জাপানের ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহারের পরামর্শ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার মারাত্মক রূপ নেওয়ায় ডেঙ্গুর টিকা সংগ্রহের কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরুরি প্রয়োজনে জাপানের তৈরি ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জাপানের ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিকা ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি। এর আগে জরুরি প্রয়োজনে ওই কোম্পানির টিকাকে ছাড়পত্র দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল। জাপানের ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিএইচওর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক ও নির্বাহী প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি এমন অঞ্চলগুলোয় ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে জাপানের তৈরি টিকা ব্যবহার করা যাবে। সোমবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস অন ইমিউনাইজেশন বিভাগের পরিচালক হান্না নোয়িনেক জানান, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরীক্ষামূলক ট্রায়াল চলার সময় বিভিন্ন ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর টিকা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক।
প্রাণঘাতী ডেঙ্গু রোগের একমাত্র বাহক এডিস মশা। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৃষ্টিপাত। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে এডিস মশার বংশবিস্তার বাড়ছে। ফলে মৌসুমি জলবায়ুর দেশগুলোর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের অনেক দেশে এ রোগের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মতো মৌসুমি জলবায়ুর দেশগুলোয় এ রোগের ভয়াবহতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে কখনোই ডেঙ্গুতে এত আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখেনি দেশটি।
এদিকে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধে উপযোগী টিকা নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। আইসিডিডিআর,বি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায়-এটি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম এবং শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রয়োগে নিরাপদ। এদিকে, সোমবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ডেঙ্গু টিকা টিবি-০০৫ এর দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল করেছে আইসিডিডিআর,বি। এ টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গু টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ ও ‘ডেনভাক্সিয়া’ বেশ কয়েকটি দেশ অনুমোদন করেছে। টিকাগুলো সব ধরনের ডেঙ্গুর ওপর কাজ করে না। আমাদের দেশে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তাতে এসব টিকা কাজ করবে বলে মনে হয় না। সারা বছরই আমাদের মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আগেই জাপানের কিউডেঙ্গা টিকা নিতে পারতাম। কিন্তু টিকাটি আদর্শ টিকা নয়। তাই আমরা এ মুহূর্তে টিকা নিয়ে ভাবছি না। তবে ডেনভাক্সিয়া টিকা অনেক দিন ধরেই ডব্লিউএইচওর কোয়ালিফাইড। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ একমত নন। যেহেতু কিউডেঙ্গা টিকা নিয়ে ডব্লিউএইচও মাত্র অনুমোদন দিয়েছে-তাই আমরা ভাবছি। সবার সঙ্গে কথা হবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ড. বেনজির আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের করণীয় হলো দেশে ডেঙ্গুর যে টিকার দ্বিতীয় ধাপের সফলভাবে ট্রায়াল হয়েছে-সেটি কার্যকর করতে বিজ্ঞানীদের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা। তাহলে এ টিকা কয়েক বছর পর হলেও পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
যখন তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল হবে তখন গবেষণায় তিনটা দিক দেখতে হবে। তা হলো সাধারণ কার্যকারিতা, সুরক্ষা এবং মানুষ টিকাকে কতটুকু পছন্দ করে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল-ডব্লিউএইচও কোনো টিকাকে অনুমোদন দেয়নি। সেজন্য তাদের পরিকল্পনার অভাব ছিল। কিন্তু জাপানের তাকেদার তৈরি টিকা ডব্লিউএইচও অনুমোদন দেওয়ায় তা দ্রুত দেশে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। টিকা রোগীদের মধ্যে রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুহার দুইই কমাবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *