সেপ্টেম্বরে রেল যাবে সমুদ্রসৈকতে

সেপ্টেম্বরে রেল যাবে সমুদ্রসৈকতে

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: কক্সবাজার দেশের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত। সৈকতে প্রতিনিয়তই থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়। কিন্তু সৈকতে যাতায়াতে প্রধান সড়কটিতে অন্তহীন সমস্যা। দুই লেনের সরু সড়ক, ছোট যানের আধিক্য, ঘটে দুর্ঘটনা, যানজটে নষ্ট হয় সময় ও অর্থ। তবে এখন এসব দুর্ভোগ-সংকট-সমস্যার নিরসন হচ্ছে। নির্মাণ হয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন।


দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের কাজ শেষ ৮৬ শতাংশ। দৃশ্যমান প্রায় ৮৫ কিলোমিটার রেললাইন। প্রতিদিন এখানে কাজ করছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও শেষ মুহূর্তের কাজ। এ কাজগুলো শেষ হলেই ট্রেন ছুটবে কক্সবাজার। আগামী সেপ্টেম্বরেই রেল যাবে সমুদ্রসৈকতে। সৈকতের পর্যটকরা পাবেন স্বস্তিদায়ক যাতায়াত। পণ্য পরিবহনে থাকবে বিশেষ ‘রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস’। স্টেশনগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে যাবে একটি রেল। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দুটি সময়সূচির। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নির্মাণ হয়েছে দেশের প্রথম আইকনিক ‘লাগেজ স্টেশন’। রেললাইন চালু হলে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক। উন্মোচিত হবে পর্যটন শহরের নতুন দিগন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটি হবে দেশের জন্য সরকারের উপহার।


দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে রেল চলাচলের পরিকল্পনা নিয়ে সামগ্রিক কাজ এগিয়ে চলেছে। এখন রামু, কক্সবাজার, চকরিয়া ও দোহাজারীতে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক একযোগে কাজ করছেন। সব দিকে চলছে শেষ মুহূর্তের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। তিনি বলেন, এটি সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। তাই প্রতিনিয়তই দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশবিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কারণ এটির সঙ্গে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের পর্যটকদের সম্পর্ক। প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিমি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে নির্মিত হয়েছে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক আইকনিক রেলস্টেশন। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাত এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হবে। এছাড়া সহজ ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। একই সঙ্গে প্রকল্প নির্মাণে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর নির্বিঘেœ চলাচলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এ রেলপথে হাতি চলাচলে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের ৪৫তম জেলায় যুক্ত হবে রেল। ঢাকা থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টায় এবং চট্টগ্রাম থেকে আড়াই ঘণ্টায় রেল পৌঁছাবে কক্সবাজার। দৈনিক যাতায়াত করতে পারবে প্রায় ১ লাখ মানুষ। এছাড়া মাছ, লবণ, শুঁটকিসহ নানা পণ্য কক্সবাজার থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহনের জন্য থাকবে বিশেষ রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস।


রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, আগামী সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচল। বাণিজ্যিক ট্রেন চালু হবে আরও কয়েক মাস পর। তবে কোচ, ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কারণে প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে একটি ট্রেন যাবে কক্সবাজার। পর্যায়ক্রমে যোগ হবে রেল। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ১৪৭টি মিটারগেজ কোচ দিয়ে নতুন ট্রেনগুলোর রেক কম্পোজিশন সাজানো হচ্ছে। অন্যদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসের জন্য রেল ভবনে দুটি সময়সূচি পাঠিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তুতি অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১ নম্বর ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টায় ট্রেনটি ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ২ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে কক্সবাজার থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা পৌঁছবে রাত ১০টায়।


জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড়-নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। নয়টি স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এগুলো হলো দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ হবে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়া পুরো রেলপথে নির্মিত হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *