মহান আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য আমাদের সাধনা করতে হবে-ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)

মহান আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য আমাদের সাধনা করতে হবে-ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)

বিশেষ সংবাদদাতা: মোহাম্মদী ইসলাম একটি আদর্শের নাম। যে নাম আমার মোর্শেদ কেবলাজান আমাদের মাঝে দিয়েছেন। যদিও এই নাম ১৪শ বছর আগে থেকেই হওয়ার কথা। আমার মোর্শেদ কেব্লাজান ইসলামের সাথে মোহাম্মদ (সা.)-এর নাম জুড়ে দিয়েছেন। ইসলাম অর্থ শান্তি। আমরা মোহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী হিসেবে নিজেদের মধ্যে শান্তি বিরাজ করতে চাই। সেজন্যে আমরা মোহাম্মদী ইসলাম বলি। মোহাম্মদী ইসলামের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে পাওয়া, আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং আল্লাহ ইচ্ছায় নিজেকে পরিচালিত করা।
মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর গত ২৬ মে শুক্রবার বাণী মোবারক প্রদান করতে গিয়ে এই কথা বলেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, প্রত্যেক মানুষকে তার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছি অতএব মৃত্যু অনিবার্য। আমরা যে যত বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, হাফেজ, আলেম; যাই হই না কেন ধনী, গরিব, উঁচু, নিচু প্রত্যেককে এই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ্ আমাদের জগতে নিজের স্বাধীনতা দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, আমরা চাইলে সঠিক, বেঠিক বিবেচনা করতে পারবো। আমরা নিজেরা মালিককে খুঁজবো এবং তার সন্ধান করবো। কিন্তু আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে যে, আমার আয়ু ৫০, ৬০ বা ৭০ বছরের। এই সময়কালের মধ্যে নিজের কর্ম দ্বারা মালিককে খুঁজে বের করবো এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন করবো এবং যাওয়ার আগে মালিকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে, এই ৫০ বছরের পরীক্ষায় আমি পাশ, এই ৬০ বছরের পরীক্ষায় আমি পাশ। আর যদি তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারি, তাহলে পরীক্ষায় ফেইল।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আল্লাহ্ তা’য়ালা নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল এবং বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্দের পাঠাচ্ছেন। যাতে অলী-আল্লাহগণ এসে ঐ যুগের মানুষকে আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর পথে ধাবিত করতে পারেন এবং তাদের চরিত্রবান বানাতে পারেন। দুনিয়ার আলেম এবং অলী-আল্লাহদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, আলেমরা মনোনীত হন অপর আলেমের দ্বারা। অলী-আল্লাহ্ অর্থাৎ সূফী সাধকগণ মনোনীত হন আল্লাহর দ্বারা। আলেমদের জ্ঞান থাকে কোরআন, হাদিস এবং তাফসিরের বিষয়ে। অলী-আল্লাহর জ্ঞান থাকে আল্লাহময় জগতের। আলেমরা শরিয়তের জ্ঞানে জ্ঞানী হন। অলী-আল্লাহগণ শরিয়ত, মারফত আবার কেউ কেউ শুধু মারফতের জ্ঞানেও জ্ঞানী হন। ২টিকে এক কাতারে আনা যাবে না। আলেম-ওলামারা আল্লাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে পারবেন। কোনটি করলে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হবেন, আলেম-ওলামারা সেটি বলতে পারবেন কিন্তু আল্লাহর পথে হাঁটাতে পারবেন না।সেইজন্যে মালিককে পেতে হলে যিনি মালিককে পেয়েছেন, এমন মহামানবের কাছে যেতে হবে, তার বিদ্যা অনুসরণ করতে হবে এবং তার চরিত্রে নিজেকে চরিত্রবান বানাতে হবে। তাহলে দিন শেষে আপনি মালিকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমরা নামাজ শুরু করার পূর্বে বলি, আল্লাহ্ আমি তোমাকে দেখছি না কিন্তু তুমি তো আমাকে দেখছো। আমি তোমার কথা শুনছি না কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনছো। আমি নালায়েক এই নামাজে যখন সিজদা দিবো, আমার সিজদা তুমি কবুল করে নাও। আমার সিজদা যাতে শুধু কেবলা না হয়, আমার সিজদা যাতে তোমার কদম মোবারকে হয়। তোমাকে সামনে হাজির, নাজির এবং ওয়াহেদ জেনে সিজদা করতে চাই। তাহলে আমরা শরিয়ত থেকে নামাজ নিয়েছি কিন্তু মারেফত থেকে নামাজে মোরাকাবার বিদ্যা অর্জন করেছি। তাই নামাজ কিভাবে পড়া যায় এই বিদ্যা আমরা শরিয়ত থেকে নিতে পারবো কিন্তু নামাজ কিভাবে কবুল হবে এই বিদ্যা অলী-আল্লাহর কাছ থেকে নিতে হবে। এইজন্য যুগে যুগে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বন্ধুদের পাঠিয়েছেন যাতে আমরা সঠিক বিদ্যা অর্জন করতে পারি। সঠিক পথে আল্লাহ্ ও রাসূল (সা.)-এর জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ্ ও রাসূল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আল্লাহ্কে পাওয়া প্রত্যেক আশেকে রাসুলের মূখ্য উদ্দেশ্য। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, জন্ম যেহেতু হয়েছে মৃত্যু আমাদের হবেই। আমি আপনার ঐ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়াতে শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছি। যাতে আপনি প্রস্তুতি নেন। আমি গোলামকে কথা দিন, নিজের পরীক্ষার জন্যে একটু প্রস্তুতি নিবেন! ঐ পরীক্ষা, যেই পরীক্ষায় মালিকের সন্তুষ্টি অর্জন হবে। ঐ পরীক্ষা, যেই পরীক্ষায় মালিকের খুশি অর্জিত হবে। ঐ পরীক্ষার প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে, ঐ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন। শুধু আমার বক্তব্য শোনলে কাজ হবে না। কাজ হবে সেই দিন, যেই দিন আমার বক্তব্যে আপনি পরিবর্তিত হবেন। কাজ হবে সেই দিন, যেইদিন আপনি নিজেকে আলোকিত করতে পারবেন। প্রত্যেক আশেকে রাসুলকে নিজেকে চরিত্রবান বানাতে হবে। আপনি চরিত্রবান হন, আপনার সন্তান চরিত্রবান হবে। আপনি মিথ্যা বললে, আপনার সন্তান মিথ্যা বলবে। আপনি জুলুম করলে, আপনার সন্তান জুলুম করবে। আপনি পরের হক নষ্ট করলে, আপনার সন্তান পরের হক নষ্ট করবে। তাই নিজেকে পরিবর্তন না করে সন্তানকে জ্ঞান দিবেন না। তাহলে এই জ্ঞান বিন্দুমাত্র কাজে আসবে না। সন্তানদের দায়িত্ব হচ্ছে পিতা-মাতার কথাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। আমাদের অনেক জাকের ভাই-বোনেরা আমাকে বলেন, তাদের মনের কষ্ট সন্তানরা ওনাদের কথা শোনেনা। যারা পিতা-মাতার কথা শোনেন না, আপনাদের বলি, আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন পিতা-মাতার চেয়ে বড় মহব্বতের জগতে আপনার কাছে আর কেউ নেই। আপনার বাবা-মায়ের চেয়ে আপনাকে বেশি ভালো এই জগতে আর কেউ বাসবে না। যার পিতা অসুস্থ, তার পিতার সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের জন্যে ফরজ। যার মাতা অসুস্থ, সামর্থ্য অনুযায়ী মাতার সেবা করা ফরজ। পাশাপাশি স্ত্রীর হক প্রত্যেক স্বামীর রাখতে হবে, স্বামীর হক স্ত্রীর রাখতে হবে এবং সন্তানের হক প্রত্যেক বাবা-মায়ের রাখতে হবে। মনে রাখবেন, আমরা তো আশেকে রাসূল। আমাদের প্রত্যেক সম্পর্কের মূল্য দিতে হবে। আমি সমাজের চিন্তা করি না, আমি আপনার চিন্তা করি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সম্পর্ককে মূল্য দিবেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে সবাই সবার সম্পর্কের মূল্য দিবেন। এটি আমাদের দায়িত্ব, এটি আমাদের কাজ। আমরা আমাদের সম্পর্ককে মূল্য দিবো, আমরা সৎ পথে চলবো, আমরা অন্যায় থেকে নিজেকে দূরীভূত রাখবো, আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর পথে নিজেকে ধাবিত করবো, আমরা নিজেকে চরিত্রবান বানাবো। তাহলেই মোহাম্মদী ইসলাম আগাবে।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আপনি বলবেন আদর্শের কথা অথচ আপনার মধ্যে আদর্শ নেই। আপনি বলবেন সৎ পথে চলো অথচ আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। আপনি বলবেন শয়তানি বন্ধ করো অথচ আপনিই শয়তানি করছেন। তাহলে তো মোহাম্মদী ইসলাম হবে না, মোহাম্মদী ইসলাম ধ্বংস হবে। এখনো এই তরিকাতে বহু মানুষ আছেন, যারা বলেন আমি রাসুলের প্রকৃত আশেক, আমি দেওয়ানবাগীকে অনেক ভালোবসি অথচ ভিতর খুললে দেখা যাবে বিন্দুমাত্র ভালোবাসে না। ভালোবাসার ভান করছে। আমি ভানের তরিকা করি না। আমি চরিত্রবান হওয়ার কথা বলি। আমাকে কে কি বলবে? কে মন্দ বলবে? কে ভালো বলবে? আমার কিছু আসে যায় না। আমি এসেছি আপনাকে সঠিক পথের কথা বলতে। যত বাঁধা আসুক, যত মুসিবত আসুক আমি সঠিক পথের কথা বলবো। আমি আমার পথ থেকে সরবো না। আমি আমার আশেকে রাসুলদের সঠিক পথে আনার সঠিক জ্ঞান তো দিতে পারি। আমি সেই কাজটুকু করছি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তৌফিক দান করুক।
পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *