বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন আশেকে রাসুলদের মিলন মেলার অনুষ্ঠান – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)

বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন আশেকে রাসুলদের মিলন মেলার অনুষ্ঠান – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)

বিশেষ সংবাদ দাতা: আসছে ২৩শে ফেব্রæয়ারি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। আমাদের মহান মোর্শেদ শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ্.)-এর শুভ জন্মদিন স্মরণে আমি এই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের আহŸান করেছি। এই সম্মেলনে মহান মালিক যদি দয়া করে সুযোগ দেন, দেশ এবং বিদেশ থেকে প্রতিনিধিরা সম্মেলনে উপস্থিত হবেন। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানাধীন বাবে বরকত দরবার শরীফে এই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে মিলন মেলার আয়োজন ইনশাল্লাহ্ করবো। আমি আবার আপনাদের সবাইকে দাওয়াত করছি। আপনারা সম্মেলনে যোগদান করবেন এবং দলে দলে আশেকে রাসুলদের নিয়ে আসবেন, যাতে এই সম্মেলনকে সাফল্যমন্ডিত করতে পারি।

গত ১৯ই জানুয়ারি বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর এ কথা বলেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, মনে রাখবেন, একটি বছর আমরা তরিকায় কি কাজ করি; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কতটুকু কাজ করি; মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর ধর্মপ্রচারে কতটুকু কাজ করি; এই সম্মেলন হচ্ছে সেই কাজটি দেখানোর দিন। আমরা যারা ঘরোয়া মিলাদ দিয়েছি, মিলাদে নতুন নতুন আশেকে রাসুল তরিকা নিলো, এদের সবাইকে এই সম্মেলনে দাওয়াত করে আনতে হবে। তাছাড়া এলাকার স্থানীয় মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে দাওয়াত করে এই সম্মেলনে আনতে হবে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের এলাকা যেগুলো আছে সেখানে আমরা মহল্লা, গ্রাম, ইউনিটি, কমিউনিটি। সেইসব এলাকার মানুষকে দাওয়াত করে আনতে হবে যাতে সবাই এই আশেকে রাসুলের জোয়ারকে দেখতে পারে। সবাই যাতে বোঝে যে, আসলে আশেকে রাসূল কেমন? আমার মোর্শেদ কেবলাজানের ৭১ বছরের জীবনকালে যেমন দেশে-বিদেশে তার অনেক মুরিদান তৈরি হয়েছে, আবার ওনার সমালোচনাও অনেক করা হয়েছে (দেশে-বিদেশে)। এই সম্মেলনে মানুষদের দাওয়াত করে আনার মাধ্যমে তাদের ভুল ভাঙ্গানোর অনেক বড় সুযোগ পাওয়া যায় যে, আসলে কাছ থেকে এসে দেখুন, দেওয়ানবাগীর মুরিদ কেমন? আশেকে রাসুলেরা কেমন, তাদের বাগানে না আসলে বোঝা যাবে না। গোলাপের বাগানে না গেলে শুধু একটি গোলাপ হাতে নিয়ে কি গোলাপের মর্ম বোঝা যায়? কিন্তু যখন বাগানে বাগানে গোলাপ ফোটে, হাজার হাজার গোলাপের মেলা বসে, তার সুঘ্রাণে পুরো এলাকা ছড়িয়ে যায়। লাল, হলুদ, গোলাপী বিভিন্ন রঙের গোলাপ আছে। ফুলে ফুলে সুশোভিত বাগান দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। আপনার এলাকায় আপনাকে দেখে একজন আশেকে রাসুল বিচার করার চেষ্টা করে। আমরা তো সবাই পূর্ণ নই। আমার মধ্যে কিছু কম-বেশি আছে। হয়তো আমার রাগ বেশি উনি মনে করছে দেওয়ানবাগীর মুরিদের মনে হয় রাগ বেশি। আসলে কি দেওয়ানবাগীর মুরিদের রাগ বেশি? এই মুরিদের মধ্যে কি ঠান্ডা মাথার মানুষ নেই? আবার একজন নামাজ পড়ছে না, এটি দেখে হয়তো মনে করছে, আরে দেওয়ানবাগীর মুরিদ মনে হয় নামাজ পড়ে না। দেওয়ানবাগীর মুরিদরা কি নামাজ পড়ে না, নামাজ তো পড়ে। তাহলে সেই বাগানে আসলে দেখা যাবে যে, আসলে আশেকে রাসূল কেমন? তাই আশেকে রাসূলের এই বাগানকে পরিপূর্ণ করতে আপনাদের অনেক বড় গুরু দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে, এই বাগানে নিজেদের আসা এবং আশেকে রাসুল ভাইদের আপনাদের এলাকা, আশপাশের প্রতিবেশী মানুষকে দাওয়াত করে আনা। যাতে তারা দেখে আশেকে রাসূলের বাগান কেমন? আমি যে স্বপ্ন দেখি আমার এই স্বপ্ন আপনারা বাস্তবায়ন করে দিবেন না? এই স্বপ্ন, আমি বলেছি, “একদিন আসবে, যেইদিন এমন কোনো ময়দান থাকবে না, যে ময়দানে আশেকে রাসুলদের জায়গা দিতে পারবে।” এই স্বপ্ন আমি দেখি। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে তো আপনাদের কাজ করতে হবে।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, বোনদেরও কাজ করতে হবে। বোনরাও এলাকায়-এলাকায় দাওয়াত পৌঁছাবেন। আপনারা আসতে না পারেন আপনার স্বামীকে দাওয়াত পৌঁছান, আপনার সন্তানকে দাওয়াত পৌঁছান, পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দাওয়াত পৌঁছান। সম্মেলনে আসার জন্য তাদের উৎসাহিত করুন। তাদের সম্মেলনে আসার ব্যবস্থা করে দিন। তাদের বলবেন, তোমরা চিন্তা করো ন্ াআজকের দিন যাও, আমরা সংসার সামাল দিবো। স্বামী যদি সংসারের টেনশন মাথায় নিয়ে সম্মেলনে আসে, তাহলে তো স্বামীর জন্য মসিবত। তারপরে যে সকল ভাইয়েরা গোলামীতে যাচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত সম্মেলনের খেদমতে ২/৩ দিন গিয়ে থাকছেন, বোনেরা তখন তার ঘরবাড়ি সামাল দিয়ে রাখবেন। বলবেন যে, তুমি যাও আমরা তোমাদের কাজ করছি এবং বোনেরা স্বামী ওইখানে থাকা অবস্থায় সংসারকে দেখে রাখবেন এটিও কিন্তু গোলামীর অংশ হবে। অতএব, বোনদেরও এই সম্মেলনে সমান অধিকার আছে এবং সমানভাবে কাজ করার সুযোগ আছে। তাই আপনাদেরও দায়িত্ব হচ্ছে সম্মেলনের দাওয়াত পৌঁছানো, ঘরোয়া মিলাদের ব্যবস্থা করা। ঘরোয়া মিলাদে একটি আলেমকে নিয়ে আসলে সেই আলেম এসে সম্মেলনের দাওয়াত দিবেন, বাড়ি-বাড়ি কথা বলবেন। আস্তে আস্তে একটি ভালো অর্গানাইজ সমাজে তৈরি হবে। এই মোহাম্মদী ইসলামকে এগিয়ে নিতে হলে, মোহাম্মদী ইসলামের নিজস্ব কোনো চাকা নেই, যেই চাকায় মোহাম্মদী ইসলাম ঘুরবে এবং সামনে আগাবে। মোহাম্মদী ইসলাম আগায় সীনার দ্বারা। দেওয়ানবাগীর সীনা, তার আগে চন্দ্রপুরীর সীনা, তার আগে এনায়েতপুরীর সীনা, বর্তমানে কুদরত এ খোদার সীনা এবং কুদরত এ খোদার সীনা থেকে লক্ষ মুরিদের সীনা। সীনা থেকে সীনা এই মোহাম্মদী ইসলাম চলবে। এই সীনায় সীনায় ভর করে মোহাম্মদী ইসলাম কাল কেয়ামত পর্যন্ত এগিয়ে যাবে।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, যারা এই সীনায় সেই নুরে মোহাম্মদীর নুরকে ধারণ করতে পারবেন-তার ভয় নেই কবরে, তার ভয় নেই হাশরে। আর যারা ওই নুরের আশপাশে দিয়ে ঘুরবেন অথচ সীনায় নুর ধারণ করবেন না-তার ভয় আছে কবরে, তার ভয় আছে হাশরে, তার ভয় আছে সব জায়গায়। যে আল্লাহর গন্তব্য চিনে অথচ আল্লাহর গন্তব্যে গেল না; মালিককে খুশি করার রাস্তা জানে অথচ মালিককে খুশি করল না, তার জন্য তো সমস্যা আছেই। তাই আমি আমার এই সীনা থেকে আলো আপনার সীনায় দিতে চাই এবং আপনার সীনাকে আলোকিত করতে চাই। এই চাওয়া আমার একার নয়। আদম (আ.) করেছেন, একইভাবে ইব্রাহিম (আ.), মুসা (আ.), নূহ (আ.) করেছেন….। সর্বশেষ নবী মোহাম্মদ মোস্তফা আহাম্মদ মোজতবা (সা.)-ও একইভাবে সীনা থেকে সীনায় আল্লাহ্কে পাওয়ার বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। নবুওয়তের ধারাবাহিকতা শেষ হওয়ার পরে বেলায়েতের যুগে বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.), হযরত খাজা মাইনুদ্দিন চিশতী (রহ.), হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (রহ.), হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহ.), হযরত শাহ্ জালাল (রহ.), হযরত শাহ্ পরান (রহ.), হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহ্.), ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ্.), আমাদের মোর্শেদ শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ্.)-সহ যারাই (অলী-আল্লাহ্) এসেছেন তারা একইভাবে সীনার বিদ্যা শিক্ষা দিয়ে নিজের ভিতরে মালিকের সন্ধান খুঁজে পাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। যারা খুঁজে পেয়েছেন তারা হয়েছেন আল্লাহওয়ালা, আর যারা খুঁজে পাননি তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকেছেন। তাই মোর্শেদের ওফাত পরবর্তীতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলো অনলাইনের মাধ্যমে করে শুধু শাহ্ দেওয়ানবাগীর জন্মদিনে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে আমরা একত্রিত হই। আর অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলো যেমন ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.), এটি ঈদের দিন। হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্মদিন আমাদের জন্য আনন্দের দিন। এটিকে যদি আমি এক জায়গায় একত্রিত করি। অনেক বড় সমাগম হবে সত্য কিন্তু এলাকায়-এলাকায়, বাড়ি-বাড়ি এই আনন্দ আর ছড়িয়ে পরবে না। এই লক্ষ্যে সেই কথা চিন্তা করে আমি অন্যান্য প্রোগ্রামগুলো সব অনলাইনে নিয়ে এসে বা দরবার-দরবার, খানকাহ্-খানকাহ্, মজলিসগুলোতে আমরা আলাদাভাবে ছড়িয়ে নিয়ে এসে আমরা একটি বড় অনুষ্ঠান ডেকেছি। যাতে আপনাদের সুবিধা হয় ফ্রী টাইম পান তরিকায় সাধনা করার, আরাধনা করার। ইবাদত করার জন্য, সন্তুষ্টির জন্য আমি সময় দিয়েছি। যাতে পরিবারকে সময় দিতে পারেন, সন্তানকে সময় দিতে পারেন পাশাপাশি তরিকার কাজগুলো করেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আসছে বিশ্ব আশেকে রাসূল (স.) সম্মেলন আমাদের জন্য অনেক সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসছে। এই সম্মেলনে খেদমত, গোলামীর মাধ্যমে আমরা নিজেদের আমিত্ব, অহংকার, ঐশ্বর্যকে বিসর্জন দিতে পারি। সরাসরি গোলামী সরাসরি মানুষের কোনো ইবাদত নয়। মোরাকাবায় বসে আমরা যখন চোখ বন্ধ করি তখন আমরা অন্ধকার দেখি। অনেক আশেকে রাসূল যারা অন্ধকার দেখে মনে রাখবেন। এই অন্ধকারের একটি বড় কারণ হচ্ছে আমিত্ব, অহংকার এবং ঐশ্বর্য। আমি অনেক বুঝি, আমি অনেক জানি, আমি অনেক জ্ঞানী। এগুলো হচ্ছে আমার আমিত্বের কথা। এই আমিত্ব, অহংকার এবং ঐশ্বর্য বিসর্জন দেওয়ায় গোলামীর বিকল্প নেই। যারাই চিন্তা করবেন যে, আপনি অনেক বড় পদের দায়িত্বে আছেন, আপনি চোখ বন্ধ করলে মালিকের সন্ধান পাওয়া আপনার জন্য একটু কষ্ট হয়ে যায়। কেন জানেন? আপনার চাকরির কারণেই হোক, আপনার ব্যবসার কারণেই হোক অথবা আপনার জ্ঞানের কারণেই হোক। আপনি নিজেকে অনেক পন্ডিত ভাবেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনি আমি যত বড় পন্ডিতই হই না কেন আর যত বড় পাণ্ডিত্যই আমি হাসিল করি না কেন আল্লাহর জ্ঞানের কাছে আমার জ্ঞান শূন্য। শুন্য শুন্য, শুন্য মাইনাস এ থাকবে। আপনার আমার পান্ডিত্য তো কোনো না কোনো স্পেসিফিক বিষয়ে, কারো না কারো বই পড়ে। আর আল্লাহ্ যিনি সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা, যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন, যিনি জমিন সৃষ্টি করেছেন, যিনি নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন, যিনি গাছ সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার জ্ঞান তো অনেক বেশি। আমরা যদি সেই মালিককে ডাকার সময় নিজের পাণ্ডিত্যকে ফলাই, বলুন তাহলে কি কাজ হবে? এই জ্ঞানের মূল্য তার কাছে কিছু নেই।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমার মাথায়তো ঢুকে আছে আমিতো পাঞ্জেগানা নামাজ পড়ি, আমি তো হজ করেছি, যাকাত দিয়েছি। সব ভালো কাজ শেষ, আমি তো একবারে ফেরেস্তা এবং আমার তো কোনো ভুল হবে না এই যে আমার কনফিডেন্স এটিই আমাকে ডুবানোর মূল কারণ সাধনায়। এজন্য সাধনায় সহায়ক হচ্ছে গোলামী। গোলামী করলে যে কাজ আপনার করার কথা নয়, যেখানে আপনি আশা করেন আপনাকে সবাই সালাম দিবে সেখানে ঐ দরবারে গিয়ে দরবারের পাতা কুড়াচ্ছেন, মাটিতে কাজ করছেন, ক্ষেতের আইল করছেন, সম্মেলনের কাজ করছেন যেটি আপনার করার কথা নয়। আপনি কোনোদিন ব্যক্তি জীবনে এই কাজ করবেন না! আপনি মানুষকে হুকুম দিয়েছেন কিন্তু সেখানে গিয়ে আপনি করছেন। তখন কি হয় জানেন? ঐ কাজে যখন নামেন নিজের যোগ্যতা মনে পড়ে যায়, “হায়রে! এই মাটি থেকে আমার সৃষ্টি আবার এই মাটিতেই মিশতে হবে।” যত বড় জ্ঞান, যত বড় গরিমা, যত বড় ক্ষমতা, যত বড় অহংকার, যত স্বর্ণের চেয়ার, যত স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হোক, এর কোনো মূল্য নেই! সবকিছু রয়ে যাবে, শুধু আমি চলে যাবো এবং যাবো কোথায়? ঐ ধুলোমাটিতেই। ভাবুন একবার, ওই মাটি যে মাটি থেকে আপনার আমার সৃষ্টি, ওই মাটিতেই আপনাকে আমাকে মিশতে হবে। আজকে মাটিতে বসার পরে ধুলা লাগলে আমরা ঝাড়া দেই, এই যে ঝাড়া দিচ্ছি, এমন একদিন আসবে ওই ময়লা ছাড়া দেওয়ার আর কিছুই থাকবে না। ঐ ময়লাই, ঐ মাটিতেই, ঐ ধুলোবালিই আমার মুখে ওপর চাপা দিয়ে আমাকে রেখে চলে আসবে। অতএব, ওই মাটিতে যাওয়ার আগে যদি মাটিকে চেনা যায়, মাটিকে স্পর্শ করা যায় এবং মাটির সাথে বন্ধুত্ব করা যায় (আসলে তো মাটির সাথে যে বন্ধুত্ব হয় না, এটি একটি তাত্তি¡ক কথা)। অর্থাৎ মাটির সাথে বন্ধুত্ব করা যায়, তাহলে দেখবেন মাটির কষ্ট কমে আসবে, চাপাচাপির কষ্ট, কবরের কষ্ট।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, সাধনায় সরাসরি গোলামী কাজে আসে না, গোলামী কাজে আসে আপনার অন্তরের কালিমাকে দূর করতে। আপনার অহংকার, আমিত্ব, ঐশ্বর্যকে দূর করতে গোলামী কাজে আসে। এইজন্য এখন সারা বছর গোলামীর সুযোগ থাকে না সম্মেলন আসলে খেদমতের সুযোগ হয়। লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুলেরা যেখানে আসবেন তাদের জন্য টয়লেট বানানো, তাদের জন্য সম্মেলনের প্যান্ডেল করা, বিভিন্ন ঘর নির্মাণ করার বিভিন্ন কাজ থাকে। এই কাজগুলোতে যদি আপনারা হাত বাড়ান এতে আমার উপকার হবে। সম্মেলনের কাজের খরচ কমে আসবে এবং সম্মেলন তড়িৎ গতিতে আগাবে আর আপনার উপকার হবে। এখানে আপনি কাজ করে নিজের অন্তরের কলুষতাকে দূর করতে পারবেন, নিজের অহংকার ঐশ্বর্যকে দূর করতে পারবেন প্লাস পাঞ্জেগানা নামাজ হবে দরবার শরীফে, নামাজ পড়তে পারবেন; দরবার শরীফে নামাজের পরে মোরাকাবায় সামিল হতে পারবেন, চরিত্রবান হওয়ার বিদ্যা শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন। তাই এখন সুযোগ হচ্ছে যে যেখান থেকে পারেন সম্মেলনের আগে চেষ্টা করুন বিভিন্ন এলাকা থেকে, থানা থেকে, মজলিস থেকে ইউনিট করে করে দরবার শরীফের গোলামীতে যেতে পারেন। আমি আহবান করি, যাদের সুযোগ নেই, কোনো অসুবিধা নেই, যাদের সুযোগ আছে আপনারা গিয়ে যদি গোলামী করে আসেন আপনার ভিতরের কলুষতা দূর হবে। যাদের সুযোগ আছে তাদের গোলামীতে যাওয়ার জন্য যাওয়ার জন্যে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, বিশ্ব আশেকে রাসূল (সা.) সম্মেলন আমাদের খুবই নিকটে তাই সম্মেলনের সকল কার্যক্রম যার যেখানে এলাকার দাওয়াত বা অন্যান্য কার্যক্রম আছে আমি অনুরোধ করি আপনারা কাজ শেষ করুন। পোস্টার এলাকায়-এলাকায় লাগাতে পারবেন। সারাবিশ্বে এক জায়গায় আঙ্গুল তুলবে দেখবে, সব আশেকে রাসূল একই রকম। চেহারায় পার্থক্য হবে, সীনা এক হবে। এজন্যই এ করকম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা সম্মেলন ২৩ তারিখে। সবাই প্রস্তুতি নিন, আর সবাই সম্মেলনে আগে আসবেন। সম্মেলন ৭টা থেকে শুরু। আসলে আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে রাত্র থেকে। আমরা সূচি দিচ্ছি ৭টা থেকে, কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হবে রাত্র থেকেই। আমরা রহমতের সময় মাইকে একসাথে রহমতের মোরাকাবা করবো। লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসূল আগের দিন রাতের বেলা যারা চলে আসবে, সবাইকে নিয়ে আমরা রহমতের সময় উঠব, মোরাকাবা করবো। সবাই একসাথে মিলাদ শরীফ পাঠ করব, ফাতেহা শরীফ পড়ব, একবারে তরিকার আমলগুলো শেষ করে ফজরের নামাজের পরে ৫টা থেকে আপনাদের তাবারুকের ব্যবস্থা হবে। ৫টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আপনারা সকালের নাস্তা পাবেন। ৯টার পরে আমরা সকালের নাস্তা বন্ধ করবো। আবার দেড় ঘন্টার একটি বিরতি থাকবে, ফজরের নামাজের পরে। ৫টার পর থেকে ৭.৩০টা পর্যন্ত দেড় ঘন্টার একটি বিরতি থাকবে যে, যেহেতু অনেক রাত্রে আপনারা উঠেছেন, আপনারা এক বা দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতে পারবেন। আর সম্মেলন চত্বরে আসার জন্য সবাইকে বলে দেই শীতের রাত হতে পারে, আপনাদের যা যা করণীয়, শীতের কাপড় অথবা একটি বিছানার চাদর অথবা একটি গায়ে দেওয়ার চাদর যেটি আপনার প্রয়োজন নিয়ে আসবেন। আর সম্মেলনে যারা আসবেন, তাদের প্রতি আমার একটু অনুরোধ আছে। এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে একটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা মূলক পোশাক থাকতে হবে। আপনি যদি কোনো রকম একটি গেঞ্জি গায়ে দিয়ে, একটি শার্ট গায়ে দিয়ে রওনা দেন, এটি কি ভালো লাগবে? এটি আমাদের একটি সুন্দর ও বড়ো অনুষ্ঠান। একটি বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলে কত সুন্দর সেজেগুজে আসেন। এটি তো একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাহলে ধর্মীয় পোশাক পড়ে (সুন্দরভাবে পাঞ্জাবি পরা, টুপি পরা) জায়নামাজ সাথে নিয়ে আসা নামাজ পড়ার জন্য। জায়নামাজ নিয়ে আসলে সুবিধা এই যে, রাতের বেলা আপনি চাইলে এটিতে বিশ্রামও করতে পারবেন। আরও একটি সুবিধা হলো যে, নামাজের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের তো ধুলোবালি থাকবে, আমরা তো হালকা একটি প্লাস্টিকের বিছানার ব্যবস্থা করতে পারি। নিজের একটি জায়নামাজ নিয়ে আসলে একটু বসার সুবিধা হয়, নামাজ পড়ার সুবিধা হয়। নিজেদের জায়নামাজ সাথে বহন করবেন। সবার বাসাতেই তো জায়নামাজ আছে, একটি শপিংব্যাগ, পলি ব্যাগ বা ছালার ব্যাগ যেটিই হোক সাথে করে নিজেদের একটু ছোটখাটো কাপড়-চোপড়, একটি বিছানার চাদর, একটা জায়নামাজ নিয়ে আসলেন তো আপনারই ভালো। সম্মেলনের প্রস্তুতি সবাই নিন। আপনাদের সকলের কাছে সহযোগিতা চাই, যাতে আমরা এবারের বিশ্ব আশেকে রাসূল (সা.) সম্মেলন সাফল্যমন্ডিত করতে পারি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।


পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *