স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম

স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম

ভাবতে অবাক লাগে, খোদ রাজধানীতে কয়েক বছর ধরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে, যার কোনো অনুমোদন নেই। বহু বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে, যেগুলোর অনুমোদন নেই। কোনো জবাবদিহি নেই। অভিযোগ আছে, অনেকগুলো সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করে।

অতীতে অনেক ক্লিনিকে অনেক ভুয়া ডাক্তারও পাওয়া গেছে, যারা কিছু না জেনেই বছরের পর বছর রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছিলেন। এসব অবৈধ ক্লিনিকের মূল লক্ষ্য অর্থ উপার্জন। চিকিৎসায় রোগী বাঁচল কি মরল, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। এমন বিশৃঙ্খল ও অনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরানোর ঘোষণা দিলেন।

এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর অনুমোদনহীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সারা দেশে এক হাজার ২৮৫টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য পাওয়া গেল। এর মধ্যে অনেকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইনে যে কেউ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রাথমিক নিবন্ধন নিতে পারে। এরপর অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। পর্যবেক্ষণে সন্তোষজনক মনে হলেই কেবল অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা যায়. অনেক প্রতিষ্ঠান ১০ থেকে ১২টি করে প্রাথমিক নিবন্ধন নিয়েছে, কিন্তু সব কটির জন্য অনুমোদন নেয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো।

এর মধ্যে সারা দেশে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে পাঁচ হাজার এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০ হাজার। কিন্তু এই অনুমোদিত হাসপাতালগুলো যে সব কিছু নিয়মমাফিক করছে তার নিশ্চয়তা কোথায়? অনেকগুলোতেই অনুমোদনের শর্ত মানা হচ্ছে না। জানা যায়, বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের তদারকি নেই বললেই চলে। অনেক ক্লিনিকেই প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নেই। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। প্রশিক্ষিত নার্স কিংবা অন্যান্য লোকবল নেই। ফি আদায়ে চলে বাড়াবাড়ি। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবেও রয়েছে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ। বলা হয়ে থাকে, পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া হয়, রিপোর্টে আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সই করা থাকে ইত্যাদি।

আমাদের চারদিকে যেন কেবলই অবৈধ কারবার। বলা হয়, বৈধ ইটভাটার চেয়ে অবৈধ ইটভাটা বেশি। রয়েছে প্রচুর অবৈধ করাতকল এবং অবৈধ জায়গায় অর্থাৎ বনাঞ্চলের পাশে। আছে অবৈধ যানবাহন। আরো কত কি! যখনই সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রশ্ন করা হয়, তখনই উত্তর আসে, ‘লোকবলের অভাব’। প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, এর সবই চলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সপ্তাহে যা করতে পারল, অতীতে তা করতে পারেনি কেন? আমরা আশা করি, স্বাস্থ্য খাতের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *