দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মাশুকাতে রাব্বি

দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মাশুকাতে রাব্বি

বাবু ইসলাম: এতিম শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে অর্থ, খাদ্য, পোশাক, সহায়তা দিয়েছেন। নিজের বিয়ের উপহারের ১৫ ভরি গহনা দিয়ে ৮৪ জন মেয়ে শিশুর কানের দুল গড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। এতিম শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাশুকাতে রাব্বি। শিশু পরিবারের এক এতিমের মিষ্টির প্রতি প্রবল বাসনা এবং খাওয়ার দৃশ্য দেখে তিনি আবেগ আপ¬ুত হয়ে ওঠেন। সেই থেকে তার এতিম শিশুদের প্রতি ভালোবাসা এবং পথচলা।

উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একজন মমতাময়ী মায়ের ভূমিকায় তিনি নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আর এ কাজে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কাজ দেখে। মাশুকাতে রাব্বি সারা জীবন এতিমদের পাশে থাকতে চান। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যাদের অনন্য অবদান রয়েছে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে ও তাদের সম্মানিত করতে গৌরব বোধ করেন তিনি। ৩৩তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি।

রাজশাহীর কালিকাপুর গ্রামে তার পৈত্রিক নিবাস। পিতা মজিবুর রহমানও একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। দুই বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় বোন মাসুমা খাতুন সফটি ২৭তম বিসিএস এ পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার হিসেবে যোগদান করেছেন। শিশুবেলা থেকেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পরিশ্রম ও মেধার যোগ্যতায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার নেশা। বিশেষ করে এতিম শিশুদের দেখলে তার হৃদয় জুড়ে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। রাজশাহী পিএন সরকারি স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃ-বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে প্রশাসনে যোগ দেন।

চাকরি জীবনে প্রথমেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২০১৪ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। একদিন জেলা প্রশাসক তাকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে যান। সেখানে সকল এতিম শিশুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।
অধিকাংশ শিশু হাতে মিষ্টি পেয়ে আনন্দ উচ্ছ¡াসের সঙ্গে মিষ্টি খেতে শুরু করলেও একটি শিশু মিষ্টি খাচ্ছে শুধু রস চুষে। আর মিষ্টিটি সযতেœ রেখে দিচ্ছে। শিশুটির কাছে গিয়ে দেখেন এই একটি মিষ্টি ওই শিশুর জীবনের যেন পরম পাওয়া। জীবনে কখনোই সে মিষ্টি খায়নি। একটি মিষ্টি পেয়ে সে যেন আনন্দে আত্মহারা। এ রকম শিশুদের দেখে তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। তখন থেকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন এতিম শিশু যেখানেই পাবেন সেখানেই সাধ্যমতো সাহায্য করবেন।

বালিকা শিশুদের মুখে হাসি দেখার জন্যই তিনি তার জীবনের বিশেষ সম্পদ উপহার পাওয়া ১৫ ভরি স্বর্ণের গহনা ভেঙ্গে ৮৪ জোড়া কানের দুল তৈরি করে ৮৪ জন এতিম বালিকার কানে পরিয়ে দিয়েছেন। কানের দুল পাওয়া এতিম বালিকাদের যে অভিব্যক্তি ছিল তা তিনি কোনো দিন ভুলবেন না।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়ে ২০২১ সালে আসেন। সাধারণ জীবনযাপনের এই সরকারি কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জে এসেই জেলার শিশু পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেন। শিশুদের ভালো খাবার ও পোশাক প্রদান করে যাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জের অন্যান্য বেসরকারি এতিমখানার মধ্যে শিয়ালকোল গ্রামে এতিমখানায় ও বহুলী ইউনিয়নে মহিলা এতিমখানায় একাধিকবার খাবার প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি তার নিজ গ্রামে মহিলাদের নামাজের জন্য মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছেন।

প্রায় ৯ বছরের চাকরি জীবনে নিজের জন্য খুব সামান্য খরচ ব্যতীত বাকি অর্থ মানবসেবায় ব্যয় করেছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন মানবিক এ কাজ চালিয়ে যাবেন। তিনি আরও জানান মানবিক সহায়তার এ কাজে পিতা মজিবুর রহমান, মা দিলরুবা সুলতানা এবং স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *