জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা রিজার্ভে চাপ বাড়িয়েছে

জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা রিজার্ভে চাপ বাড়িয়েছে


দেওয়ানবাগ ডেস্ক: জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর (জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর বাংলাদেশের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা কমিয়েছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশদূষণও বাড়িয়েছে। আমদানিনির্ভর নতুন জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ঝুঁকি আরো বাড়াবে বলে মনে করছে বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গএনইএফ।
তাদের মতে, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে সস্তা বিকল্প।
গত সোমবার এক ওয়েবিনারে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাঁকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯৭ শতাংশই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।
২০২২ সালে জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমাতে হয়েছে। এতে লোডশেডিং বেড়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরো বাড়ানো হলে তা জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলবে।
কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের সঙ্গে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছে ব্লুমবার্গ।
সেখানে বলা হয়, নতুন একটি বড় আকারের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতি ঘণ্টায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের খরচ হবে ৯৭ থেকে ১৩৫ মার্কিন ডলার। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে খরচ হচ্ছে ৮৮ থেকে ১১৬ ডলার। আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে খরচ হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ ডলার। সৌরবিদ্যুতের প্রযুক্তি খরচ ২০২৫ সালে আরো কমে আসবে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাটারিযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় সস্তা হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এখনই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর পরও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কেন্দ্র হাইড্রোজেন বা অ্যামোনিয়ার মতো জ্বালানি দিয়ে চালানোর চিন্তা আছে। তবে এসব জ্বালানি সৌরশক্তির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হবে। প্রতিবেদনের লেখক ইশু কিকুমা বলেন, হাইড্রোজেন বা অ্যামোনিয়ার বিবেচনায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাংলাদেশকে মারাত্মক অর্থনৈতিক ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ব্লু মবার্গএনইএফের প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ক্যারোলিন চুয়া বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অর্থ সাশ্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এলএনজি ও কয়লা আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াবে, পাশাপাশি অনেক নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে করা আমাদের সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) বিশ্লেষণ দেখাচ্ছে, যদি জীবাশ্ম জ্বালানির দাম কমেও যায়, তাও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎই অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে চলে আসার পরও বাংলাদেশ এখন নতুন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে। ২০৩০ পরবর্তী সময়ে হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়ার মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানি (ক্লিনার ফুয়েল) দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানো যাবে, এমন ভাবনাই বাংলাদেশকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করছে।
ওয়েবিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্লুমবার্গএনইএফের এশিয়া প্যাসিফিক প্রধান আলী ইজাদি নাজাফাবাদি। এ সময় আরো বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিসিসের (আইইইএফএ) জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *