প্রচলিত রুইয়ের তুলনায় বৃদ্ধি ৩০ শতাংশ বেশি

প্রচলিত রুইয়ের তুলনায় বৃদ্ধি ৩০ শতাংশ বেশি

নিউজ ডেস্ক: রুই মাছ চাষে বাংলাদেশে যুগান্তকারী ঘটনা সৃষ্টি হতে চলেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘জেনেটিক্যালি ইমপ্রুভড’ রুই মাছের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জেনারেশন থ্রি বা জি-৩ রুই মাছের জাত যশোর থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ২৫টি প্রতিষ্ঠানে জি-৩ ব্রুড বা মা-মাছ সরবরাহ করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত রুইয়ের তুলনায় এ মাছের বৃদ্ধি ৩০ শতাংশ বেশি। স্বাদ, রং ও সৌন্দর্যে অতুলনীয় বলছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, জি-৩ রুই মাছের ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। নদী ও হ্যাচারির পোনার মতোই এ মাছ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে। ব্রিডিং করানোর জন্য আমরা সরকারি খামারে নিয়েছি। এখানকার ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হ্যাচারি মালিক সমিতি জানায়, আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশে ২০১২ সালে রুই মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেয়। এজন্য ২০১২-১৩ সালে হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে রেণুপোনা সংগ্রহ করা হয়। হালদা, পদ্মা ও যমুনা এই তিন নদীর মাছের মধ্য থেকে সর্বোৎকৃষ্ট বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় করে জাত উন্নয়ন (জেনেটিক্যালি ইমপ্রুভড) করা হয়। এভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের পর সর্বশেষ তৃতীয় প্রজন্ম বা জি-৩ জাত উদ্ভাবন করা হয়। ২০২০ ও ২০২১ সালে কৌলিতাত্ত্বিকভা্বে (গ্রিক শব্দ এর অর্থ জন্ম হওয়া) উন্নত ‘তৃতীয় প্রজন্ম বা জি-৩ রুই মাছের রেণু স্বল্পপরিসরে কিছুসংখ্যক হ্যাচারিতে অবমুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসব হ্যাচারি মাছগুলোকে বড় করে তোলে এবং নার্সারি ও খামারিদের কাছে বিক্রির জন্য বীজ উৎপাদন শুরু করে।
হ্যাচারিতে অবমুক্তের পাশাপাশি সংস্থাটি ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যশোর, নাটোর ও রাজশাহী জেলার ১৯টি আধা বাণিজ্যিক খামারে জি-৩ রুইয়ের পরীক্ষামূলক চাষ সম্পন্ন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন অনুন্নত সাধারণ রুই এবং হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করা বহুল সমাদৃত একটি বাণিজ্যিক রুইয়ের সঙ্গে জি-৩ রুইয়ের তুলনামূলক বৃদ্ধির হার যাচাই করা। পরীক্ষা শেষে জি-৩ রুই ১৯টি খামারের প্রতিটিতেই বৃদ্ধির দিক থেকে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং সব খামারের গড় হিসাবে নদী থেকে উৎপন্ন অনুন্নত রুই থেকে ৩৭ ভাগ বেশি বৃদ্ধি পায়।
সমিতির মতে, দেশে ২০২০-২১ সালে শুধু পুকুরে রুই মাছ উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। রুইয়ের পরিবর্তে জি-৩ রুই ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামী তিন বছরে উৎপাদন আরও এক লাখ ৯ হাজার ৮৯ মেট্রিক টন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
গত বছর প্রথম বারের মতো যশোরের ছয়টি হ্যাচারি জি-৩ রুইয়ের ২৭৬ কেজি রেণুপোনা উৎপাদন করে। এ বছরও এসব হ্যাচারিতে প্রায় এক হাজার ২০০ কেজি জি-৩ রুই রেণুপোনা উৎপাদন করে চাষী পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় আট হাজার কেজি জি-৩ রুইয়ের রেণুপোনা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও মা ফাতিমা ফিস হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খান বলেন, বাংলাদেশে মাছের ঘাটতি পূরণে জি-৩ রুই অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে। রেণুপোনা উৎপাদনে যশোরের হ্যাচারিগুলো এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সারা দেশে এই মাছের চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে জি-৩ রুইয়ের উৎপাদনেও নেতৃত্ব দেবে যশোরের হ্যাচারিগুলো।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মদ বলেন, নতুন প্রজাতির রুই মাছ কিন্তু ‘জেনেটিক্যালি মডিফাইড’ না, বারবার পরীক্ষা করে ইমপ্রুভড করা জাত। জেনেটিক্যালি মডিফাইড হলে জিন বাইরে থেকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এটা ন্যাচার থেকে নিয়ে ইমপ্রুভ করা হয়েছে। এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাদের সংস্পর্শে ছিল বলেই বিশ্বাসযোগ্য। জেনেটিক্যালি ইমপ্রুভড বলে এর পিওরিটি নিয়েও কোনো সংশয় নেই।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *