রপ্তানি খাতে বিপর্যয় শঙ্কা

রপ্তানি খাতে বিপর্যয় শঙ্কা

বাণিজ্য ডেস্ক: চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল; গত মাসে এসে সেই ধারা হোঁচট খেয়েছে। অক্টোবরে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ কম। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৫, আগস্টে ৪ ও সেপ্টেম্বরে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল পণ্য রপ্তানি খাতে। অক্টোবরে এসে ঘটেছে হঠাৎ পতন!
কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোয় চাহিদা কমায় ক্রেতাদের নতুন অর্ডার আসছে না বলে আমাদের অবহিত করছেন রপ্তানিকারকরা। এছাড়া গত মাসের শেষের দিকে হরতাল থাকায় পণ্য রপ্তানি করা যায়নি। শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় ওই মাসের শেষের তিন দিনের হিসাবও আমরা নিতে পারিনি। অক্টোবরের পরিসংখ্যানে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চলতি মাসে টানা হরতাল-অবরোধে সামনের দিনগুলোয় রপ্তানি খাত আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন ইপিবির এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে সেগুলো আগেই অর্ডার দেওয়া ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকায় চাহিদা কমে যায়। ওই সময় পাশ্চিমা ক্রেতারা অর্ডার বাতিল না করলেও পণ্য বিলম্বে সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। ফলে আগের অর্থবছরে প্রাপ্ত অর্ডারের পণ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু নতুন করে ক্রেতাদের সেভাবে ক্রয়াদেশ না বাড়ায় অক্টোবরে এসে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘এতদিন রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি যেটি দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা (রপ্তানিকারক) কখনোই একমত ছিলাম না। আমাদের হিসাবে গত এক বছর ধরেই রপ্তানি আয় কমছে। কারণ যেসব দেশে বাংলাদেশের পণ্য যায়, সেসব দেশের অর্থনীতি ভালো চলছে না। এমনকি ব¬্যাক ফ্রাইডে (নভেম্বরের শেষ শুক্রবার) উপলক্ষেও আমরা তেমন কোনো ক্রয়াদেশ দেখিনি। এখন ডিসেম্বরে বড়দিন উপলক্ষে অর্ডার কিছু এলেও এটা পুরো অর্থবছরের রপ্তানি আয়কে কতটা প্রভাবিত করতে পারবে তা এখনই বলা যাবে না।’
বড় গন্তব্যে কমছে রপ্তানি আয় : গত অর্থবছরে ভারত থেকে পণ্য রপ্তানিতে আয় এসেছিল ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পাশের এ দেশটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ইপিবির সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, জুলাই-অক্টোবর প্রান্তিকে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। নতুন গন্তব্যের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কানাডায় পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের চার মাসেই চিত্রটি বদলে নেতিবাচক হয়ে গেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই-অক্টোবর প্রান্তিকে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে গেছে আয়। প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি যেসব নতুন বাজারকে রপ্তানি খাতের জন্য সম্ভাবনাময় মনে করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ভারত ও কানাডা। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় দুটি গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে গতবারের তুলনায় আরও বেশি হারে কমছে প্রবৃদ্ধি। ইপিবির তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি গতবারের তুলনায় কমেছে (-) ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জার্মানিতে কমেছে (-) ১২ দশমিক ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আয় আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় আসে জার্মানি থেকে। ফলে এ দুটি দেশে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্টরা এ অবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমাদের সমস্যা ছিল বাইরের। এখন সমস্যা তৈরি হয়েছে ঘরে। এমনিতেই গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে আমরা উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছি না। উপরন্তু চাহিদা কমার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্ডার কমছে। আয় বাড়াতে আমাদের লক্ষ্য ছিল নতুন বাজার। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানেও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা হরতাল-অবরোধের কারণে পণ্যের শিপমেন্ট বন্ধ আছে। এমনকি উৎপাদন চালু রাখার জন্য ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোয় অবস্থিত কারখানায়ও কাঁচামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’ এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোয় পণ্য রপ্তানিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করেন পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *