চলতি বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের অনুপযুক্ত

চলতি বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের অনুপযুক্ত

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বছর ঘুরতেই আবারও হাজির নোবেল পুরস্কারের মৌসুম। প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে আসে। কিন্তু এর কার্যক্রম বছরের শুরু থেকেই। ফেব্রæয়ারি থেকে টানা ৮ মাস ধরে চলে মনোনীতদের কাজের যাচাই-বাছাই। কিন্তু এবারের ‘শান্তি পুরস্কার’ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। ইউক্রেন যুদ্ধের আগুনে পুড়ে ছারখার ‘চলতি বিশ্ব’ শান্তি পুরস্কারের অনুপযুক্ত। এমনটিই ধারণা করেছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন। বলেছেন, কমিটির পক্ষে এ বছর শান্তি পুরস্কার না দেওয়া অনেক দিক থেকেই উপযুক্ত হবে। যেমনটি ঘটেছিল অর্ধশতাব্দী আগে ১৯৭২ সালে। ভিয়েতনামের ভয়াবহ যুদ্ধকালীন সময়ে।’ ৬ অক্টোবর এ বছরের শান্তিতে নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করবে কমিটি।
একদিকে যুদ্ধ-সংঘাত। আর একদিকে উত্তপ্ত হয়ে জ্বলছে পৃথিবী। কোনো দিকে আবার মৃত্যুর মিছিল। কোথাও কোথাও তিক্ত করা হচ্ছে নারীদের জীবন। এমন অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি পুরস্কার কার হাতে যাচ্ছে সেটাই দেখার পালা। কাকে দেওয়া যায় শান্তি পুরস্কার-তা নিয়েই ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। মনোনয়নের তালিকা গোপন থাকলেও ৩৫১ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এতে রয়েছেন বলে জানা যায়। কিছু নোবেল পর্যবেক্ষক ইরানি নারীদের দিকে ইঙ্গিত করছেন। দেশটির অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ফ্রিডম ইন ইরানের অ্যাক্টিভিস্ট মাসিহ আলিনেজাদ এবং নার্গেস মোহাম্মদিকে এই ধরনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসাবে দেখা হচ্ছে। যারা দেশটিতে পোশাক কোড লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে নিজেদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য সম্ভাবনার মধ্যে আছে ইউক্রেনের যুদ্ধাপরাধের নথিভুক্ত সংস্থাগুলো অথবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তালিকাভুক্ত করা হয়েছে জলবায়ু কর্মীদেরও নাম। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড্যান স্মিথ, সুইডিশ অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গ এবং ব্রাজিলের আদিবাসী প্রধান রাওনি মেটুকটায়ারের কথা তুলে ধরেন। থানবার্গ যিনি বন উজাড়ের বিরুদ্ধে এবং মেটুকটায়ার যিনি আদিবাসীদের অধিকারের জন্য প্রচারণা চালান।
নোবেল পুরস্কারের প্রত্যবর্তক আলফ্রেড নোবেল পুরস্কারগুলো প্রদানের জন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করেন। পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে নোবেল পুরস্কারের জন্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস, শরীরবিদ্যা বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারের জন্য ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুইডিশ একাডেমি এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট এবং অর্থনৈতিক বিজ্ঞানের জন্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসকে মনোনীত করেন। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলো নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রার্থীদের মনোনীত করতে একাডেমির হাজার হাজার সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, পূর্ববর্তী নোবেল বিজয়ী, আইনপ্রণেতা এবং অন্যান্যদের কাছে চিঠি পাঠায়। তারপর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যতটা সম্ভব দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মনোনীতদের নির্বাচিত করা হয়। বৈঠকে সব মনোনয়নপত্র আলোচনার পর একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর প্রত্যেক প্রার্থীকে আলাদা আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা হয়। চূড়ান্ত বিজয়ীদের বাছাই করার জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকা এবং ভোট করা হয়।
আলফ্রেড নোবেল ছিলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী ও শিল্পপতি। মারা যান ১৮৯৬ সালে। পুরস্কারের নামকরণ করা হয় তারই নামে। আলফ্রেড নোবেল তার মৃত্যুর এক বছর আগে খসড়া করা উইলে লিখেছিলেন, মানবজাতির জন্য যারা সবচেয়ে বড় সুবিধা প্রদান করবে তাদের নোবেল বিজয়ী করা হবে। তার উইলে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য এবং শান্তিতে বুদ্ধিজীবী এবং অগ্রগামী কাজকে পুরস্কৃত এবং স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানের ওপর আর একটি পুরস্কার যোগ করা হয় ১৯৬৮ সালে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর ৬টি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রত্যেকটি শাখা থেকে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যুগান্তকারী অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা একটি নোবেল পুরস্কার ডিপ্লোমা, একটি নোবেল পুরস্কার পদক এবং একটি নথি পান, যাতে নোবেল পুরস্কারের পরিমাণ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। এই বছর এ অর্থের পরিমাণ ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (৯ লাখ ৮৯ হাজার ডলার)।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *