বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য মর্যাদা পাচ্ছে ৭ পণ্য

বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য মর্যাদা পাচ্ছে ৭ পণ্য

শিহাবুল ইসলাম: বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) সনদ পাচ্ছে দেশীয় জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ সাতটি পণ্য। আগের ১১টিসহ দেশে জিআই মর্যাদা পাওয়া মোট পণ্য হচ্ছে ১৮টি। এতে পণ্যগুলো রপ্তানি আয়ে বিশেষ সুবিধা পেতে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
নতুন করে সনদ পেতে যাওয়া বাকি ছয়টি পণ্য হচ্ছে শীতলপাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা ও ল্যাংড়া জাতের আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, শেরপুরের তুলসীমালা ধান এবং বগুড়ার দই।


কেন জিআই সনদ: প্রাকৃতিকভাবে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং কোনো একটি এলাকাভিত্তিক খ্যাতি পাওয়া যেকোনো পণ্য জিআই সনদ পেতে পারে। তবে তার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ যদি কোনো পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে, সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য।


জিআই সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।
কৃষি, হস্তশিল্প ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন-এই তিন ধরনের পণ্যকে জিআই সনদ বা মর্যাদা দেওয়া হয়। এ জন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠনকে তথ্য-উপাত্তসহ ডিপিডিটির কাছে আবেদন করতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রারের অনুমোদন পেলে জার্নালে প্রকাশ করা হয়। পরে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
দুই মাসের মধ্যে কেউ যদি এই পণ্য নিয়ে আপত্তি না তোলে তাহলে সনদ দেওয়া হয়। এর পরই কেবল দেশের মধ্যে একক মর্যাদাসম্পন্ন পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
জানতে চাইলে ডিপিডিটির পরীক্ষক (পেটেন্ট) নীহার রঞ্জন বর্মন বলেন, ‘আশ্বিনা ও ল্যাংড়া জাতের আম জিআই জার্নালে প্রকাশের জন্য এখন বিজি প্রেসে আছে। নাটোরের কাঁচাগোল্লা ও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ। আমরা এখন জার্নাল তৈরি করছি।


তুলসীমালা ধানও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বগুড়ার দই ও শীতলপাটি এই তালিকায় আছে। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে।’
ডিপিডিটি জানিয়েছে, জিআই পণ্য হিসেবে প্রথম ২০১৬ সালে স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এরপর ইলিশ মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, বাংলাদেশের কালিজিরা ধান, ঢাকাই মসলিন, বাগদা চিংড়ি, রংপুরের শতরঞ্জি রাজশাহীর সিল্ক ও ফজলি আম।
নতুন সাত পণ্যের আবেদন করেছে যারা: ডিপিডিটি থেকে জানা গেছে, জিআই মর্যাদা পেতে বগুড়ার দইয়ের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বগুড়া জেলা শাখা। শীতলপাটির জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। তুলসীমালা ধানের জন্য আবেদন করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক। ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। নাটোরের কাঁচাগোল্লার আবেদন করেন সেখানকার জেলা প্রশাসক। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জন্য আবেদন করে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।


যে সুবিধা পাওয়া যাবে: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জিআই সনদ পেলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সুবিধা হয়। সনদ পেলে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়। বিদেশিরা জানবে পণ্যটি বাংলাদেশের ওই নির্দিষ্ট এলাকার।


সনদের বিষয়ে ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো একটি পণ্য, বিশেষ এলাকায় যদি উৎপন্ন হয়, বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও গুণ লাভ করে, তাহলে সেটা জিআই সনদ পায়। যেমন- রাজশাহীর ফজলি আম যেখানে যেমন বড় হবে, গাছে যেমন ধরবে, গন্ধ ও মিষ্টি হবে, তা কিন্তু অন্য এলাকার গাছে হবে না। কারণ ওইখানে মাটি, জলবায়ু ও পানির কারণে আলাদা একটা গুণ ওই আমের মধ্যে আছে।’


এ ক্ষেত্রে ব্যাবসায়িক সুবিধা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভোক্তা ও ব্যবসায়ী দুইজনের সুবিধা আছে। আসল পণ্য খুঁজে পাওয়া যাবে। যখন আমরা অনুমোদন দেব, তখন ভোক্তা বুঝতে পারবে সরকার সার্টিফিকেট দিয়েছে। তার মানে এই পণ্যটা আসল। আবার যিনি বিক্রি করবেন, তিনিও ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন। আলাদা বৈশিষ্ট্য বোঝানোর জন্যই জিআই মর্যাদা দেওয়া হয়।


সরকার ২০১৩ সালে জিআই সনদ আইন পাস করে। আর বিধিমালা প্রকাশ করে ২০১৫ সালে। এই বিধিমালার সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে জিআই সনদ দেয় ডিপিডিটি।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *