চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভক্ত বিশ্বকে এক হওয়ার আহবান

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভক্ত বিশ্বকে এক হওয়ার আহবান

অনলাইন ডেস্ক: ইউক্রেন থেকে শুরু করে একাধিক সংকটে বিভক্ত বিশ্বে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। দুইবছর স্থগিত থাকার পর বেশ কয়েকটি ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এ সম্মেলন। মঙ্গলবার থেকে এতে যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। শেষ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এই পর্বের নাম দেওয়া হয়েছে-‘বিশ্বনেতাদের সম্মেলন’। অধিবেশনে ভাষণ দিতে ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছেন বিশ্বনেতারা। সমাবেশে প্রথম দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে সভাকক্ষ। মহাসংকটে রয়েছে বিশ্ব-জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের হতাশায় ভরা এ বক্তব্যের মধ্য দিয়েই শুরু হয় মূল অধিবেশন। নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি, আলজাজিরা, সিএনএন, ইউএননিউজ।

১৫৭টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন এই সম্মেলনে। তবে অংশ নিচ্ছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভার্চুয়ালি অংশ নেন। ইউক্রেনই হবে এবারের মূল আলোচ্য বিষয়। সাতদিনের প্রতিদিনই সব নেতার মুখেই থাকবে এ প্রসঙ্গ। প্রথাগতভাবে মঙ্গলবার সকালে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সূচনা বক্তব্যের পরই মঞ্চে ওঠার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোবাইডেনের। তবে সোমবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার কারণে তার ভাষণটি বুধবার নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সূচি মোতাবেক প্রথমদিনের সম্মেলনে অংশ নেন ৩৩ দেশের নেতারা। বহুপাক্ষিকতার হুমকি থেকে শুরু করে সংঘাত, জলবায়ুপরিবর্তন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা-প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভক্ত বিশ্বের ঐক্যের ডাক দিয়ে অধিবেশন শুরু করেন গুতেরেস। উঠে আসে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ও। উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্ব মহাসংকটের মধ্যে রয়েছে। ভূরাজনৈতিক বিভাজন, আন্তর্জাতিক আইন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস করছে। সংকটাপন্ন এ সময়ে বিশ্বনেতাদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কোনো বিভ্রম থাকা উচিত নয়।

আরও বলেন, আমরা এভাবে চলতে পারি না। আমাদের দায়িত্ব আছে, কাজ করতে হবে। তবুও আমরা বৈশ্বিক কর্মহীনতায় আটকে আছি। সম্মিলিত পদক্ষেপের দাবি জানান মহাসচিব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব পুড়ে যাওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি। তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে গুতেরেস বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা, জলবায়ু সংকট এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৈষম্য মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের একত্রিত হওয়া উচিত।

এসময় ইউক্রেন আগ্রাসনের মাধ্যমে জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘনের জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানান গুতেরেস। বলেন, তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। জলবায়ু বিষয়ে গুতেরেস জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের বিরুদ্ধে ‘শত বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি এবং অবাধ মুনাফা’র অভিযোগ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন দুর্বল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য ধনী দেশগুলোর নেতাদের অতিরিক্ত শুল্ক জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, আমি সব উন্নত অর্থনীতির দেশের প্রতি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর অস্বস্তিকর মুনাফার ওপর কর আরোপের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের হলে উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের বলেন, এই তহবিলগুলো দুটি উপায়ে খরচ করা উচিত। ১. জলবায়ু সংকটের কারণে ক্ষতি এবং ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোতে; ২. ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করা মানুষের জন্য।

ইউক্রেন ইস্যুতে এদিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানতার বক্তব্যে পুতিনকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে ‘মর্যাদাপূর্ণ উপায়’ বের করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

অধিশেনের তৃতীয় বক্তা ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। সাতমাস ধরে চলা রণ-দামামা থেকে দুপক্ষকেই মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, ‘আমাদের একটি বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যা উভয় পক্ষকেই একটি মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি দেবে।’ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিকালে বক্তৃতা দেন। বক্তব্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্ব শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। যা আন্তর্জাতিক আইনের জন্য হুমকির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন। একই দিনে দুপুর ১টা ৩০ থেকে ৩টা পর্যন্ত সাধারণপরিষদে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এজেন্ডায় বিভিন্ন দেশের মহিলা সরকার প্রধানদের উচ্চ পর্যায়েরএকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বছরের সভার প্রতিপাদ্য হলো- ‘আজকের আন্তঃসংযুক্ত সংকটে নারী নেতৃত্বের রূপান্তরমূলক সমাধান’।

আজ সংখ্যালঘুদের জাতিগত, ধর্মীয় এবং ভাষাগত অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার ৩০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের সভা আহ্বান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেবেন বিশ্বনেতারা। শুক্রবার বৈশ্বিক কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে মহাসচিবের সভাপতিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হবেন। একই দিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত ‘কোভিড-১৯ শেষ হয়নি ’মর্মে আলোচনা হবে। ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করে জীবন ও জীবিকার উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ঘটাচ্ছে। শনি-রোববার বন্ধের পর সোমবার সকাল ১০টায় সাধারণ পরিষদ পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ নির্মূলের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপনের জন্য একটি উচ্চস্তরের পূর্ণাঙ্গ সভা করবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *