সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের যুগ শুরু

সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের যুগ শুরু

জিন্নাতুন নূর: গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাস করার যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর আরেকটি গভীর সমুদ্রে ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলো। এ প্রক্রিয়ায় তেল খালাস শুরু হলে সরকারের বার্ষিক সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কর্তৃপক্ষ বলেন, সৌদি আরব থেকে আমদানিকৃত ৮২ হাজার টন ক্রুডবোঝাই তেলবাহী জাহাজ থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৬৫ মেট্রিক টন তেল খালাস হয়েছে। আশা করা হচ্ছে রবিবার মধ্যরাত ২টার দিকে পুরো তেল খালাস হয়ে যাবে। প্রথমে ক্রুড দিয়ে তেল খালাস কার্যক্রম শুরু হলেও পরে ডিজেল দিয়ে জ্বালানি তেল খালাস কার্যক্রম শুরু হবে। আর তখন মাতারবাড়ী তেল সংরক্ষণাগার থেকে পতেঙ্গা তেল সংরক্ষণাগার পর্যন্ত এই তেল পৌঁছে দেওয়া হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পুরো কারিগরি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর বিকালে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার কাছে বঙ্গোপসাগরে নোঙর করা বড় তেলবাহী অয়েল ট্যাংকার থেকে সৌদির আমদানিকৃত জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ক্রুড খালাস শুরু হয় পাইপলাইনের মাধ্যমে। কিন্তু ক্রুড খালাস শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত শেষে এবার চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়নি। সৌদি থেকে আমদানি করা তেল খালাসে এসপিএম প্রকল্পের আওতায় বঙ্গোপসাগরে স্থাপন করা হয় ভাসমান জেটি (এসপিএম বয়া)। এর মাধ্যমে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মহেশখালীতে স্থাপিত ট্যাংক ফার্ম এলাকার ট্যাংক স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সেখান থেকে এসব তেল নিয়ে আসা হবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাংকে।


বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) খালিদ মাহমুদ গতকাল প্রকল্প এলাকা থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, সৌদি থেকে আমদানি করা ৮২ হাজার টন ক্রুডবোঝাই তেলবাহী জাহাজ থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৬৫ মেট্রিক টন তেল খালাস হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এই তেল খালাস শুরু হলেও এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। ক্রুড দিয়ে জ্বালানি তেল খালাস প্রক্রিয়া শুরু হলেও এরপর ডিজেল দিয়ে জ্বালানি তেল খালাস প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে। আর এর মধ্য দিয়েই এসপিএম প্রকল্পটি মেকানিক্যালি অ্যাকটিভ হবে। প্রাথমিকভাবে গভীর সমুদ্র থেকে তেল মাতারবাড়ী তেল সংরক্ষণাগারে যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপে এই তেল মাতারবাড়ী থেকে পতেঙ্গা তেল সংরক্ষণাগারে পৌঁছে যাবে।

বিপিসি কর্তৃপক্ষ আশা করছেন ডিসেম্বরের মধ্যে এই পুরো প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন শেষ হবে। তারা জানান, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গভীর সমুদ্রে নোঙর করা বড় জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল খালাসে আর লাইটার জাহাজের প্রয়োজন হবে না। পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় খালাস হবে ১ লাখ ২০ হাজার টন তেল, যা আগে খালাসে সময় লাগত ১২ দিন। এর ফলে সারা দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহেও গতি বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *