বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন

বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে আবারও করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে- ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪১ দেশে নতুন ধরনের করোনা ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, নতুন ধরনটি করোনার অমিক্রন ধরনের জেএন.১ উপধরন। দ্রুত ছড়ানোর কারণে ডব্লিউএইচও এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করে সতর্ক করেছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, শীতকালে কভিড এবং অন্য সংক্রমণগুলোর প্রকোপ বাড়তে পারে। উত্তর গোলার্ধে এরই মধ্যে আরএসভির মতো বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস এবং শিশুদের নিউমোনিয়ার হার বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কভিডের জন্য দায়ী ভাইরাসটি শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে রূপ পাল্টেছে। এর কয়েকটি ধরনও তৈরি হয়েছে। মাঝে কিছুদিন বিশ্বজুড়ে অমিক্রন ধরনের আধিপত্য দেখা গিয়েছিল। তবে বর্তমানে এ ধরনের সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কম এবং বিদ্যমান টিকাগুলোই এ ধরন থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে। বিশ্বের অনেক প্রান্তে করোনার জেএন.১ দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানালেও বিষয়টি উদ্বেগের নয় বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। খবরে বলা হয়েছে, ভারতে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে কভিড-১৯। নতুন বছর শুরুর আগেই এ ভাইরাস যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে গোটা দেশে। গতকাল সকালে প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৮টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড হয়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েকদিনে অ্যাকটিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৬৯টি। তিন দিন আগে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরলে করোনার নতুন উপ-প্রজাতি জেএন-১ (ঝঁন ঠধৎরধহঃ ঔঘ-১) এর হঠাৎ সন্ধানের পরই দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসে কেরলে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। ফলে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত গোটা ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩২৭ জনের। একই সঙ্গে কেরল, কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্রে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের খবর মিলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ঘোষণা করেছে, গত নভেম্বরের শুরুতে করোনা ভাইরাসের সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ আক্রান্ত ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। কিন্তু এক মাসে এটির বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার হার ২৭ দশমিক ১। ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের ৪১টি দেশে এরই মধ্যে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। প্রথম শনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এতে ১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও সুইডেনে জেএন.১ এ আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এ উপ-ধরন বেশি ছড়াচ্ছে। মোট করোনা সংক্রমণের ১৫ থেকে ২৯ শতাংশই এ উপ-ধরনের কারণে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের হেলথ বলেছে, বর্তমানে একটি পরীক্ষাগারে যতগুলো করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসছে, তার প্রায় ৭ শতাংশের জন্য জেএন.১ দায়ী। এ ধরন এবং অন্য ধরনগুলোর ব্যাপারে নতুন নতুন কী তথ্য পাওয়া যায়, সেদিকে নজর রাখছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, অমিক্রনের আরেক উপ-ধরন বিএ.২.৮৬ ধরনের তুলনায় জেএন.১-এর স্পাইক প্রোটিনের অতিরিক্ত পরিবর্তনের কারণে সব অঞ্চলে জেএন.১ দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিএ.২.৮৬ ধরন থেকেই জেএন.১-এর উৎপত্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিসংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে শীত মৌসুম শুরু হচ্ছে, সেখানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য সংক্রমণগুলোর পাশাপাশি এ ধরনের কারণে সারস-কভ-২ (করোনা ভাইরাস)-এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। টিকার কারণে যে ইমিউনিটি তৈরি হয়, তা দিয়ে জেএন.১ থেকে কতটুকু সুরক্ষা মিলবে, সে ব্যাপারে খুব বেশি প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আগের ধরনগুলোর চেয়ে এ ধরনে সংক্রমণের কারণে মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশি অসুস্থ হচ্ছে বলে খবর জানা যায়নি। সংস্থাটি মনে করছে, স্বাস্থ্যের ওপর এ ধরনের প্রভাব নির্ণয়ের জন্য আরও বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সংক্রমণ ও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো- ক. জনাকীর্ণ ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। খ. কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। গ. কভিড এবং টিকার নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন। ঘ. অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকতে হবে। ঙ. লক্ষণ দেখা দিলে রোগ শনাক্তের পরীক্ষা করতে হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *