১০ ধরনের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

১০ ধরনের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ফলে দেশে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবোকনের অনুমিত তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ ধরনের ক্যানসার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ ধরনের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। রোগটি মানবদেহের সব অঙ্গেই হচ্ছে। তবে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সবশেষ ক্যানসার নিবন্ধন তথ্য বলছে-দেশে পুরুষের ফুসফুস, নারীর স্তন ক্যানসার বেশি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাস ক্যানসারের একটি বড় কারণ। ধূমপানসহ নানা অভ্যাসের কারণে অনেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখা উচিত। পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নীতিনির্ধারকদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পৃথক লিঙ্গ ও বয়সকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন বয়সে কোন ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, সেটিও দেখতে হবে।

রাজধানীর ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সপ্তম ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ হয় সাত ডিসেম্বর। এ গবেষণা সম্পর্কে ইনস্টিটিউটের এপিডেমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ক্যানসার হাসপাতালে আসা রোগীদের ৫৫ শতাংশই নারী। বাকি ৪৫ শতাংশ পুরুষ। পুরুষদের মধ্যে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। আর নারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ স্তন ক্যানসারের রোগী। অর্থাৎ লিঙ্গভেদে পুরুষদের ফুসফুস ও নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

২০১৮-২০২০ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন বছরে জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী সেবা নেওয়ার জন্য এসেছেন। যাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৩৩ (৪২ দশমিক ৬ শতাংশ) জনের চূড়ান্ত কিংবা প্রাথমিকভাবে ক্যানসার হিসেবে রোগ নির্ণয় হয়েছে। তাদের রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিবন্ধিত রোগীদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫ শতাংশ) পুরুষ ও ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫ শতাংশ) নারী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জাতীয়ভাবে একবার জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণা করেছিল, এরপর আর হয়নি। এটি হওয়া জরুরি। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটা নিয়েই প্রশ্ন।

তিনি বলেন, একটি গবেষণায় রোগীর ডায়াগনোসিস থেকে শুরু করে তার অবস্থা কোন পর্যায়ে, কোথায় গিয়ে থামতে পারে সব থাকে। যেটি অনেক বেশি কঠিন। কারণ ডায়াগনোসিস ও সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

সেন্টার ফর ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিসিপিআর) উপদেষ্টা ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা হাসপাতালের এপিওিমোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ক্যানসার রোগীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সুনির্দিষ্ট নিয়মে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করার পুরো ব্যবস্থার নাম ক্যানসার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন। সাধারণত হাসপাতালভিত্তিক ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক দুই ধরনের ক্যানসার নিবন্ধন হয়।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় বেশি ব্যয় হয়ে থাকে। কাজেই রাষ্ট্রের এই জায়গায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়েছে, কিন্তু দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত না হওয়ায় রোগটির চিকিৎসা এখনো পিছিয়ে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *