২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াবে চীন

২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াবে চীন

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ চীন কখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে এ নিয়ে অনেক বছর যাবৎই পূর্বাভাস দিয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার টোকিওতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আইএমএফের সাবেক উপপ্রধান ও চীনের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ঝু মিন বলেন, আগামী ২০৩৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যাবে চীন। তাঁর মতে, চীনের বর্তমান প্রবৃদ্ধির যে ধারাবাহিকতা তা অব্যাহত থাকলে এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যাবে দেশটি।
দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই ২০০৩ সালে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস এক গবেষণাপত্রে জানায়, ২০৪১ সাল নাগাদ চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে।

তবে মাঝে ২০০৭-০৯ সালে বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকট তৈরি হয়। সেই সংকটের সময় গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনেকটা দূরবর্তী মনে হয়েছে।
তবে এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ব্যবধান কমে আসতে শুরু করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র নানা কারণে হোঁচট খেয়েছে, চীনের দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে; সেই সঙ্গে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের ধারাবাহিক উত্থান হয়েছে। ফলে ২০১০ সাল নাগাদ চীনের জিডিপির আকার যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ হয়ে ওঠে।
গোল্ডম্যান স্যাকস তখন জানায়, ২০৪০-এর দশকে নয়, চীন ২০২০-এর দশকেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে দ্য ইকোনমিস্ট আরো বেশি আশাবাদী ছিল। তারা নিজেরা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার আমলে হিসাব করে বলে, ২০২৯ সালেই চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।
কিন্তু সেই পূর্বাভাসের পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে দ্য ইকোনমিস্ট শুধু চীনের প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি নিয়েই চিন্তিত নয়, বরং তারা চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময় হার নিয়ে চিন্তিত। হঠাৎ করেই ইউয়ানের মূল্যবৃদ্ধির ধারা থেমে গেছে।

চীন আনাড়ির মতো ২০১৫ সালে ইউয়ানের অবমূল্যায়ন করে, এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়ে যে ভবিষ্যতে ইউয়ানের আরো দরপতন হতে পারে। এতে দেশটির বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার দিনক্ষণ আরো পিছিয়ে যায়।
২০১৫ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) পূর্বাভাস দেয়, ২০৩২ সালের আগে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদিও তার ১২ মাস আগেই ইআইইউ বলেছিল, চীন ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যাবে। এভাবে দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে একসময় আবার সন্দেহ সৃষ্টি হয়, আদৌ চীনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না। এরই মধ্যে দেশটির উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যায়, সঙ্গে কমে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। চীনের শ্রমশক্তি এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে, যে হ্রাসের গতি নিকট ভবিষ্যতে আরো কমবে বলে ধারণা করা হয়।

জাতিসংঘের পূর্বাভাস, ২০৩০-এর দশকের মধ্যে চীনের ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ কোটির বেশি কমে যাবে। এই বাস্তবতায় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস বলেছে, চীন যদি ২০৩০-এর দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে না যায়, তাহলে তারা হয়তো আর কখনোই তাকে ধরতে পারবে না।
ওইসিডি, দ্য লৌয়ি ইনস্টিটিউট ও দ্য সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ বলেছে, ২০৩০-এর দশকের কোনো এক সময়ে চীনের জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে। ইআইইউ এখন বলছে, ২০৩৯ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে। এই পূর্বাভাস অবশ্য ২০ বছর আগে গোল্ডম্যান স্যাকসের করা পূর্বাভাসের খুব কাছাকাছি।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *