সিন্ডিকেট দমনে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

সিন্ডিকেট দমনে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

করোনা অতিমারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। আমাদের দেশ তো বটেই, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের মতো পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। তবে সেসব দেশ মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে সফল হলেও আমরা পারিনি। দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতির ঘোড়া লাগামহীন হয়ে পড়েছে। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আগস্টে দুই অঙ্ক ছুঁইছুঁই করে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে।
বিপরীতে মজুরি বৃদ্ধির হার পাল্লা দিচ্ছে কচ্ছপগতিতে। একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে। আর মজুরি বেড়েছে দশমিক ০৬ শতাংশীয় হারে। ফলে মূল্যস্ফীতি গিলে ফেলছে মানুষের মজুরি। বাজারের উত্তাপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রায় বিরাজ করছে চরম সংকট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ব্যয় বাড়লেও আয়ের ক্ষেত্রেও যদি সামঞ্জস্য থাকত, তাহলে এ সমস্যাটি সংকটে রূপ নিত না। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ টিকে থাকার জন্য সঞ্চয় ভেঙে অথবা ঋণ করে খাচ্ছেন। কিন্তু যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, তাদের সঞ্চয়ও নেই, কেউ ধারও দেন না। এ অবস্থায় তারা সন্তানদের পড়ালেখা, চিকিৎসা খরচ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতেও না কুলালে খাবার খরচ কমিয়ে তিন বেলার পরিবর্তে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছেন।
যদিও বাস্তবতা সেখানেও নিষ্ঠুর! কারণ সিন্ডিকেটের থাবা এখন গরিবের খাবারেও পড়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক থাকলেও কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে ডাল, আলু ও ডিমের দাম। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিও মিলছে না। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের খাবারের তালিকায় এখন ডাল, আলুভর্তা ও ডিমের জোগান দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পণ্যের দাম হুহু করে বাড়লেও বাজার মনিটরিংয়ের অভাব লক্ষণীয়। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেমন বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন, পাশাপাশি টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে বেশি করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করাও বাঞ্ছনীয়। এতে মধ্য ও নিম্নবিত্তের কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হবে। মনে রাখতে হবে, সিন্ডিকেট সৃষ্ট কৃত্রিম মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের জীবনযাত্রা হুমকিতে পড়লে বাকিরাও ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *