আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি মানবমস্তিষ্ক

আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি মানবমস্তিষ্ক

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ: মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে জটিল অঙ্গ। এটি আমাদের বিশ্বের প্রতিটি চিন্তা, কর্ম, স্মৃতি, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এটি প্রায় ১.৪ কিলোগ্রাম ওজনের টিস্যুর মতো, যাতে এক শ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ বা নিউরন আছে।

পবিত্র কোরআনে বিবেকের কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু ‘আকল’ তথা ‘বিবেক’ শব্দ থেকে ব্যুৎপন্ন শব্দাবলির ব্যবহার কুরআন মজিদে প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। আর আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন নিয়ে চিন্তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে-এমন আয়াতের সংখ্যা অগণিত। ইসলাম চিন্তা ও বিবেককে যেভাবে মূল্যায়ন করেছে, তা বোঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে কোনো দায়িত্ব অর্পণের ক্ষেত্রে ইসলাম বিবেককেই প্রধান শর্ত ঘোষণা করেছে। তাই পাগল, শিশু বা ঘুমন্ত ব্যক্তিদের জন্য ইসলামের বিধিবিধান স্থগিত রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি এই মানব মস্তিষ্কের কারণে মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব ঘোষণা করা হয়েছে। চিন্তাশক্তি কাজে লাগালে সত্য পর্যন্ত পৌঁছা মানুষের জন্য সহজ। তাই জগৎ-প্রকৃতি নিয়ে ভাবার পাশাপাশি ভাবতে হবে নিজেকে নিয়েও। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) অচিরেই তাদের জন্য আমার নিদর্শন ব্যক্ত করব-বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ফলে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে তা-ই সত্য…।’ (সূরা হা-মিম আস-সাজদা: আয়াত ৫৩)

যাপিত জীবনের সব কিছু মানব মস্তিষ্ক ধারণ করে এবং সেগুলো নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে। তা চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘…তুমি তাদের কাছে বৃত্তান্ত বিবৃত করো, যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সূরা আরাফ: আয়াত ১৭৬)

মানব মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কেমন, বিজ্ঞানের ভাষ্য হলো-
মানব মস্তিষ্ক প্রায় ১০০ বিলিয়ন স্নায়ু কোষ ধারণ করে এবং সহস্র বিলিয়নেরও বেশি স্নায়ুতন্তু ধারণ করে যাদের বলা হয় সিনোপসিস (synapses)। এটি এক লাখ ঘটনাকে এক সঙ্গে এবং সারা জীবনে কোটি কোটি ঘটনা ধারণ করতে পারে।

মস্তিষ্কের মেমোরি স্পেস নিয়ে গবেষণাতথ্যে নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির অধ্যাপক ড. পল রেবার উল্লেখ করেছেন, মানুষের মস্তিষ্কে আছে এক শ কোটি বা এক বিলিয়ন নিউরন। প্রতিটি নিউরন একে অন্যের সঙ্গে গড়ে তুলেছে এক হাজার সংযোগ, যার গাণিতিক সংখ্যা হবে এক ট্রিলিয়নের বেশি।

The human brain consists of about 1 billion neurons. Each neuron forms about 1,000 connections to other neurons, amounting to more than a trillion connections.

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি প্রতিটি নিউরন একটি করে মেমোরি ধারণ করে তাহলেও কারো জীবদ্দশায় কখনো মেমোরি স্পেস শেষ হবে না; বরং একেকটা নিউরন অসংখ্য মেমোরি ধারণ করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রেইনের মেমোরি ধারণক্ষমতা কমপক্ষে ২.৫ পেটাবাইট অথবা ১ মিলিয়ন জিবি বা ১০ লাখ গিগাবাইট ধারণক্ষমতা রয়েছে মস্তিষ্কের মেমোরি কার্ডের। অন্তত ৩৪২ বছর লাগবে এই মেমোরি কার্ড পূর্ণ হতে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক পল রেবর উল্লেখ করেছেন, ব্রেইন যদি কোনো সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারের মতো মেমোরি ধারণ করে তাহলে সেই মেমোরি যদি কোনো টিভিতে অবিরাম সম্প্রচার করা হয় তাহলে তিন শতাধিক বছর লাগবে তা প্রচার করতে।
(https://www.scientificamerican.com/article/what-is-the-memory-capacity/) আল্লাহর সৃষ্টির এই বিস্ময়কর রূপ থেকে বিশ্বাসী হৃদয় বলে ওঠে : ‘….হে আমাদের রব, তুমি তা নিরর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৯১)

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *