুসারে অজুর অঙ্গগুলো একবার ধোয়া ফরজ এবং তিনবার ধোয়া সুন্নত বা মুস্তাহাব। একাধিক হাদিসে অজু করার সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধুতে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুর অঙ্গগুলো তিন তিনবার ধোয়ার পর বলেন, এটা আমার অজু, আমার পূর্ববর্তী নবিদের অজু এবং আল্লাহর খলিল ইবরাহিম (আ.)-এর অজু। (ইহয়াউ উলুমিদ্দিন : ১/২৫৫)
প্রশ্ন হলো, ইসলাম অজুর সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দিলো কেন? নিম্নে এ প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরা হলো।
‘তিন’ ভারসাম্যপূর্ণ সংখ্যা
সংখ্যা হিসেবে ‘তিন’ মধ্যবর্তী ও ভারসাম্যপূর্ণ। এতে না আছে কষ্ট এবং না আছে অপচয়। তিনবার করলে সাধারণত যে কোনো বিষয় পূর্ণতা লাভ করে। এজন্য ইসলামি শরিয়তের বহু বিধানে তিনবার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যার মধ্যে আছে দোয়া ও জিকির, পানাহারের শিষ্টাচার, রুকু-সিজদার তাসবিহ ইত্যাদি।
অজুতে তিনবার ধোয়ার রহস্য
আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) এর দুটি কারণ তুলে ধরেছেন। তা হলো-
১. অজুতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়া তাওবার অনুরূপ। কেননা এর মাধ্যমে বান্দার পাপ মোচন হয়।
আর তাওবার মূল অংশ তিনটি- ক. অতীতের গুনাহ ত্যাগ করা, খ. অতীতের গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া, গ. ভবিষ্যতে গুনাহ পরিহারের দৃঢ় প্রত্যয়। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়ার মাধ্যমে বান্দা তাওবার তিনটি অংশ সম্পন্ন করে।
২. প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা তিনবারের কম ধুলে তার প্রভাব অন্তরে পড়ে না এবং বেশি ধুলে তা হয় অপচয়। এজন্য আল্লাহ তিন সংখ্যার মাধ্যমে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
(যুক্তির আলোকে শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা ১৯)
৩. কোনো কোনো দার্শনিক আলেম বলেন, আল্লাহ বেজোড় এবং তিনি বেজোড় সংখ্যাকে পছন্দ করেন। আর এজন্য সিজদায় ৩ বার বা ৫ বার অথবা ৭ বার তাসবিহ পাঠ করতে বলা হয়। আর বহুবচনের ভেতর ‘তিন’ সংখ্যাটিই প্রথম বেজোড়। অর্থাৎ বেজোড় ও বহুবচনের সমন্বয় সাধনের জন্য অজুর অঙ্গ তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেন অঙ্গগুলো ভালোভাবে ধোয়া হয় এবং সংখ্যাটিও আল্লাহর প্রিয় হয়। এর বিপরীতে একবার ধুলে অপূর্ণতার ভয় থাকে আর দুবার ধুলে তা বিজোড় হয় না। (আসরারুল ইবাদাহ, পৃষ্ঠা ২৫)
আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে অজু করার তাওফিক দিন। আমিন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *