হাউজে কাউসারের পানি যেমন হবে

হাউজে কাউসারের পানি যেমন হবে

‘কাউসার’ হলো জান্নাতের একটি ঝরনার নাম। যার পানি হবে মিশকের মতো সুগন্ধি। দুই ধারে থাকবে মুক্তার গম্বুজ। এই ঝরনাটি মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্দু মুহাম্মদ (সা.)-কে উপহার দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক ঝরনার কাছে এলে দেখি যে তার দুই ধারে ফাঁপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরিল! এটা কী? তিনি বলেন, এটা ওই কাউসার, যা আপনার প্রতিপালক আপনাকে দান করেছেন। (বুখারি, হাদিস- ৬৫৮১)
আরেকটি হাদিসে হাউজে কাউসারের পানির কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)। তিনি বলেন, নবি (সা.) বলেছেন, আমার হাউজের প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা, তার ঘ্রাণ মিশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলো হবে আকাশের তারকার মতো অধিক। তা থেকে যে পান করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭৯)
‘কাউসার’ নামে পবিত্র কোরআনে একটি সুরা আছে। এই সুরাটিকে কাউসার নাম দেওয়ার কারণ হলো এর শুরুটা হয়েছে কাউসারের সুসংবাদ দিয়ে। যখন এই সুরা অবতীর্ণ হয়, তখন নবিজি (সা.) এই বিশেষ ঝরনার সুসংবাদ পেয়ে মুচকি হেসেছিলেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মজলিশে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তাঁর ওপর অচৈতন্য ভাব চেপে বসল। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে মাথা তুললেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বলেন, এই মাত্র আমার ওপর একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি পাঠ করলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে ‘কাউসার’ দান করেছি। অতএব, তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো এবং কোরবানি দাও। তোমার কুৎসা রটনাকারীরাই মূলত (আবতার) শিকড় কাটা, নির্মূল। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা কি জানো ‘কাউসার’ কী? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বলেন, এটি একটি ঝরনা। আমার মহান প্রতিপালক আমাকে তা দেওয়ার জন্য ওয়াদা করেছেন। এর মধ্যে অশেষ কল্যাণ রয়েছে, আমার উম্মতরা কিয়ামতের দিন এই হাউজের পানি পান করতে আসবে। এই হাউজে রয়েছে তারকার মতো অসংখ্য পানপাত্র (গ¬াস)। এক ব্যক্তিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি তখন বলব, প্রভু! সে আমার উম্মতেরই লোক। আমাকে তখন বলা হবে, তুমি জানো না, তোমার মৃত্যুর পর এরা কী অভিনব কাজ (বিদআত) করেছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৮০)
যাদের এই ঝরনার পানি পান করানো হবে কিয়ামতের দিন প্রিয় নবিজির উম্মতদের এই পানি পান করানো হবে। যার বর্ণনা উল্লিখিত হাদিসেই পাওয়া যায়। নবিজি (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতেরা কিয়ামতের দিন এই হাউজের পানি পান করতে আসবে। এই হাউজে রয়েছে তারকার মতো অসংখ্য পানপাত্র (গ্ল¬াস)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সামুরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নবিরই একটি হাউজ আছে। কার হাউজে কত বেশি পিপাসার্তের আগমন হবে এই নিয়ে তাঁরা পরস্পর গৌরব করবেন। আমি আশা করি আমার হাউজেই সর্বাধিক সংখ্যক লোকের আগমন ঘটবে। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৪৬) এই হাদিস দ্বারাও বোঝা যায় যে যারা সুন্নতের অনুসারী বা প্রকৃত মুমিন, তারা হাউজে কাউসারে নবিজি (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাবে।
যারা সর্বপ্রথম হাউজে কাউসারের পানি পান করবে হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার হাউজ ‘আদান’ থেকে ‘আয়লা’ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। এর পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকারাজির সমান। যে কেউ এই হাউজ থেকে এক ঢোক পানি পান করতে পারবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। দরিদ্র মুহাজিররা সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য লাভ করবে, যাদের মাথার চুল উষ্কখুষ্ক, পোশাক ধুলি মলিন, যারা ধনবান পরিবারের মেয়েদের বিবাহ করতে পারেনি এবং যাদের আপ্যায়নের জন্য ঘরের দরজাসমূহ খোলা হয়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪৩০৩)
যারা হাউজে কাউসার থেকে বিতাড়িত হবে যারা দ্বিনের নামে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে এবং নিজেদের পার্থিব স্বার্থে সেগুলো দ্বিন বলে চালিয়ে দেয়, ইবাদত মনে করে, মানুষকে বিদআত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তারা হাউজে কাউসারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেন, আমি তোমাদের আগে হাউজের কাছে গিয়ে হাজির হব। আর (ওই সময়) তোমাদের কতগুলো লোককে অবশ্যই আমার সামনে ওঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদের আলাদা করে নেওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, তোমার পরে এরা কী নতুন কাজ করেছে তা তো তুমি জানো না। (বুখারি, হাদিস ৬৫৭৬)

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *