সংকটে আশা জাগাচ্ছে বৈদেশিক ঋণ

সংকটে আশা জাগাচ্ছে বৈদেশিক ঋণ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশে বৈশ্বিক মন্দায় যখন ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, সেই সময় আশার আলো দেখাচ্ছে বৈদেশিক ঋণ। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বৈদেশিক ঋণ ছাড় বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার আর প্রতিশ্রুতি বেড়েছে প্রায় চার গুণ। নতুন প্রকল্পগুলোতে বেশি বেশি বৈদেশিক ঋণ দিয়ে পাশে রয়েছে এডিবি, জাইকা ও বিশ্বব্যাংক। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বেশি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এটা স্বাভাবিক। তবে ডিসেম্বরে গতি পেয়েছে বিদেশি ঋণের প্রকল্পগুলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
আগের অর্থবছরে একই সময় ছাড় হয়েছিল ৩৭৮ কোটি পাঁচ লাখ ডলার। অর্থাৎ বৈদেশিক ঋণ ছাড় বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল মাত্র ১৭৬ কোটি ডলার। বেড়েছে ৫২২ কোটি ডলার।
অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে চার গুণ বেশি বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে। যদিও গত অর্থবছর শেষে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৮৭৯ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে ইআরডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে বেশি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। যার কারণে সেসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের চুক্তি হয়ে গেছে। তাই প্রতিশ্রুতি বেশি দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচনের কারণে এখন দেড় মাস ধরে একনেক হচ্ছে না। প্রকল্প অনুমোদনও বন্ধ রয়েছে। তাই বছর শেষে দেখা যাবে, বরাবরের মতোই বৈদেশিক ঋণ আসবে। যদিও গত অর্থবছরে দুই বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছিল। এবার গত অর্থবছরের চেয়ে প্রতিশ্রুতি কমও হতে পারে। আবার বৈদেশিক ঋণের বড় প্রকল্প অনুমোদন পেলে বেশি হতে পারে। তবে ডিসেম্বরে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পগুলোতে বেশি অর্থ ছাড় হয়েছে।
ইআরডির তথ্য দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি ছয় মাসে ২৪৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরপর সবচেয়ে বেশি দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। সংস্থাটি ২০২ কোটি ছয় লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি। আরো কয়েকটি দেশ মিলে ১০৯ কোটি ৯ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে ছয় মাসে বেশি ঋণ ছাড় করেছে এডিবি। সংস্থাটি ১১১ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে। বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৮৯ কোটি ডলার। জাইকা ছাড় করেছে ৮১ কোটি ডলার। রাশিয়া ছাড় করেছে ৫৪ কোটি ডলার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড় করেছে ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, আর চীন ছাড় করেছে ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। আর অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা ১৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ঋণের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। গত অর্থবছরের ছয় মাসে যেখানে ১০৫ কোটি ডলার ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল। এবার সেখানে পরিশোধ করতে হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলার। বেড়েছে ৫১ কোটি ডলার। তবে যতটা না ঋণের আসল পরিশোধ বেড়েছে তার চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে সুদের পরিমাণ। গত অর্থবছর যেখানে ঋণের সুদ বাবদ ২৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। সেখানে এবার ৬৪ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে।
ইআরডির প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৩৫৮ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি ডলার। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২.৮৫ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমেছে বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের পরিমাণ। এদিকে গত অর্থবছর থেকে বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ ছাড় কম হয়েছে। এদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৭৩ কোটি ডলার।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প না নিয়ে যেসব প্রকল্পে রিটার্ন আসবে সেগুলো নেওয়া উচিত। আগে বিশ্বব্যাংক-এডিবি থেকে আমরা ফিক্সড রেটে ঋণ পেতাম। এখন সেটা কমছে। যার কারণে আমাদের বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ নিতে হচ্ছে। এই ঋণের কারণে শুধু সুদ পরিশোধের চাপ বাড়বে না, একই সঙ্গে আসল পরিশোধেও চাপ বাড়বে। কারণ বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ পরিশোধের সময় কম থাকে। এই অবস্থায় বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। তবে এই সংকটের সময়ে বৈদেশিক ঋণ ছাড় বেশি হওয়া সরকারের জন্য ইতিবাচক।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *