লোকসানে ৭০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ

লোকসানে ৭০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ

লোকসানে ৭০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ

রাজশাহী সংবাদদাতা: পোলট্রি খাবারের দাম বাড়লেও তুলনামূলক বাড়েনি মুরগি ও ডিমের দাম। বিক্রির টাকায় উঠছে না উৎপাদন খরচও। এতে লোকসানে পড়েছেন রাজশাহীর ক্ষুদ্র খামারিরা। ফলে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন পোলট্রি খামারিরা। অন্যদিকে দফায় দফায় মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও মধ্যস্বত্বভোগী আর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এর সুফল পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র খামারিরা। রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজার পরিস্থিতিতে বর্তমানে মুরগির চাহিদা কম থাকায় বাজার দর পড়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় রাজশাহীতে প্রায় ৭০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ৩ দশক আগে ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে মুরগির খামার গড়ে তোলেন রাজশাহী নগরীর হেতেম খাঁ এলাকার শফিকুল ইসলাম। দুই দশক ভালোভাবে চললেও বিপত্তি বাধে ২০১২ সালের পর থেকে। কিন্তু বড় ধাক্কা খেয়েছেন করোনার প্রথম বছরেই। ১৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে গুটিয়ে নিয়েছেন ব্যবসা। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পরের বছর ৩ হাজার লেয়ার মুরগি পালন করেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই লাভের মুখ দেখতে পারছিলেন না। খাবারের দাম বাড়ার কারণে দিন দিন আশাহত হয়েছেন তিনি। শফিকুল বলেন, খুচরা বাজারে দাম থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে একের পর এক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ বছর ব্রয়লার মুরগি না থাকলেও ডিম বিক্রি করে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এ খামারি আরও বলেন, গত তিন বছরে ১৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ব্রয়লার পালন ছেড়েছি। একটা ৯ লাখ টাকার শেড পড়ে আছে। পোলট্রি সেক্টর ঝুঁকির সম্মুখীন। বলা যায়, খামারিরা পথে বসেছেন। ডিমের উৎপাদন খরচ এখন ১০ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৫০ টাকা পিস কিনে কেজিতে ৯০ টাকা করে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়। ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। বাগমারা উপজেলার দামনাশ এলাকার লেয়ার খামারি হাসানুল ইসলাম বলেন, খাদ্যের দাম অনেকটা বেড়েছে। ১৬০০ টাকার খাবারের বস্তা এখন ৩৪০০ টাকা। পাইকারি ডিমের দাম ১২ টাকা পিস হলে লাভ হবে। এ ছাড়া ব্যবসা ছাড়তে হবে। এ বছর দেখব, এরপর খামার ব্যবসা ছেড়ে অন্য কিছু করব। পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের আলেয়া বেগম বলেন, খামারে যে পরিশ্রম করতে হয় তাতে লাভের কোনো আলোচনা করা যাবে না। ৬০ দিনে সোনালি মুরগি বিক্রির উপযোগী হয়। আমার খামারের মুরগি বিক্রির উপযোগী হয়ে গেছে।

পাইকাররা প্রতি কেজি মুরগি ১৯০ টাকা দর করছেন, যেখানে আমার খরচ পড়েছে ২৩০ টাকা। হিসাব করে দেখেছি, এ পর্যায়ে মুরগি বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের লোকসান যাবে। কিছু করার উপায় নেই, বিক্রি করতে হবে। লোকসান একবার যায় আবার আরেক চালানে কিছু লাভ আসে। সেটা দিয়ে আবার খামার চালু রাখি। এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি। খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ। বহুবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। কোনো কাজ হয় না। পোলট্রি খাবারের বর্তমান দাম খামার চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ডিমের দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় কম। প্রতি পিস ডিমে ৩ টাকা লোকসান দিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্যের দাম কমানো, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সঠিক বাজার নির্ধারণ এখন জরুরি প্রয়োজন। তা না হলে পোল্ট্রি খাত টিকবে না।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, ডিম ও মুরগির দাম ওঠানামা হয়। লাভের বিষয়টা আসে খামার ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের পরিমাণসহ নানা বিষয়ের ওপর। এর আগে ডিমের দাম কমে যাওয়ার কারণে খামারিরা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। প্রাণিসম্পদ দফতর বিষয়টি দেখছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *