মোর্শেদের আলো দ্বারা নিজেকে আলোকিত করুন -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

মোর্শেদের আলো দ্বারা নিজেকে আলোকিত করুন -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

বিশেষ সংবাদদাতা: আমাদের মহান মোর্শেদ আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) সারা জীবন চেষ্টা করেছেন আপনার আমার মতো হতভাগা মানুষকে আশেকে রাসুল বানানোর জন্যে। তিনি ওনার জীবনের প্রতিটি সময় অতিবাহিত করেছেন আশেকে রাসুলকে আল্লাহ্কে পাওয়াতে। সকাল ১০টায় তিনি নামতেন সেই দুপুর পর্যন্ত দেখা করতেন। আবার দুপুরে খানা খাওয়ার জন্যে বাসায় যেতেন আবার বিকেলে নামতেন। কখনো কখনো বিকেলেও একবেলা দেখা করে গিয়েছেন মাঝখানে। আবার বাদ মাগরিবের সময় নেমেছেন বাদ এশা পর্যন্ত থেকেছেন; তিনবেলা। কখনো প্রয়োজন হলে বা অনেক সময় মেহমানরা এসেছে তার জন্য চারবেলা পর্যন্ত নিচে নেমেছেন। নেমে আশেকে রাসূলদের সাথে দেখা করেছেন; আপনাদের নালিশ শুনেছেন; আপনাদের বিপদ-আপদের কথা শুনেছেন। শুধু কি তাই? লক্ষ-কোটি আশেকে রাসুল বিপদে পরে দেশ-বিদেশ থেকে চিৎকার করে ডেকেছে, বাবা আমি বিপদে পড়েছি আপনি আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। তিনি ছুটে গিয়েছেন সেই মুরিদের বাড়িতে, সেই মুরিদের দরজায় বিপদ থেকে সাহায্য করার জন্যে। তিনি বড় বড় বই লিখে আশেকে রাসুলদের মুক্তির পাথেয় তৈরি করেছেন। এমন একজন দয়াল মোর্শেদ যার এই পরিশ্রমের ফসল দেওয়ানবাগ শরীফের ১১টি দরবার শরীফ; ২ শতাধিক খানকাহ্ শরীফ; ৫ শতাধিক জাকের মজলিস এবং সারা বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলামের জাগরণ। এটা একমাত্র আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর কৃতিত্ব।

তাহলে মুরিদের কৃতিত্ব কি বা মুরিদের কাজ কি? মোর্শেদের কাজ হচ্ছে মুরিদকে আলোকিত করা, মুরিদের কাছে আলো ছড়ানো। আর মুরিদের কাজ হচ্ছে মোর্শেদের কাছ থেকে সেই আলো নিয়ে নিজের অন্তরে সেই আলোকে প্রতিস্থাপন করা। মুরিদ যতক্ষণ পর্যন্ত আপন মোর্শেদের কাছ থেকে সেই আলো গ্রহণ করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই মুরিদ মুরিদ হবে না, মারিদ বা বিমারি অসুস্থ হয়ে থাকবে। সেই অসুখের নাম হলো কামের দ্বারা আক্রান্ত অসুখ; ক্রোধের দ্বারা আক্রান্ত অসুখ; লোভের দ্বারা আক্রান্ত অসুখ যা আমরা সমাজে করে থাকি।

গত ৫ আগস্ট, শুক্রবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের অনুমতিক্রমে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা.আ.) হুজুর বলেন, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম থেকে শুরু করে যত পাপাচারে লিপ্ত হই মূলে এই পাপাচারগুলো হলো আত্মার বিমার বা আত্মার অসুখ। যথা- কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য। এই রিপুগুলোর দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই। মুরিদ মোর্শেদের দরবারে এসে ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করে। ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করা মানে মুরিদ আল্লাহ্কে পেয়ে গিয়েছে এই ধারণা সঠিক নয়। আমাদের মধ্যে অনেকের ধারণা, আমরা ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি করেছি আমরা আল্লাহ্কে পেয়ে গিয়েছি। মারেফতকারীগণ কিছু মারেফতও বলে এই বিষয়ে, উঠেছি মোর্শেদের নৌকায় পার করবে মোর্শেদ; আমার তো আর কিছু করার নেই। এই মারেফতের একটু সংজ্ঞা আছে, সংজ্ঞা জানতে হবে। আমি উঠেছি মোর্শেদের নৌকায়, সহীহ্; মোর্শেদ চালাবে সেই নৌকা এটাও সহীহ্। কিন্তু একটু কথা আছে, নৌকায় বসলেও কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হয়। ডানে-বামে লাফ দেওয়া যাবে না। নৌকার মধ্যে উঠে যদি ডানে একটি লাফ দেন আর বামে একটি লাফ দেন আপনিও ডুববেন সাথে বাকিগুলো সহ ডুববে।

মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা.আ.) হুজুর বলেন, আত্মার বিমার থেকে নিজের রিপুগুলোকে দমন করে নিজের মধ্যে আপন মোর্শেদের নুরকে বসাতে হয়। যিনি আপন মোর্শেদের সেই নুর নিজের মধ্যে বসাতে সক্ষম সেই মুরিদ নিজেকে আলোকিত করতে পারে। এই নুরের মালিক মোর্শেদ নয়, এই নুরের মালিক আল্লাহ্ নিজে। আল্লাহ্ তায়ালার জাত-পাক হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর সিনা মোবারক হয়ে মোর্শেদের সিনায় সেই ফায়েজ পড়ে। পরবর্তীতে ঐ ফায়েজ এসে আপনার সিনায় পড়ে। যদি কেউ ফায়েজকে ধারণ করতে চায় তাহলে তার সিনার মধ্যে পাত্র তৈরি করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সকলের জন্যে রহমত একই রকম পাঠান। যার ধারণ ক্ষমতা যতটুকু তিনি ততটুকু ধারণ করতে পারেন। যার ধারণ ক্ষমতা যত কম তিনি তত কম ধারণ করতে পারেন। বোতলের মুখ খুলে দিলাম, আপনার ভিতরের ধারণ ক্ষমতা এইটুকু (বোতলের ক্যাপের পরিমাণ), দেখুন! আপনার মধ্যে এই আধা লিটার ঢালা হলে কি হবে? কাজ হবে? নিজেকে ধারণ করতে হয়। সাধনায় বসে যিনি নিজের পাত্রকে বড় করতে পেরেছেন তিনি বড় নেয়ামত, রহমত ধারণ করে থাকেন। আর যিনি মোর্শেদের কদমে এসে নিজের পাত্রকে এইটুকু (বোতলের ক্যাপের পরিমাণ) করে রেখেছেন! ২০ বছর তরিকা করেছেন মোরাকাবা করেননি, সাধনা করেননি, নিজের ভিতরের পাত্রকে বড় করেননি এই যে, দেখুন আপনার পাত্রের অবস্থা এইটুকু (বোতলের ক্যাপের পরিমাণ)। মোর্শেদের দয়া, আল্লাহর দয়া, রহমত যতই আপনার ভিতরে অবতীর্ণ হোক আপনি রাখতে পারেন না, সব উপচে পরে যাচ্ছে। কেন মোরাকাবা করতে হয়? মোরাকাবা করতে হয় নিজের ভিতরের পাত্রকে বড় করার জন্যে, ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যে। প্রথমে যদি মোরাকাবা করেন এই বোতলের পানির মতো হাফ লিটার ফায়েজ ধারণ করতে পারবেন। সাধনা করুন, সাধনা করতে করতে পাত্র যখন আরও বড় করবেন তখন হাফ লিটার নয় আপন মোর্শেদকে নিজের ভিতরে ধারণ করতে পারবেন। আরও মোরাকাবা করুন, মোরাকাবা করতে করতে আরও ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন। এইবার দেখবেন মোর্শেদের সাথে রাসুল (সা.)-কে ধারণ করলেন। মুরিদের সাধনা শেষ হবে না। মুরিদ যখন আরও সাধনা করবে, করতে করতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে। এইবার দেখবে ৩ জন মহামানবকে ধারণ করা যায়। একজন মোর্শেদ, একজন রাসুল, আর একজন আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন আপনার ভিতরে বসে থাকবে। ইহা সাধনালব্ধ জ্ঞান, কোনো কিতাব এই বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারে না। শুধুমাত্র যিনি আল্লাহ্কে পেয়েছেন এমন মহামানব এই শিক্ষা দিতে পারেন। আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর কদমে গোলামী করে আমি এই বিদ্যা অর্জন করেছি। আজ আমি আপনাদের সেই বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার জন্যে দিন-রাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছি যাতে আপনারা আমার গোলামীকৃত বিদ্যা অর্জন করে আপনি আপনার ভিতরে মোর্শেদকে ধারণ করতে পারেন, রাসুলকে ধারণ করতে পারেন এবং আল্লাহকে ধারণ করতে পারেন।

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমার মোর্শেদ সারা জীবন চেষ্টা করেছেন আপনাদের চরিত্রবান বানাতে। আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) আর আমি তো এক ব্যক্তি না। উনি আমার মোর্শেদ আমি ওনার গোলাম। বিষয় হচ্ছে কাজের পদ্ধতিও তো এক হবে না। আপনার কাজের পদ্ধতি আর আপনার ছেলের কাজের পদ্ধতি কি এক রকম? এখন আমার এবং শাহ্ দেওয়ানবাগীর আর্দশ একই, পদ্ধতিগত কিছু পার্থক্য আছে। আমি মর্ডান চিন্তা নিয়ে কাজ করি। আমার এই পদ্ধতি মোর্শেদ কেবলাজান দ্বারা স্বীকৃত। আমি যে অনলাইনে প্রোগ্রাম করি, এটা কি মোর্শেদের জামানায় করিনি? করেছি না করিনি? শাহ্ দেওয়ানবাগী অনলাইনে এসেছে না আসেনি? আজকে যদি আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী অনলাইনে না থাকতেন আপনি বলুন, এই করোনা মহামারিতে আপনারা যখন এক হতে পারলেন না, মোর্শেদকে দেখার জন্যে তখন আপনাদের অন্তর ফেটে হাহাকার করে। আপনাদের অনেক ভাই আমার কাছে ফোন করে শিশুর মতো কান্না করেছে, শিশু যেভাবে কান্না করে। কথা বলতে পারে না। আমি কি মালিককে দেখতে পারবো না? একটু কি তার চেহারা দেখতে দিবেন না, আপনারা দরবার বন্ধ করে রেখেছেন? এই দিকে দেখি মোর্শেদের চোখের পানি আপনাদের না দেখতে পেয়ে। আমি এক মসিবতে পড়ে গেলাম। মোর্শেদকে সামাল দিতে পারি না, এই দিকে আপনাদের সামাল দিতে পারি না। আশেক আর মাশুকের খেলা। তখন আমি আমার অনলাইনে ছেলেদের সাথে কথা বললাম, আমরা এরকম কিছু করতে চাই। আমরা প্রায় ৩/৪টি মিটিং করলাম। কাজ করলাম, নিজেরা ট্রায়াল করলাম। তারপরে সর্বপ্রথম পূর্নিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবির অনুষ্ঠান দিয়ে আমরা শুরু করলাম। এরপর থেকে ওনার জন্মদিনও আমরা অনলাইনে করেছি। বড় বড় অনুষ্ঠান আমরা অনলাইনে করেছি। এতে কি হয়েছে? আপনি আপনার বাড়িতে বসে পকেটের পয়সা খরচ না করে শেষে মোর্শেদকে দেখতে পেরেছেন। পেরেছেন না পারেননি? আপনাদের মনের জ্বালা কিছুটা হলেও তো নিবারণ করতে পেরেছি। তাহলে এটা তো আমার পদ্ধতি। এটা তো আর কারো পদ্ধতি না। এই পদ্ধতির সর্বশেষ অনুষ্ঠান মোর্শেদ কেবলাজানের শুভ জন্মদিন আমি আয়োজন করেছি দেশ এবং বিদেশে।

মোর্শেদ কেবলাজান আপনাদের সবার সামনে বলেছে, তিনি খুশি হয়েছেন। আমার পদ্ধতিতেই তো মোর্শেদ কেবলাজান বলেছেন, আমি খুশি হয়েছি। তাহলে কাজের পদ্ধতি এক রকম নাও হতে পারে, কিন্তু আমি আমার পদ্ধতি দ্বারা আজকে সারা বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলামকে এক সুতায় গেঁথে নিয়ে এসেছি। কি বলেন, এটা কি ভালো হয়েছে, না-কি খারাপ হয়েছে? এই যে, আমি আপনাদের এইখানে বসে কথা বলছি সারা বিশ্বে আমাকে আশেকে রাসুলেরা দেখছে। আমি বিদেশ থেকে কথা বলি, আপনারা বাড়ি-বাড়ি বসে আমাকে দেখতে পারেন। অনেকে বলে বাবাজান আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগীর ওফাতের পরে মোহাম্মদী ইসলাম না-কি স্তিমিত হয়ে গিয়েছে; মোহাম্মদী ইসলাম না-কি দুর্বল হয়ে গিয়েছে? ইহা কি সত্য কথা? আপনারা শুনলে আনন্দিত হবেন মোর্শেদ কেবলাজানের ওফাতের পরে এই দেড় বছরে আমরা ২৬ হাজার আশেকে রাসুলকে তরিকা দিয়েছি। নাম, ঠিকানাসহ লিস্টেড ২৬ হাজার আশেকে রাসুলকে আমরা নতুন এই মোহাম্মদী ইসলামে সংযোজন করেছি। আর যদি লিস্ট ছাড়া বলি, তাহলে ১ লক্ষের বেশি আশেকে রাসুলকে আমরা তরিকা দিয়েছি। প্রতি শুক্রবার আমি যে তওবা পড়ে তরিকা দেই এই হিসাব বাদ, শুধু আলেম ভাইদের হাতে বাড়ি-বাড়ি মিলাদ মাহ্ফিল করে লিস্ট করে তরিকা নিয়েছেন ২৬ হাজার আশেকে রাসুল। আল্লাহ্ যদি এই গোলামকে সুযোগ দেন, আমাকে হায়াতে জিন্দেগী দেন দুনিয়াতে এমন কোনো ময়দান তৈরি হয়নি দেওয়ানবাগীর আশেকে রাসুলদের যে ময়দান ধারণ করতে পারে। এমন কোনো ময়দান তৈরি হবে না যেখানে আশেকে রাসুলদের ধারণ করার ক্ষমতা সেই ময়দানে তৈরি হবে, অপেক্ষা করুন। আমরা থেমে যাইনি, কাজের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি।

ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা.আ.) হুজুর বলেন, আমার একটি ছোট্টো অনুরোধ শুনবেন? আজকে থেকে এখনো যারা সালাত আদায় করেন না, সালাত আদায় করা শুরু করবেন। যারা মোরাকাবা করেন না, তারা মোরাকাবা শুরু করবেন। ওয়াক্তের মোরাকাবায় যদি সময় না পান ৫ মিনিট করবেন তারপরেও করবেন আর দিনে একবার লম্বা সময় মোরাকাবা করবেন। যারা আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্যে ইবাদত করছেন না, ইবাদত করুন। যারা চরিত্রবান নন, আপনি জানেন আপনি কি পাপ করেন। আপনি যে মিথ্যা কথা বলেন, আপনি জানেন না? আপনি যে যিনা করেন, আপনি কি জানেন না? আপনি যে অন্যায় করেন, আপনি জানেন না? আপনি যে জুলুম করেন, আপনি জানেন না? অন্যের একশতক জায়গা জোর করে দখল করে রেখেছেন, আপনি জানেন না? জানেন, না জানেন না? অন্যের সম্পত্তি আপনি জোর করে হরণ করেছেন, আপনি জানেন না? মামলা দিয়ে বাজিয়ে রেখেছেন সত্য, জানেন না? এই জুলুমের খবর আপনার জানা আছে? এটা এমন রোগ যার জন্যে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। এই রোগ আপনার জানা আছে। নিজেই যেহেতু রোগ জানেন, এই রোগকে আপনিই তো দূর করতে পারেন। পারেন, না পারেন না? এই রোগকে দূর করুন। যে জুলুম করেন, তওবা পড়ুন। তওবা পড়ুন এবং জুলুম করা থেকে সরে আসুন। যিনি মিথ্যা বলেন, তওবা পড়ুন। প্রতিদিন রাতে বাদ এশার নামাজের পরে যেই মোরাকাবা করবেন, ঐ মোরাকাবায় বসে আপনি আল্লাহর কাছে তওবা পড়বেন। মোরাকাবা শুরু করার আগে আজকের দিনে যে কয়টি পাপ করেছেন আর মিথ্যা কথা বলেছেন এটা স্মরণ করবেন। আগেই মোরাকাবা করবেন না। আজকে দিনের পাপ স্মরণ করবেন যে, ঐ লোক এসেছিল তার সাথে দুটি মিথ্যা কথা বলেছি; ঐ লোক এসেছিল তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, যেটা আমার ঠিক হয়নি। রাতে মোরাকাবা করার আগে আঙ্গুলের করে বসে গুনবেন কয়টি অন্যায় করেছেন। তারপরে মোরাকাবায় বসে তওবা পড়বেন যে, আল্লাহ্ আমি এই এই অপরাধ করেছি তুমি আমাকে তোমার বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগীর অসিলায় মাফ করে দাও। পরের দিন আপনি আবার পাপ করবেন না! অবশ্যই করবেন, না বলবেন না। আপনার চেয়ে আমি বেশি জানি আপনাকে। জানি, না জানি না বলুন! আমি আপনাকে আপনার চেয়ে বেশি চিনি, আপনি আবার না বলেন কেন? আপনি অবশ্যই করবেন, অপেক্ষা করুন। অসুবিধা নেই, আপনি করুন আমি না বলি না। আবার পরের দিন তওবা পড়ুন। প্রতিদিন পাপ করবেন এবং রাতে তওবা পড়বেন। কথা বুঝতে পেরেছেন এবং চেষ্টা করবেন যতটুকু নিজের মন থেকে পাপকে কমানো যায়। এইভাবে একমাস প্রাকটিস করবেন দেখবেন আপনার দ্বারা পাপ আর সংগঠিত হবে না। কথা বুঝতে পেরেছেন!

প্রতিদিন নিজের অপকর্মগুলোকে স্মরণ করে আল্লাহর কাছে মোরাকাবায় বসে ক্ষমা চাইবেন এবং সংকল্প করবেন আগামী দিন আমি সেই পাপ আর করবো না। এইভাবে প্রতিদিন চেষ্টা করুন। একমাস পরে দেখবেন আমার কাছে আসতে হবে না, আপনিই আপনাকে ঠিক করতে পারেন। আমার কাজ আপনাকে চরিত্রবান বানানো, আমার কাজ আপনাকে আল্লাহ্কে পাওয়ানো। কত বড় মালা দিলেন, কত বড় কুরসিতে বসালেন, কত বড় সম্মান দিলেন, আমাকে কত লকব দিলেন এ দিয়ে আমার কাজ নেই। আমি এক ভিক্ষুক মানুষ। আমার অলী-আল্লাহ হয়ে কি লাভ যদি আপনাকে আমি মুক্তির ব্যবস্থা করতে না পারি? আমার অলী-আল্লাহ্ হয়ে কি লাভ যদি আপনার সিনায় সেই নুর দিতে না পারি? আপনার কবরের সেই যন্ত্রণা যদি কমাতে না পারি? এই অলী-আল্লাহ হয়ে লাভ নেই, এই পদবির দরকার নেই। আমার প্রাপ্য সম্মান সেইদিন, যেদিন আপনি আল্লাহ্কে পাবেন। আমার ইজ্জত সেদিন, যেদিন আমি আপনার মাঝে সেই আলো তৈরি করে দিতে পারবো। আমার প্রশংসার প্রয়োজন নেই, আমার প্রশংসা হলো আপনার অন্তরকে পবিত্র করা। আমার বড় মালা, বড় কুরসির দরকার নেই, আমার দরকার আপনার কলুষিত অন্তরকে আলোকিত করা। ব্যক্তি শুদ্ধ হলে সমাজ শুদ্ধ হয়। আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী বলতেন, আপনারা চরিত্রবান হবেন। আমাদের চরিত্রবান হতে হবে; তিনি বলেছেন, আপনারা ওয়াজিফার আলম করবেন। আমি কি এর বাইরে কথা বলছি? আমি ঐভাবে বলিনি, আমি বিশ্লেষণ করে, টু দ্য পয়েন্ট ধরে ধরে বলেছি। কথা এক আছে! আমি তো মোর্শেদের কদমে গোলামী করে বেহায়া হয়েছি।

আর নেতা তো বহু আগেই ছিলাম, জন্মের পর থেকে মানুষ আমার পা ধরে সালাম করে। কখন থেকে নেতা? ৭ দিনের দিন যেদিন দাঁড়িয়েছি তখন থেকে নেতা। ঐ নেতা ছেড়ে এখন আসছি গোলামীর পথে। আমি এখন হয়েছি গোলাম। আর তার চেয়ে বড় পরিচয় কি হয়েছে এখন, জানেন? ভিক্ষুক হয়ে গিয়েছি। আমি আমার জীবনে আমার মালিকের কাছে এতো ভিক্ষা চাইনি, গত দেড় বছরে মোর্শেদের ওফাতের পরে যা চেয়েছি। আল্লাহর কসম, আমি নিজের জন্যে চাইনি। এই দেড় বছর দুই হাত তুলে শুধু আপনাদের জন্যে চেয়েছি। আমার যেই ভাই মারা গিয়েছে; যেই ভাই লাঞ্চিত হয়েছে; যেই ভাই নির্যাতিত হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চেয়েছি। আল্লাহ্ আমি ভিক্ষুক, ভিক্ষা চাই। তুমি তাকে মাফ করে দাও; তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আবারও আমার মালিকের কাছে আপনাদের জন্যে ভিক্ষা চাই, আমার মালিক যাতে এই আশেকে রাসুলদের কবুল করে নেন; আপনাদের বিপদ-আপদ দূর করে দেন; আপনাদের অভাব-অনটন দূর করে দেন; আপনাদের মকসুদ পূর্ণ করে দেন; যিনি যেই রোগে অসুস্থ, যে যে কাজে কষ্টে আছেন, যার যেই মকসুদ আমার মালিক যাতে আপনাদের পূর্ণ করে দেন। আমিন!

পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *