কুমিল্লায় ৮০০ বছরের প্রাচীন হজরত শাহজালাল (রহ.) মসজিদ

কুমিল্লায় ৮০০ বছরের প্রাচীন হজরত শাহজালাল (রহ.) মসজিদ

কুমিল্লা সংবাদদাতা: কুমিল্লা সদর উপজেলার বিবিরবাজার স্থলবন্দর-সংলগ্ন গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত। সঙ্গে রয়েছে একই সময়ের মসজিদ। প্রায় ৮০০ বছরের ইতিহাস। ইয়েমেন থেকে আসা ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রহ.) ভারতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম হয়ে যাওয়ার পথে কুমিল্লার এই স্থানে বিশ্রাম নেন। এখানে বসেই সিদ্ধান্ত নেন তাঁর কোন সঙ্গী দেশের কোন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করবেন। তারপর তিনি সিলেট যান। তখন কুমিল্লা অঞ্চল ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে। তখনকার সময়ের ত্রিপুরার রাজা এই মহান সাধকের নামে কয়েক একর জমি ওয়াক্ফ করে দেন। দরগার পাশেই রয়েছে প্রায় ৮ শতাব্দীর পুরোনো মসজিদ ও প্রাচীন কবরস্থান। পুরোনো মসজিদ ভেঙে করা হয়েছে নতুন মসজিদ। দরগার দক্ষিণ পাশে রয়েছে রেখে যাওয়া তাঁর সঙ্গীদের একজন শাহজাহান আউলিয়ার মাজার। নতুন করে সম্প্রতি মাদরাসা গড়ে তোলা হয়েছে।

স্থানীয় ধর্মীয় গবেষকদের সূত্র মতে, হযরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ সালে ৩২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের স্বপ্ন দেখার পরে মামা সৈয়দ আহমদ কবিরকে তা জানান। তিনি এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে হযরত শাহজালালকে (রহ.) ভারতবর্ষে যাওয়ার পরামর্শ দেন। যাত্রাকালে কবির হযরত শাহজালালের হাতে একমুঠো মাটি তুলে দিয়ে বলেন, যে স্থানে এই মাটির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণের মিল এক হবে সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য দরবার শরীফ গড়বে। হযরত শাহজালাল (রহ.) ধর্ম প্রচার অভিযানে আরবের মক্কা শরীফ থেকে একাই যাত্রা শুরু করেন। তখন তাঁর শিষ্যের সংখ্যা ২৪০ জন বলে ধারণা পাওয়া যায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিবিরবাজার স্থলবন্দরের একটু আগে হাতের বামে রয়েছে হযরত শাহজালাল ইয়েমেনি (রহ.)-এর দরবারের স্থান। পাশে বড় মসজিদ। পুরোনো মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে প্রশান্তি দোলা দেয় দর্শনার্থীদের দেহ-মনে। কয়েকজনকে দেখা গেল কবর জিয়ারত করতে। পাশে অবস্থিত হযরত শাহজালাল (রহ) নুরানি হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার সুপার রমজান আলী বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখেছি এই দরগাহ। শুনেছি এ টিলায় হজরত শাহজালাল (রহ.)-সহ কয়েকজন আউলিয়া বিশ্রাম নিয়েছেন। এটা একটা ছোট টিলা ছিল, জঙ্গল ছিল। এখানে হরিণ, বাঘ, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী আসত।

দরবারের খাদেম মো. আরব আলী বলেন, প্রায় ৮০০ বছর আগে হযরত শাহজালাল (রহ.) কয়েকজন সাথী নিয়ে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যাওয়ার পথে এখানে আস্তানা গাড়েন। পাশে মসজিদ তোলার নির্দেশ দেন। তাঁর স্মরণে প্রতি ফাল্গুন মাসের ১৫ তারিখ গ্রামের মানুষদের নিয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। শবে বরাতের সময় এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়। কুমিল্লার কান্দিরপাড় মসজিদের খতিব মাওলানা কারি ইব্রাহিম ও ইসলামি গবেষক শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগার ইতিহাস কয়েক শতাব্দী ধরে মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। এই মহান সাধকের স্মৃতিজড়িত স্থান ও মসজিদ সংরক্ষণ প্রয়োজন। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) ইয়ামেন থেকে এই অঞ্চলে আসেন। তিনি এখানে কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করেন বলে জানা যায়। এই স্থানে মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শ্রদ্ধা জানান।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *