দেশে ঘূর্ণিঝড়ে বছরে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

দেশে ঘূর্ণিঝড়ে বছরে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশে শুধু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বছরে গড় ক্ষতির পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ০.৭ শতাংশ। প্রতি ডলার ১০০ টাকা মূল্যে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় দশ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া শুধু বায়ুদূষণের ফলে বছরে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ক্ষতি ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ৩২ শতাংশ মৃত্যুই হচ্ছে পরিবেশদূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা কারণে।

গত সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের ‘কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে’ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মূলত বিশ্বব্যাংক সরকারের নানা সংস্থা থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গত এক বছর ধরে গবেষণা করে প্রতিবেদনটি দিয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়নবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক জন রুম। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এসডিজির সাবেক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল হামিদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে জন রুম বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ে মানুষের মৃত্যু কমাতে উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকলেও বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে গুরুতর ও ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকির মুখে রয়েছে। অধিকতর অভিযোজন এবং জরুরি কার্যক্রম ছাড়া দেশটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এর জন্য মধ্য মেয়াদে জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশকে ১২.৫ বিলিয়ন ডলার বাড়তি অর্থায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য জলবায়ু সহিষ্ণুতা জোরদার করতে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে। কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং জ্বালানি ও পরিবহন দক্ষতার ওপর ওপর জোর দিয়ে নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে। এর পাশাপাশি বায়ু, মাটি ও পানির গুণগত মান বাড়ানোর জন্য ভবিষ্যতে কার্বন নিঃসরণ আরো কমাতে হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ু কার্যক্রমে বেসরকারি খাতেরও ভূমিকা বাড়াতে হবে। সবুজায়নের নীতি বাস্তবায়নসহ এই খাতের বিদ্যমান দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এ ছাড়া সরকার চাইলে জরুরি জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রম পরিচালনা এবং মনিটরিংয়ের জন্য এনজিওদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজেটের ২০ শতাংশ জলবায়ু সম্পর্কিত বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করলে জিডিপির ১ শতাংশ বাড়তে পারে। এ জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন। সীমিত আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সরকারি অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে, গ্যাসের দাম যৌক্তিক করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পথে জ্বালানি পরিবহনের ওপর অভিন্ন মূল্য সংযোজন এবং পর্যায়ক্রমে কার্বন কর আরোপ করতে হবে, যা যানজট কমাবে এবং পুনর্বণ্টন জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে সহায়ক হবে।

এর আগে অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চ্যান বলেন, ‘৫০ বছর ধরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে আরো উন্নয়ন দরকার। এ জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। সিডরে বাংলাদেশের যতটা ক্ষতি হয়েছে, সিত্রাংয়ে সে ধরনের ক্ষতি হয়নি। তারাই জলবায়ু পরিবর্তনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে গোটা বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে। ’

প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ কৃষি জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। ১৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে জলবায়ু অভিবাসী হতে পারে। এ ছাড়া বড় বন্যা হলে দেশের জিডিপি ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইসার বলেন, ‘অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। গত ৫০ বছরে দেশটি ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ শতাংশ কমিয়েছে। অন্যান্য দেশ যা থেকে শিখতে পারে। ’

বিশ্বব্যাংক বলছে, বায়ুদূষণ ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বায়ুদূষণে মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে জলবায়ু রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান সরকারই জলবায়ুতে বিনিয়োগ করছে। আমরা শতবর্ষী ডেলটা প্ল্যান নিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের আগামী প্রজন্ম তরুণদের দক্ষ শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার ব্যাপক সচেতন রয়েছে। কয়েক দিন আগে সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করা হয়েছে। তারও আগে করোনা মোকাবেলা করা হয়েছে। ’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *