কৃষিতে বাড়ছে গ্রামীণ নারী

কৃষিতে বাড়ছে গ্রামীণ নারী

নারী ডেস্ক: দেশের মোট নারী শ্রমশক্তির ৭৫ শতাংশ গ্রামে কাজ করে। আর কৃষি, বনায়ন ও মৎস্যখাতে কাজ করে নারীদের ৭২.৬ শতাংশ। কৃষিতে নারীর এই বিপুল অংশগ্রহণের পরও সরকারের দেওয়া কৃষক কার্ড পাচ্ছেননা নারীরা। মূলত জমির মালাকানা না থাকায় তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

উন্নয়নশীল দেশের কৃষি শ্রমিকের প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। যদিও বাংলাদেশে মোট কৃষি শ্রমিকে নারীর অবদান ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। গতএক দশকে কৃষিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১৬ শতাংশ। পেশাবদল ও বহুমুখী পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় কৃষিতে পুরুষ শ্রমিকের অংশ গ্রহণ ১০ শতাংশ কমেছে।

১৫ অক্টোবর বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে গ্রামীণ নারী’। পরিবার ও সমাজে গ্রামীণ নারীর অবস্থানের মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালন করা হয়।

ইউএনওম্যানের তথ্য বলছে, পর্যাপ্ত সুযোগ ও প্রযুক্তিগত বাধা দূর করতে পারলে নারী শ্রমিকদের মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা ২.৫ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। নারীদের কৃষিতে সরাসরি নিয়োজিত করা গেলে পরিবারের অপুষ্টি কমার গতি বৃদ্ধি পায় ১২-১৭ শতাংশ।

তবে সমাজ ও পরিবারে নারীরা নানামুখী অবদান রাখা সত্ত্বেও নানা বৈষম্য ও কম মজুরি পাচ্ছেন তাঁরা। বেশি করুণ অবস্থায় থাকেন গ্রামীণ নারী শ্রমিকরা।

উন্নয়নকর্মী ও এএলআরডির উপনির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান বলেন, কৃষক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি না থাকায় চারটিক্ষেত্রে তাঁরা প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রথমত. আর্থিক ও প্রযুক্তি, দ্বিতীয়ত. খাস জমি লিজ না পাওয়া, তৃতীয়ত. সরকারি প্রণোদনা এবং চতুর্থত. যথাযথ মজুরি না পাওয়া।

রওশন জাহানের পরামর্শ, এই বৈষম্য দূর করতে হলে বিদ্যমান মজুরি আইন বদলাতে হবে। কৃষি আইনে জমির মালিকানা সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের (এলএফএস) তথ্য বলছে, দেশে মোট নারী শ্রমশক্তি আছে দুই কোটি। এর মধ্যে গ্রামেই রয়েছে দেড় কোটি নারী। অর্থাৎ মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্রামে কাজ করে।

নারী শ্রমিকদের বেশিরভাগই পারিবারিক কর্মী এবং বিনামূল্যে শ্রম দিচ্ছে। আবার পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় নারীর পারিশ্রমিক কম। গত বছর কৃষিতে একজন পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি ছিল ৪১৮ টাকা। নারী পেয়েছেন ৩১৬ টাকা। ঢাকা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে নারীদের পারিশ্রমিক জাতীয় গড়ের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু বাকি জেলায় নারীদের পারিশ্রমিক ২০০-২২০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

এ বিষয়ে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, সারাদেশে কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, সিলেট-চট্টগ্রাম-পঞ্চগড়ে চা এবং দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষে নারীর অবদান বাড়ছে। কৃষির উপখাতের মূল চালিকাশক্তিও কিন্তু নারী। তিনি বলেন, এখনো গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও চাষের কাজকে নারীর প্রতিদিনের কাজের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের মাধ্যমে কৃষক কার্ডের ব্যবস্থা করা হলেও দেশের নারীরা তা থেকে বঞ্চিত। কারণ নারীদের বেশিরভাগেরই জমির মালিকানা নেই। তবে কৃষক কার্ডের একটি সমাধান হতে পারে পারিবারিক কৃষক কার্ড। এর মাধ্যমে নারীরা সরকারের প্রদত্ত সুবিধা পেতে পারেন। বিবিএসের সর্বশেষ কৃষি শুমারির তথ্য বলছে, বাংলাদেশে মোট ৯৮ শতাংশ পরিবার পল্লী এলাকায় বসবাস করে। যার মধ্যে ৫৩.৮২ শতাংশ কৃষি পরিবার। এলএফএসের তথ্য মতে এক দশকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রমশক্তির ৫০ লাখই নারী শ্রমিক। এ সময় দেশে কৃষি, বন ও মৎস্য খাত এবং পশু ও হাঁস-মুরগি পালন প্রভৃতি কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৮০ লাখ হয়েছে। এ বৃদ্ধির হার ১১৬ শতাংশ। যদিও এসব নারী শ্রমিকের ৮০ শতাংশই অবৈতনিক ও পারিবারিক শ্রমিক। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কৃষিতে নারী শ্রমিকের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা প্রয়োজন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *