ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে মার্চে

ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে মার্চে

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ভারত থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের শুরুতে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে বাংলাদেশে। পাইপলাইনে আসার কারণে দেশে জ্বালানি সরবরাহ বাড়বে এবং জ্বালানি পরিবহনের খরচ কমে আসবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারতের শিলিগুড়িতে চলছে ডিজেল সরবরাহের প্রস্তুতি।

বাংলাদেশের পার্বতীপুর প্রস্তুত হচ্ছে ডিজেল সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য। বিপিসির পক্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (এমপিএল) ও ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন নামের এই প্রকল্পের পরিচালক টিপু সুলতান বলেন, ‘পাইপলাইনের ফিনিশিং পর্যায়ের কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরে কাজ শেষ হবে। জানুয়ারিতে মেকানিক্যাল কমিশন এবং অপারেশনাল কমিশনিং শেষ হলে তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে।’ দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল। বছরে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৪৬ লাখ টন, যার ৮০ শতাংশই সরকার সরাসরি আমদানি করে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। আর পরিশোধিত তেল আমদানি করা হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন উৎস থেকে কম খরচে ডিজেল আমদানির পথ খুঁজছে সরকার। এরই মধ্যে রাশিয়া ও ব্রুনেই দারুসসালামের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চের শুরুর দিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আনা শুরু করতে পারব। তাদের রিফাইনারির সক্ষমতা ও পাইপলাইনের সক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের ডিজেল সরবরাহ করার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা কী পরিমাণ ডিজেল দিতে পারবে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। ’

পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আনা হলে সেটি কি আন্তর্জাতিক বাজার দরে আনা হবে, নাকি ভারতের স্থানীয় বাজার দরে? এই প্রশ্নের জবাবে এ বি এম আজদ বলেন, ‘তাদের রিফাইনারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দরেই ডিজেল আনা হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে যেটি আনা হবে সেটিও আন্তর্জাতিক বাজার দরেই আনা হবে। পাইপালাইনের মাধ্যমে ডিজেল আনতে পারলে আমাদের পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে। ’

কিভাবে দাম পরিশোধ করা হবে-জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ডলারের মাধ্যমেই তাদের কাছ থেকে অল্প পরিসরে ডিজেল আমদানি করছি। পাইপলাইনের মাধ্যমে যে ডিজেল আনা হবে সেটিও আপাতত ডলারের মাধ্যমেই আনা হবে। তবে পাইপলাইনের মাধ্যমে যেহেতু বেশি পরিমাণ ডিজেল আনা হবে তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা করব পরবর্তী সময়ে ডলারের পরিবর্তে রুপিতে পেমেন্ট করা যায় কি না। ’

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেল আনার ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে (১৫৯ লিটার) গড়ে ১০ ডলার প্রিমিয়াম (জাহাজভাড়াসহ অন্য খরচ) দিতে হয় বিপিসিকে। ভারত থেকে আনার ক্ষেত্রে এটি আট ডলার হতে পারে। প্রতি ব্যারেলে দুই ডলার কমলে প্রতি এক লাখ টনে প্রায় ১৫ লাখ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই ভারত থেকে আমদানি হলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। জ্বালানি সরবরাহে সময় কম লাগার পাশাপাশি এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত থেকে তেল আমদানির প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ২০১৮ সালে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারত থেকে পার্বতীপুর রেলহেড ডিপোতে ডিজেল আসতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। সেখান থেকে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহ করা হবে। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে। পার্বতীপুর রেলহেড ডিপোর বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার টন থেকে ৪৩ হাজার ৮০০ টনে উন্নীত করা হচ্ছে। বর্তমানে আমদানি করা জ্বালানি তেল পার্বতীপুরে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় এক মাস।

পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছরগুলোতে এটি চার থেকে পাঁচ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশ ডিজেল নিতে পারবে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজেল আমদানির বিকল্প উৎস তৈরি হচ্ছে। এখন যদি ডলারের পরিবর্তে রুপিতে আমদানি করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের ডলারসংকট কিছুটা হলেও কমবে। পাইপলাইনে ডিজেল আনার ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে। ভবিষ্যতে যদি তারা আমাদের দামে কিছুটা ছাড় দেয়, তাহলে এটা আরো লাভজনক হতে পারে। ’

উল্লেখ্য, বর্তমানে লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে বিপিসি। ২০১৭ সাল থেকে ট্রেনে করে আসছে এ তেল।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *