সৌদির ১১ খাতে বাণিজ্য বিনিয়োগের সম্ভাবনা

সৌদির ১১ খাতে বাণিজ্য বিনিয়োগের সম্ভাবনা

বাণিজ্য ডেস্ক: বাংলাদেশের খাদ্য, জ্বালানি, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা (লজিস্টিকস), উৎপাদনসহ ১১টি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছে সৌদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল। তবে নির্দিষ্ট কোনো খাতের কথা তারা উল্লেখ করেনি।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের প্রশংসা করেছেন সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী। এই অঞ্চল ঘিরে ভবিষ্যতে আরো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক বিজনেস নেটওয়ার্ক বৈঠকে এ বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা। দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই এ বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০০ কোটি ডলার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এফএমসিজি (ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস), ভারী যন্ত্রপাতি, অটোমোবাইল বা গাড়ি, স্মার্ট ফার্মিং, হালাল পণ্য, ফিনটেক প্রযুক্তি, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন সৌদি আরবের বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ এ আল ফালিহ। তিনি বলেন, ‘এত দিন বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুধু কয়েকটি খাতে বিদ্যমান ছিল, এখন উভয় দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাণিজ্যকে সহজ করার সময় এসেছে। এখন প্রয়োজন সেই উপায়গুলো খুঁজে বের করা।’ বাংলাদেশের প্রতি সৌদি সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সালমান এফ রহমান বলেন, বিশ্ববাণিজ্যে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ সেই সুযোগকে আরো প্রসারিত করবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রেট সি গেটওয়ের সঙ্গে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে ২২ বছরের চুক্তি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ল্যান্ডলর্ড বন্দর ধারণার যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রাম।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, সাম্ভাব্য বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের সফররত উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। দুই দেশের নেটওয়ার্কিং বিজনেস মিটিংয়ে খাদ্য, জ্বালানি, লজিস্টিকস, উৎপাদনসহ ১১টি খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই বিনিয়োগ ও বাণিজ্য অগ্রগতি নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু হয়নি।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬.০৩ শতাংশ।’ ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে উল্লেখ করে তিনি সৌদি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহবান জানান।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও সুবিধা রাখার পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করেছে।’
সৌদি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৩০০ একর জমি বরাদ্দ রেখেছে।’ বরাদ্দকৃত জমিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে সৌদি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্য ইপিজেডগুলোতেও বিনিয়োগের জন্য সৌদি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘রূপকল্প ২০৩০-এর অংশ হিসেবে সৌদি আরবে এই মুহূর্তে দক্ষ শ্রমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’ বাংলাদেশের দক্ষ তরুণরা এই চাহিদা পূরণ করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ থেকে দক্ষ তরুণ মানবসম্পদ নেওয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান।
সৌদি আরবের বিনিয়োগবিষয়ক উপমন্ত্রী বদর আই আলবদর বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উন্মুখ সৌদি আরব। বাংলাদেশে আমরা বহুমুখী বিনিয়োগ করতে চাই।’ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কয়েকটি খাত দিয়ে বাণিজ্য শুরু করলেও ভবিষ্যতে সৌদি আরব আরো বেশি খাতে বাণিজ্যে আগ্রহী বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রতি সৌদি আরবের চলমান সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন এই সৌদি উপমন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার রাতে একই হোটেলে সৌদি আরবের সফররত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সম্মানে এক নৈশ ভোজের আয়োজন করে এফবিসিসিআই।
বৈঠকে সৌদি বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আয়াদ আল আমরি, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈশা ইউসেফ ঈশা আল-দুহাইলান, এফবিসিসিআই সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মো. মুনির হোসেনসহ বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *