চীনা পণ্যে নির্ভরতা বেড়েছে রাশিয়ার

চীনা পণ্যে নির্ভরতা বেড়েছে রাশিয়ার

বাণিজ্য ডেস্ক: চীন থেকে পণ্যবোঝাই কনটেইনার জাহাজ যাচ্ছে রাশিয়া, আর রাশিয়া থেকে ফিরতে পণ্য পাচ্ছে অনেক কম। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দেশটির বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে চীনের সঙ্গে। বিশেষ করে চীন থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে রাশিয়ার। লজিস্টিকস প্ল্যাটফরম কনটেইনার এক্সচেঞ্জ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, রাশিয়ার অতিরিক্ত এক লাখ ৫০ হাজার শিপিং কনটেইনার আছে, যা আমদানিকারকরা চীনে ফিরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রতিবেদনে সিইও ক্রিস্টিয়ান রোলোফ বলেন, ‘চীন থেকে উল্লেখযোগ্য কার্গো যাচ্ছে রাশিয়া; কিন্তু রাশিয়া থেকে ফিরছে কম, কারণ পর্যাপ্ত পণ্য নেই। ফলে রাশিয়া থেকে চীনে ফেরার কার্গোভাড়া খুবই কম।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রাশিয়ার প্রধান লাইফলাইন হয়ে ওঠে চীন।
জ্বালানির জন্য মস্কোর ওপর চীনের নির্ভরতা বেড়েছে। অন্যদিকে ভোক্তা পণ্য আমদানিতে রাশিয়া বেইজিংয়ের ওপর নির্ভর করছে।
চীনা কাস্টমস প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে চীন ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৩২ শতাংশ। দুই দেশের মোট বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ১৫৫ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে চীন থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ বছরের আট মাসে চীন থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৬৩.২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭১.৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে রাশিয়া থেকে চীনে আমদানি ১৩.৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৩.৩ বিলিয়ন ডলার।
রাশিয়া আশা করছে, এ বছরই চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য রেকর্ড ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। রাশিয়ায় বিক্রীত চীনা পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্য।
ওপেকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে চীনের জ্বালানি আমদানির এক-পঞ্চমাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে রাশিয়ার তেল রপ্তানির ৮০ শতাংশই আমদানি করেছে চীন ও ভারত।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী চীনা পণ্য রপ্তানির বড় ১০ বাজারের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, মালয়েশিয়া ও রাশিয়া। এর মধ্যে গত বছর রাশিয়ায় রপ্তানি ছিল ৭৬.১ বিলিয়ন ডলার বা মোট রপ্তানির ২.২ শতাংশ।
সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ তৈরিতে প্রয়োজনীয় দুর্লভ দুটি খনিজ পদার্থ বিশ্বে গত আগস্ট মাসে রপ্তানি করেনি চীন। এর আগের মাসে বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এসব খনিজ পদার্থ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এ দুটি খনিজ পদার্থ হচ্ছে গ্যালিয়ম ও জার্মেইনিয়াম। চীনের ক্রিটিক্যাল র ম্যাটেরিয়ালস অ্যালায়েন্স জানায়, বিশ্বের প্রয়োজনীয় গ্যালিয়মের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং জার্মেইনিয়ামের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে চীন। কিন্তু গত মাসে তারা এর কিছুই বিশ্ববাজারে বিক্রি করেনি। গত বুধবার প্রকাশিত চীনা কাস্টমসের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
গত জুলাই মাসে দেশটি ৫.১৫ মেট্রিক টন প্রস্তুতকৃত গ্যালিয়ম পণ্য এবং ৮.১ মেট্রিক টন প্রস্তুতকৃত জার্মেইনিয়াম পণ্য রপ্তানি করে। গত মাসে রপ্তানিতে এই ঘাটতি কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হে ইয়াডংগ গত বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এ দুই পদার্থ রপ্তানির ব্যাপারে বিভিন্ন কম্পানি বাণিজ্য বিভাগে আবেদন করেছে, এর মধ্যে কিছু আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।’ এর বাইরে বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ দুই পণ্য রপ্তানি বন্ধের অর্থ দাঁড়ায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
বিশ্বের দুর্লভ খনিজ পদার্থের ৯৫ শতাংশের বেশি উৎপাদন করে চীন। এসব পদার্থের মোট ১৭টি উপাদান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের এসব পণ্য আমদানির ৮০ শতাংশই চীনের ওপর নির্ভর করে। অনেক সামরিক অস্ত্র তৈরিতে এসব উপাদান ব্যবহার হয়। যেমন-ল্যাজার, রাডার, নাইট ভিশন সিস্টেম, মিসাইল গাইডেন্স, জেট ইঞ্জিন ইত্যাদি। এ ছাড়া এগুলো দিয়ে স্মার্টফোন, টেলিভিশন, ক্যামেরা এবং লাইটবাল্ব থেকে শুরু করে মানুষের প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি পণ্যই তৈরি হয়।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *